ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন ও নাশকতা পাশাপাশি যায় না

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ৬ এপ্রিল ২০১৫

নির্বাচন ও নাশকতা পাশাপাশি যায় না

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের অর্থ এই নয় যে, নাশকতা ও সহিংস কর্মসূচীর পথ ছেড়ে স্বাভাবিক রাজনীতির পথে ফিরে এসেছে। বরং তা বহাল রেখেই নির্বাচনকে নেতিবাচক কর্মসূচীর অংশ হিসেবেই নিয়েছে। নির্বাচন অনুকূল বা প্রতিকূল যাই হোক, জ্বালাও পোড়াওর পথ খোলা রেখেই মাঠে নেমেছে। জঙ্গীবাদী ফর্মুলার যে ধারায় দলটি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেশ ও জনগণবিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে, তা থেকে আপাত বেরিয়ে আসার লক্ষণ দেখা গেলেও এটা মনে করার কারণ নেই যে, গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথ ধরে হাঁটবে। বরং সশস্ত্র জঙ্গীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে বিএনপি যে অবস্থান ধরে রেখেছে, তা থেকে বিচ্যুত হওয়ার কোন কার্যকারণ নেই। নির্বাচনে হেরে গেলে সরকারের বিরুদ্ধে শুধু নয়, দেশের জনগণের বিরুদ্ধে একতরফা সর্বাত্মক যুদ্ধ পুনরায় জোরসে চালু করবে। পেট্রোলবোমা, কিরিচের পাশে আরও মারাত্মক অস্ত্র নিয়ে চোরাগোপ্তা হামলার মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। আর জয়লাভ করলে তো আরও পোয়াবারো। সরকারকে গদি থেকে তাদের ভাষায় টেনে হিঁচড়ে নামাতে সহিংসতার পথকেই বেছে নেবে এই যুক্তিতে যে, সরকারের কোন জনসমর্থন নেই। সুতরাং পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য নৃশংসতার ধারাকে আরও গতিশীল করবে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলেই যে বিএনপি হরতাল-অবরোধ নামক নাশকতামূলক কর্মসূচীর অবসান ঘটাবে এমন আভাস ইঙ্গিত তারা দেয়নি। আর হেরে গেলে আরও ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালাবে। তারা বলছেও, তাদের কথিত আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের ঘটনাটিকে তাদের শুভবুদ্ধির উদয় বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে এখনও ২০ দলীয় জোট হরতাল-অবরোধ থেকে সরে না যাওয়ার সমালোচনা করেন তারা। এমনটাই তারা মনে করেন যে, বিএনপির গণবিরোধী রাজনীতির শিকার হয়ে বহু মানুষ পেট্রোলবোমার আগুনে দগ্ধ হয়ে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারানোর ঘটনা দেশবাসী কখনও ভুলে যাবে না। বিএনপি আন্দোলনের নামে এখনও মানুষ মারার যে রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, তারা জনকল্যাণের কোন্ কথা বলে ভোট চাইবে? সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০ দলীয় জোটের নেতা কর্মী-সমর্থকরা মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছে। তারা সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারায় এগুবে বলে যতই ভাবা হোক বাস্তবে তা হবে কি না সন্দেহ রয়েছে। মাঠে নামার সুযোগ পেয়েও মানুষ মারার রাজনীতি করবে না, তার নিশ্চয়তা পাওয়া যায় না। বিএনপির নেতাদের কথা বলার ধরনে পরিবর্তন দেখা গেলেও তারা তাদের চলমান কথিত ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলন’ স্তিমিত করে ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার কৌশল হিসেবে সরকার এই নির্বাচনের আয়োজন করেছে বলে মনে করছে। আবার বলছে আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারলে ব্যালটের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে চরম অনাস্থা প্রকাশ করবে। তখন তারা নাশকতাকে বাড়িয়ে দেবে সরকারকে গদিচ্যুত করতে। বিএনপির টানা ৯০ দিনের অবরোধ ও তার সহযোগী হরতাল নামক নাশকতামূলক জ্বালাও পোড়াও কর্মসূচীতে সারাদেশে ব্যাপক জানমালের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সে সব উহ্য রেখে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো বিএনপির জন্য কতটা সহজ হবে তা দেখার বিষয়। বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা পেট্রোল বোমা দিয়ে বিভিন্নভাবে নাশকতা চালিয়ে প্রায় দেড় শ’ মানুষকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে শুধু পেট্রোলবোমার আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছে প্রায় ৭৪ জন। