ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইতিবাচক সমঝোতার পথে

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ৬ এপ্রিল ২০১৫

ইতিবাচক সমঝোতার পথে

পরমাণু কর্মসূচী নিয়ে ইরানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে ছয় বিশ্বশক্তির। দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর যে চুক্তি হয়েছে, বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মতে তা ঐতিহাসিক অর্জনই শুধু নয়, বিশ্বশান্তি জোরদারে কার্যকর ভূমিকাও রাখবে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পরবর্তী কার্যক্রমের ওপর। এতে নাখোশ হয়েছে ইসরাইল; এমনকি সৌদি আরবও। গত ১২ বছর ধরে দফায় দফায় কথা বলেছেন দু’পক্ষের প্রতিনিধিরা। অবশেষে সুইজারল্যান্ডে টানা আট দিনের আলোচনা শেষে উভয়পক্ষ একটি সমঝোতায় উপনীত হয়। সমঝোতা অনুযায়ী পরমাণু ক্ষেত্রে কিছু ছাড় দিতে রাজি হয়েছে ইরান। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইরান। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স ও রাশিয়াÑ নিরাপত্তা পরিষদের এই পাঁচ সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে জার্মানিও এ চুক্তিতে সই করেছে। খসড়া চুক্তিটি নিয়ে আরও আলোচনা শেষে আগামী ৩০ জুন উভয়পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছবে। এ সমঝোতা যুক্তরাষ্ট্র আর ইরানের দীর্ঘদিনের তিক্ত সম্পর্কের পরিবর্তন ঘটিয়ে মিত্রতা তৈরি করতে পারে। যদিও এটাকে পরিপূর্ণ চুক্তিতে নিয়ে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। ইরান পরমাণু প্রকল্পে অস্ত্র তৈরি করছে বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলো। ইরান অবশ্য তা অস্বীকার করে আসছিল। ৬টি দেশসহ অন্যান্য দেশ ইরানের ওপর এ কারণে অর্থনৈতিক অবরোধ চালিয়ে আসছিল। চুক্তির পর সংশ্লিষ্ট দেশগুলো ক্রমান্বয়ে এই অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা বলেছে। ওবামা অতীতে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির তুলনা করে বলেছেন, এটাও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে। রাশিয়া বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্কট নিরসনে ইরানের প্রভাব এবং ভূমিকাকে গুরুত্ব দেয়া হলেই কেবল এ চুক্তি বিশ্বশান্তি স্থাপনে ভূমিকা রাখতে পারবে। ইরান বলেছে, যে সমঝোতা হয়েছে, তার প্রতি যতদিন পশ্চিমা দেশগুলো সম্মান দেখাবে, ততদিন ইরানও তা মেনে চলবে। তবে ইসরাইল এ চুক্তির চরম বিরোধিতা করে বলেছে, এতে রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইলের ভবিষ্যতকে অনিশ্চিত করে তুলবে। এ সমঝোতা এই অঞ্চলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। চুক্তি অনুযায়ী ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ধীরে ধীরে হ্রাস করবে। পরমাণু গবেষণাও ধীরে ধীরে বন্ধ করা হবে। চুক্তি অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণ করবে আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা। সবকিছু চুক্তি অনুযায়ী হলে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা পর্যায়ক্রমে তুলে নেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র। পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতিতে এখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের পরোক্ষ সহযোগিতার প্রয়োজন বুঝতে পারছে দু’পক্ষই। তবে এখনও বাধা আছে বিস্তর। যুক্তরাষ্ট্রে বিরোধী রিপাবলিকানরা এখনও এই সমঝোতার বিষয়ে খুব একটা খুশি নন। তাই ৩০ জুনের মধ্যে পরমাণু চুক্তি হলেও তাতে মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন পেতে ওবামা প্রশাসনকে বহু কাঠখড় পোড়াতে হবে। তবে চুক্তিটি শান্তির পথে অগ্রযাত্রা বলা হলেও অশান্তি তৈরিতে যে সহায়ক হবে না, তা বলা যায় না। শান্তিকামী মানুষ এ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে চূড়ান্ত চুক্তি দাবি করবে সঙ্গত কারণেই।
×