ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অভিজিত ও বাবুর খুনীরা গোয়েন্দাদের চেয়েও সাইবার এক্সপার্ট!

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৬ এপ্রিল ২০১৫

অভিজিত ও বাবুর খুনীরা গোয়েন্দাদের চেয়েও সাইবার এক্সপার্ট!

শংকর কুমার দে ॥ মুক্তচিন্তার ব্লগার ও প্রগতিশীল লেখক অভিজিত রায় ও ওয়াশিকুর রহমান বাবুর খুনীদের সঙ্গে সাইবার যুদ্ধে পাল্লা দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছে না পুলিশ ও গোয়েন্দারা। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের চেয়ে খুনীরা বেশি সাইবার এক্সপার্ট। ফেসবুকে এবং ব্লকে ছদ্মনাম ও ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে তারা। ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে খুন করার জন্য চেষ্টা করা হয়েছে দুই দফায়। প্রথম দফায় খুনীদের একজন সাইফুল পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায়। তাই, সে যাত্রায় বেঁচে যায় ওয়াশিকুর। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় সফল হয় খুনীরা। খুন হন ওয়াশিকুর। খুনের সময়ে হাতেনাতে ধরা পড়া দুই মাদ্রাসা ছাত্র জিকরুল্লাহ ও আরিফ। দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে খুনের নির্দেশদাতা ‘বড় ভাইয়ের’ নাম, ঠিকানার খোঁজ মিললেও তাকে পাচ্ছে না পুলিশ। আর অভিজিত রায় হত্যাকা-ের পর মাসাধিক কাল পার হয়ে গেলেও ধরা পড়েনি খুনীরা। অভিজিত ও ওয়াশিকুর-এই দুই খুনের তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবি সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্র জানায়, থমকে গেছে ব্লগার ও লেখক অভিজিত রায় হত্যাকা-ের তদন্ত। ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যাকা-ের তদন্তে অগ্রগতি নেই। খুনীরা সাইবার এক্সপার্ট। পাল্লা দিয়ে খুনীদের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছে না পুলিশ। তাই, ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে খুনীরা। খুনীরা সবাই সাইবার এক্সপার্ট হওয়ায় তাদের তথ্য অন্য কেউ পাচ্ছেন না। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তাদের সম্পর্কে জানতে পারছে না। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের দক্ষিণ বেগুনবাড়িতে ৩০ মার্চ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বাসা থেকে বের হওয়ার পর অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে (২৬) রাস্তায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে আবু তাহের, জিকরুল্লাহ ও আরিফুল ইসলাম নামে তিন তরুণ। পুলিশ তাৎক্ষণিক খুনীদের ধাওয়া দিয়ে ঘটনাস্থলের কিছুদূর থেকে জিকরুল্লাহ ও আরিফুলকে আটক করে। তবে আবু তাহের পালিয়ে যায়। পালিয়ে যায় খুনী চক্রের নির্দেশদাতা মাসুমও। ওয়াশিকুর হত্যাকা-ের একমাস আগে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মোড়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি দুর্বৃত্তরা পেছন থেকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে বিজ্ঞান লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ড. অভিজিত রায়কে। এ সময় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতর আহত হন। হত্যা তদন্তে ডিবিকে সহায়তা করতে এফবিআইয়ের (ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) একটি দলও বাংলাদেশে আসে। কিন্তু এখন পর্যন্ত খুনীদের শনাক্ত করা যায়নি। সূত্র জানায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যার জন্য প্রথম দফায় চেষ্টা করেন ২৪ মার্চ। পাঁচজনে মিলে যাত্রাবাড়ীর বাসা থেকে তেজগাঁওয়ের উদ্দেশে রওনা দেয় তারা। কিন্তু যাত্রাবাড়ীর পুলিশ চেকপোস্টে চাপাতি ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ ধরা পড়ে সাইফুল নামে এক সহযোগী। তারপর তারা ফিরে যায় তাদের কাজলার বাসায়। ৩০ মার্চে দলনেতা মাসুম (বড় ভাই), আবু তাহের, জিকরুল্লাহ ও আরিফ-এই চারজনে যায় তেজগাঁও বেগুনবাড়িতে। খুন করে ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে। এর মধ্যে সরাসরি খুনে অংশ নেয়া জিকরুল্লাহ ও আরিফ ধরা পড়ে। পালিয়ে যায় আবু তাহের। দলনেতা বড় ভাই মাসুমও পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ধরা পড়া দু’জন জিকরুল্লাহ ও আরিফকে রিমান্ডে এনে তাদের নাম ঠিকানা জানা সত্ত্বেও ধরা সম্ভব হচ্ছে না। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মিডিয়া সেলের প্রধান ডিসি মাসুদুর রহমান জানান, অভিজিত, ওয়াশিকুরসহ এর আগে যারা প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর হাতে খুন হয়েছেন তারা সবাই ‘সাইবার এক্সপার্ট’। গোপনীয়তার জন্য তারা টেলিফোন, মোবাইল বা পরিচিত কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে না। এ জন্য অবশ্য তারা নিজেদের আসল নামও ব্যবহার করে না। ধারণা করা হচ্ছে, খুনীরা জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সিøপার গ্রুপের সদস্য। যারা খুন হচ্ছেন তারা সবাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুক্তচিন্তা ও ‘প্রগতিশীল লেখালেখি করতেন। খুনীদের সঙ্গে খুন হওয়া ব্লগার ও লেখকদের ফেসবুকে, ব্লগে ধর্মীয় বিষয়ে আদর্শ ও উদ্দেশ্য নিয়ে মতভেদের কারণে খুন করা হচ্ছে। খুনীরা তাদের ব্লগে, ফেসবুকে ছদ্মনাম, ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে কর্মকা- চালানোয় তাদের শনাক্ত, গ্রেফতার, খুন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয় নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তদন্তসংস্থা, গোয়েন্দা পুলিশও।
×