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন আরও অনেক দগ্ধজন। সহস্রাধিক পুড়িয়েছে যানবাহন, ভাংচুর করেছে আরও কয়েক হাজার। স্কুল, কলেজ, সরকারী দফতর ও স্থাপনায়ও বোমা হামলা এবং অগ্নিসংযোগ করেছে। এমনকি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সময় হরতাল ও অবরোধ প্রত্যাহার না করে পরীক্ষায় বিঘœ ঘটিয়ে যাচ্ছে। এই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছে বিএনপি তাদের ঘৃণিত কর্মকা-ের জন্য ক্ষমা চাইবে তা নয়। টানা নব্বই দিন ধরে ‘অফিস কাম রেসিডেন্সে’ অবস্থানরত বেগম জিয়া জনসমক্ষে আসেননি বা তাঁকে আসতে দেয়নি দলের জঙ্গীবাদের সমর্থকরা। তিনি অবরোধবাসিনী হয়ে নানা নির্দেশ প্রদান করছেন সহিংসতা ও নাশকতা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। হরতাল-অবরোধের নামে নাশকতামূলক কর্মসূচী দিয়ে ও নেতিবাচক আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি যখন দিশেহারা, পিছু হটার পথও খুঁজে না পেয়ে প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার উপক্রম, তখন সিটি নির্বাচন ‘শাপে বর’ হয়ে দেখা দিয়েছে। সহিংস কর্মসূচী হতে সরে আসার পথ অবশেষে সামনে পেয়ে গেছে অনেকটা মুফতে। তবে বোমা ফাটিয়ে মানুষ হত্যা, যানবাহন পোড়ানো, সম্পদহানির মতো ঘৃণ্য কাজ থেকে পুরোপুরি সরে এসেছে, তা বলা যাবে না। কারণ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে দেশবাসীর বিরুদ্ধে একতরফা যুদ্ধ চালিয়ে বহু মানুষকে হতাহত করেছে। বার্ন ইউনিটে দগ্ধ মানুষ ও স্বজনদের আহাজারি এখনও আকাশ-বাতাস কম্পিত করে। যদিও বিএনপি তার স্বভাবসুলভ ‘মিথ্যাচারের ভঙ্গি ও ভাষায়’ অস্বীকার করে আসছে, কোন প্রকার নাশকতায় তারা জড়িত নয়। সরকারই সব করাচ্ছে। তারা ভাবে, বুঝি দেশবাসী কিছুই জানে না, বোঝে না। দেশজুড়ে বিএনপি-জামায়াতের সশস্ত্র ক্যাডার ও তাদের ছত্রছায়ায় লালিত জঙ্গীদের নাশকতা নিঃশেষ হয়নি। এখনও দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের সহিংস তৎপরতা চলছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকা ও চট্টগ্রামকে হরতালের আওতামুক্ত ঘোষণা করলেও অবরোধ প্রত্যাহার করেনি। এবং দেশের বাকি সর্বত্র হরতাল ও অবরোধ বহাল রেখেছে। তাদের হিসেব এই যে, সন্ত্রাসী কর্মসূচী থেকে সরে এলে নিজস্ব দুর্বলতা প্রকাশ পাবে। কথিত আন্দোলন ব্যর্থ বলে সবার কাছে প্রতীয়মান হবে। তাতে দলীয় নেতা কর্মীরা যেমন হতাশ হবে, তেমনি দলের অস্তিত্বজুড়ে টান দেবে ব্যর্থতার গ্লানিতে। এতে সরকারকে টলানো যাবে না কোনভাবেই। বরং নাশকতা অব্যাহত থাকলে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ সহজ হবে। চাপে রেখে সরকারের কাছ হতে অনেক দাবি আদায় করে নেয়া যাবে। যদিও সরকার পতন বা উৎখাতের জন্য তাদের একরোখা মনোভাব তারা পরিহার করেনি, করবেও না। