ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তির খসড়া মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৬ এপ্রিল ২০১৫

বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তির খসড়া মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন

এম শাহজাহান ॥ বাংলাদেশ-ভারতের বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তি নবায়নের মাধ্যমে চার দেশীয় ট্রানজিট চুক্তির পথ উন্মুক্ত হচ্ছে। এই চুক্তিটি নবায়নের পর ভারতের ভূখ- ব্যবহার করে নেপাল-ভুটানে সড়ক ও রেলপথে পণ্য বাণিজ্য করতে পারবে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে ভারত নৌপথের পাশাপাশি সড়ক ও রেলপথ ব্যবহার করে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পণ্য পরিবহনের সুযোগ পাবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় ঢাকায় এ চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে। বাণিজ্য চুক্তির খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছে। আজ সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই চুক্তিটি অনুমোদন দেয়া হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তি নবায়নের সময় নতুন ধারা যুক্ত করে এটি কার্যকর করা হবে। এছাড়া বিদ্যমান নৌপ্রটোকল অনুযায়ী, এক দেশের ভেতর দিয়ে পণ্য পরিবহনের ওপর কোন ধরনের চার্জ বা ফি নেই। তবে এবার সংশোধিত চুক্তিতে সেবার বিপরীতে চার্জ বা ফি নির্ধারণের প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে ভারত যেহেতু বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বেশি পণ্য পরিবহন করবে, তাই চার্জ বা ফি আরোপ করা হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে বলে মনে করছে সরকার। এছাড়া বাণিজ্য চুক্তি পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন করা হতে পারে। মেয়াদ শেষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাতে চুক্তিটি নবায়ন হতে পারে সে বিষয়টিও ভেবে দেখা হচ্ছে। প্রতিবেশী এই দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে হলে চুক্তি নবায়নের আর বিকল্প কিছু নেই। তবে এবার নৌপরিবহন চুক্তিটি বাণিজ্য চুক্তি থেকে আলাদা করে পৃথক চুক্তি করার বিষয়েও ভেবে দেখছে সরকার। সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ওই সময় তিনি জানান, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে স্থলবাণিজ্যে ভারত তার ভূখ- ব্যবহার করতে দিতে বাংলাদেশকে সম্মতি জানিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতেই গত ৩১ মার্চ মেয়াদ শেষ হওয়া বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন করার আগে তাতে নতুন করে বেশ কিছু ধারা-উপধারা যোগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ চুক্তিস্বাক্ষর হলে বাংলাদেশ থেকে পণ্যবাহী ট্রাক ভারতের ওপর দিয়ে নেপাল ও ভুটানে যেতে পারবে। একইভাবে ভারতের পণ্যবাহী ট্রাকও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে দেশটির এক অংশ থেকে অন্য অংশে যাওয়ার সুযোগ পাবে। জানা গেছে, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে ভারতে রফতানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের আওতায় ইতোমধ্যে ভারতের বাজারে পণ্য রফতানিতে শুল্ক ও কোটা ফ্রি বাজার সুবিধা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু বিভিন্ন শুল্ক-অশুল্কজনিত কারণ, অবকাঠামো সমস্যা এবং ভিসা জটিলতা কারণে ভারতে রফতানি তেমন বাড়েনি। ফলে প্রতিবছর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে চলছে। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে দু’দেশের বাণিজ্য চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি এবং নৌ-পরিবহন চুক্তিটিকে বাণিজ্য চুক্তি থেকে পৃথক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় এ বাণিজ্য চুক্তিটি সই হয় ১৯৮০ সালে। এরপর যা প্রতি তিন বছর পরপর নবায়ন হয়ে আসছে। গত ২০০৯ সালে সর্বশেষ নবায়নপত্রে সই করেন বাংলাদেশের তখনকার বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান ও ভারতের ওই সময়ের পররাষ্টমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি। এরপর ২০১২ সালের মার্চে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে কোন ধরনের আনুষ্ঠানিকতায় না গিয়ে লেটার অব এক্সচেঞ্জের (চিঠি চালাচালি) মাধ্যমে দুই পক্ষ চুক্তিটি নবায়ন করে। গত ৩১ মার্চ শেষ হয়েছে এই চুক্তির মেয়াদ। সূত্র মতে, দ্বিপক্ষীয় এ বাণিজ্যচুক্তির আওতায় বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের একটি জলপথে ট্রানজিটের প্রটোকল রয়েছে (বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট এ্যান্ড ট্রেড)। এ চুক্তিটিও ২০১২ সালে নবায়ন হয়, যার মেয়াদ ৩১ মার্চ শেষ হয়েছে। তবে এবার চুক্তি নবায়নকে সামনে রেখে ১০ বছর মেয়াদী নৌ-প্রটোকল চুক্তি করতে চায় ভারত। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারত তাদের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। জানা গেছে, ২০১২ সালের আগে ভারত নৌ-প্রটোকলের আওতায় নৌপথ রক্ষণাবেক্ষণে বাংলাদেশকে বছরে প্রায় ৫ কোটি টাকা দিত। তবে সর্বশেষ নবায়নের সময়ে ৫ কোটির স্থলে ১০ কোটি টাকা দিতে রাজি হয় ভারত। এবার এ প্রটোকলের আওতায় বন্দর ব্যবহারে ফি নির্ধারণ করবে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এছাড়া রক্ষণাবেক্ষণ, অভিন্ন ফ্রেইট চার্জ, নৌপথের পাশাপাশি নাবিকদের রেল, সড়ক ও আকাশপথে চলাচল, তরঙ্গ ব্যবহার, নৌযানে নিজ দেশের পতাকা ব্যবহার করাসহ অন্যান্য বিষয় এ নৌ-প্রটোকলে রয়েছে। এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের নৌপথ দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল বা সেভেন সিস্টার্সে পণ্য পরিবহনের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া নৌপথে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের নৌযানের সক্ষমতাও অনেক বেশি। এ কারণে বরাবরই ভারত পণ্য পরিবহনে নৌ-পরিবহন চুত্তিকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে।
×