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে চায় নাশকতার দায়ে আটক দলের নেতাকর্মীসহ জঙ্গীদের মুক্তি। সহিংসতার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় কাউকে হয়রানি না করা। নির্বাচনী প্রচারণাকালে কাউকে গ্রেফতার না নকরার জন্য শর্ত দিয়েছে। কিন্তু বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে যারা, তাদের গ্রেফতারের বিরোধী বিএনপি। অথচ তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য সামান্য অনুতপ্ত নয়। এমনকি ক্ষমাও চায়নি। বরং আস্ফালন করছে যে, সরকারী দলই নাশকতা করছে। এসব মিথ্যাচারে জনগণ বিভ্রান্ত হয়নি। হওয়ার কথাও নয়। জনগণ নিজেরাই ভুক্তভোগী। তারা দেখেছে, ঘরবাড়ি ছেড়ে তিন মাস ধরে বেগম জিয়া গুলশানের অফিসকে বাড়ি বানিয়ে সরকারকে গদি হতে ফেলে দেয়ার জন্য নাশকতা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে গেছেন। তাঁর এই কর্মসূচীর প্রতি দলের সিনিয়র নেতা ও মাঠ পর্যায়ের বেশিরভাগ কর্মী সমর্থন জানিয়েছে তা নয়। কোথাও কোন হরতাল বা অবরোধ পালনে নেতাকর্মীরা রাজনীতির ধারানুযায়ী মাঠে নামেনি। গায়েবি ঘোষণা দিয়ে মিডিয়ানির্ভর ‘আন্দোলন’ করে বেগম জিয়া ক্লান্ত প্রায়, তাই আপাত রণে ভঙ্গ দিয়েছেন। নাশকতা ও সহিংসতার টানা কর্মসূচী হতে সরে এসে বিএনপি জোট নির্বাচন করছেÑ এমনটা হওয়াই ছিল সুস্থ রাজনীতির জন্য অপরিহার্য। গণরোষেও যেখানে বিএনপি সহিংসতা বন্ধের দিকে যায়নি, সেখানে নির্বাচনে ভোট পাওয়ার জন্য তিন সিটিকে বোমামুক্ত রেখেছেÑ এটা একটা উল্লেখযোগ্য দিক বৈকি। এভাবে সরতে সরতে একদিন পুরো সরে আসবে হয়ত। তবে যে আন্তর্জাতিক জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের কবলে পড়েছে দলটি, সিটি নির্বাচনে অংশ নিলেও তা হতে কলুষমুক্ত হতে পারবে কিনা, সে নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাই দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার আড়ালে জঙ্গীরা মাঠে নামছে। এই জঙ্গীদের যাতে আটক করা না হয়, তার জন্য বিএনপি বেশ জোর দিয়ে গলা ফাটাচ্ছে। নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ের আশঙ্কা দেখা দিলে নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি দেশব্যাপী নাশকতার পরিমাণ বাড়াতে সচেষ্ট হবে। ভোট না পেলে সাধারণ মানুষ হত্যার ব্রত অব্যাহত রাখবে নতুন মাত্রায়। সে লক্ষ্যেই হরতাল-অবরোধ নামক নিষ্ঠুরতার প্রকাশ ঘটানো কর্মসূচী পরিহার না করে তা অব্যাহত রেখেছে হাতের পাঁচ হিসেবেই হয়ত বা। আর বিজয়ী হলেও সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য সহিংসতার ধারাকে আরও পুষ্ট করবেই বৈশিষ্ট্যের ধারাবাহিকতায়। তখন যুক্তি দেখানও হবে যে, সরকারের জনপ্রিয়তা ও জনসমর্থন নেই। সুতরাং পদত্যাগ করে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে হবে এবং তা খালেদা জিয়ার শর্তানুযায়ী হতে হবে। সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) সৃষ্টির যে দাবি করছে বিএনপি, তা বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় বাধা বেগম জিয়া। কারণ তাঁর দল নির্বাচনে অংশ নিয়েও হরতাল-অবরোধ নামক জঙ্গীপনা বহাল রেখে জনগণকে সন্ত্রস্ত রেখেছে। যে কোন সময় যে কারও প্রাণ কেড়ে নিতে পারে তাঁর বাহিনী। সমতল মাঠ সব প্রার্থীর জন্য বলতে বোঝায় একজন ভোটার নিজের ইচ্ছেমতো, নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। একজন প্রার্থী যাতে নির্বিঘেœ ভোটারদের কাছে যেতে পারেন, সভা-সমাবেশ করতে পারেন, সেটাই হবে নির্বাচনের সমতল মাঠ। বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও কমিশনার প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই বিভিন্ন মামলার আসামি। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কারাগারে, কেউ পলাতক, কেউ আত্মগোপনে। বোমা হামলায় এদের অনেকে সংশ্লিষ্ট ছিল। হাতে-নাতে ধরা পড়াদের মধ্যে কেউ প্রার্থী না হলেও নির্বাচনী প্রচারণায় বোমাবাজরা যাতে নির্বিঘেœ প্রচারণায় অংশ নিতে পারে বিএনপি তাই দাবিও করছে। বর্তমানে রাজনৈতিক নেতৃত্বহীন বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে দৃশ্যপটে আছেন একদা জাসদের পৃষ্ঠপোষক শিক্ষাবিদ ড. এমাজউদ্দিন আহমদ। তিনিই শত নাগরিক কমিটি নামের একটি ঝাঁপিহীন দোকান খুলে বেশকিছু রাজনীতিককে নানান কসরতে তুলে ধরছেন। সত্যকে মিথ্যায় পরিণত করতে বেগম জিয়ার মতোই পারদর্শী হয়ে উঠছেন। বেগম জিয়ার ভাষ্য তুলে ধরে বলেছেন তিনি, সিটি নির্বাচনকে বিএনপি আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নিয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে তিন সিটি কর্পোরেশন নিজের দখলে আনতে হবে। বিজয় নিশ্চিত করা না গেলে সামনে আরও ভুগতে হবে। জঙ্গীদের নেত্রী বেগম জিয়া এক ‘চরম দুঃসময়ে’ও সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে সায় দিয়েছেন বলে তাঁর মুখপাত্র এমাজউদ্দিন মন্তব্য করেছেন। সঠিক মতের প্রতিফলন বটে। দুঃসময় বেগম জিয়ার চরম পর্যায়ে অবশ্যই। রাজনীতির মূলধারার পথ হারিয়ে জঙ্গী, সন্ত্রাসের পথ ধরে তিনি জোর কদমে পা ফেলে যাচ্ছেন। বিনিময়ে কেবল লাশের পর লাশের বহর মিলছে কেবলি। পেট্রোলবোমা মেরে ১৩৭ জন মানুষ হত্যাসহ যানবাহন পুড়িয়ে, সম্পদের হানি ঘটিয়ে হরতাল-অবরোধ নামক বায়বীয় কর্মসূচী দিয়ে দেশকে বিপর্যস্ত করার মাধ্যমে নিজেকে এবং যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার যে কৌশল চালিয়ে যাচ্ছেন, তা লক্ষ্যপূরণে সহায়ক হয়নি। বরং জঙ্গীদের নেত্রী হিসেবে, সাধারণ মানুষ, অন্তঃসত্ত্বা নারী-শিশুসহ বহুজনের হত্যাকারী হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাই টানা তিনমাস ধরে তিনি ঘরবাড়ি ছেড়ে অফিসকে বাড়ি বানিয়ে বসবাস করতে থাকেন। আর অভিযোগ করতে থাকেন, সরকার তাঁকে গৃহবন্দী করে রেখেছে অথচ সেখানে অবস্থান করে পিকনিক পিকনিক ভাব নিয়ে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদীদের উস্কে দিয়েছেন বোমাবাজি ও নাশকতা চালিয়ে সরকারকে উৎখাতের পরিস্থিতি তৈরি করতে। তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনীর অনেকে ধরা পড়েছে অস্ত্রশস্ত্রসহ। আবিষ্কার হয়েছে অস্ত্র তৈরি ও মজুদের ঘাঁটি। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোরবিরোধী বেগম জিয়া ও তাঁর বুদ্ধিজীবীদের বহর। তাঁরা তাঁদের আন্দোলনকারী হিসেবে অভিহিত করে মুক্তির দাবিও তুলছেন। লন্ডনে পলাতক দুর্নীতির মামলার আসামি খালেদাপুত্র নির্বাচনে অংশ নেয়ার নির্দেশ দিলেও বর্জনের পথ খোলা রাখতেও বলেছে। সেখান হতে প্রার্থী নির্ধারণ করছে। পুত্রটি দল চালাতে গিয়ে বেগম জিয়ার অবস্থান শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। জামায়াতনির্ভর হয়ে তিনি দলকে যেখানে নিয়ে গিয়েছেন, দলের নেতাকর্মীরা আর তাঁর ঘোষিত কর্মসূচী পালনে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। সে কারণেই তিনি জঙ্গী ও সন্ত্রাসের পথ ধরে অতীতের মতোই হেঁটে চলছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির নয়াপল্টনের কার্যালয়টি খুলে দেয়া হয়েছে। এই অফিসটিকে বাসাবাড়ি বানিয়ে দলের যুগ্মসম্পাদক রিজভী আহমেদ বাস পোড়ানো, যাত্রী হত্যা ও সম্পদহানির নির্দেশ দিয়ে আসছিল। গত তিন জানুয়ারি হতে অফিসটি তালাবদ্ধ ছিল। কর্মীরাও রণে ভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যায়। তালাবদ্ধ রেখে রিজভী পালিয়ে যায়। তিনমাস পর অফিস খুললেও বিএনপির প্রথম সারির কোন নেতা অফিসে যাননি। সিটি নির্বাচনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবি করবেই বিএনপি। অন্যথায় জ্বালাও-পোড়াও নীতিতে নেমে পড়বে দেশ। জেতা-হারা যাই হোক বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার যে দায়িত্ব নিয়েছে, তা পালন করা দুরূহ। তা করতে গিয়ে নিজের দলের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলেছে। সিটি নির্বাচন তার মূলধারায় ফেরার পথ দেখাতে পারে কেবলমাত্র। বেগম জিয়া সে পথে যাবেন কিনা তা দ্রুতই স্পষ্ট হবে।
×