ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে এএফসির নতুন কাঠামোয় এশিয়ান কাপে এ সুযোগ

মূলপর্বে খেলার উজ্জ্বল সম্ভাবনা বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৫ এপ্রিল ২০১৫

মূলপর্বে খেলার উজ্জ্বল সম্ভাবনা বাংলাদেশের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জগতে সবকিছুই পরিবর্তনশীল। যেমন কোন আইন বা নিয়মই কিন্তু চিরস্থায়ী নয়। সময়ের পরিক্রমায়, কালের আবর্তনে অনেক কিছুই বদলে যায়। এই যেমন বদলে গেছে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ ফুটবলের বাছাইপর্বের ফরম্যাট। আর এই পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের জন্য বিশ্বকাপ ফুটবলে না হোক, অন্তত এশিয়ান কাপের মূলপর্বে ঠাঁই করে নেয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। যার জন্য বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা আশায় বুক বাঁধতেই পারেন। এখন দেখার যাক, বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের ফরম্যাটটা কী। কয়েক মাস আগে ফিফার ঘোষিত র‌্যাঙ্কিং বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য সুখবর বয়ে আনে। দেখা যায়, র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ অবস্থান করছে ১৬৫ নম্বরে (এশিয়ান র‌্যাঙ্কিং ৩৪)। গত বছরের ডিসেম্বরে ঘোষিত র‌্যাঙ্কিং থেকে এক ধাপ পিছিয়ে গেলেই নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশকে খেলতে হতো ২০১৯ (সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত হবে) এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্লে-অফ। কিন্তু ১৬৫তম (৩৪) অবস্থান ধরে রাখায় বাংলাদেশ দল সুযোগ পায় সরাসরি গ্রুপ পর্বে খেলার। গত ৮ জানুয়ারি ঘোষিত ফিফা র‌্যাঙ্কিংকে ভিত্তি ধরেই এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি) এ সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সঙ্গে বদলে যায় এএফসির টুর্নামেন্টগুলোর ধরনও। এ বছর অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান কাপে ১৬ দল খেলেছে। নতুন ফরম্যাট অনুযায়ী ২০১৯ এশিয়ান কাপ ২৪ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৯ এশিয়ান কাপ র‌্যাঙ্কিংয়ের আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এএফসি কম্পিটিশন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সদস্য ফেডারেশনগুলোর র‌্যাঙ্কিংয়ের ব্যাপারটি নিষ্পত্তি হবে মোট ১০০ পয়েন্টে। এই ১০০ র‌্যাঙ্কিং পয়েন্টের মধ্যে দেশগুলো তাদের ঘরোয়া ফুটবলের মানের ভিত্তিতে পাবে ৭০ পয়েন্ট। বাকি ৩০ পয়েন্ট থাকছে জাতীয় দলের পারফরমেন্সের ভিত্তিতে। এই র‌্যাঙ্কিংয়ের প্রথম ২৪ দেশ পাবে এশিয়ার ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লীগে খেলার সুযোগ। ২৫ থেকে ৩২তম স্থানে থাকা দেশগুলো খেলবে এএফসি কাপে। ৩৩ থেকে ৪৭তম স্থানে থাকা দেশগুলো লড়বে এএফসি কাপের জন্য বাছাইপর্বে। চ্যালেঞ্জ কাপ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ২০১৯ সালের এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব অনুষ্ঠিত হবে আরও বড় পরিসরে। এখন থেকে এশিয়ান কাপ এবং বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের খেলাগুলো একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে। বাছাইপর্বে সরাসরি খেলার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ। এশিয়ার সেরা ৩৪ দেশের মধ্যে স্থান করে নেয়াতেই বাংলাদেশের জন্য খুলে যায় এই উজ্জ্বল সম্ভাবনার ক্ষেত্র। বর্তমানে ৪৭ দেশ এএফসির সদস্য। একমাত্র সহযোগী সদস্য নর্দার্ন মারিয়ানা এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে খেলতে পারছে না। বাকি ৪৬ দেশের সবাই এন্ট্রি করেছে। এর মধ্যে র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকা ১২ দেশকে প্লে-অফ ম্যাচ খেলতে হবে। এশিয়ার শীর্ষ তালিকায় বাংলাদেশের ঠিক পেছনে (৩৫) হওয়ায় ভারত পড়ে যায় প্লে-অফ ম্যাচ খেলার তালিকায়। যে ১২ দেশকে হোম এ্যান্ড এ্যাওয়ে ভিত্তিতে প্লে-অফ ম্যাচ খেলতে হবে, সে দেশগুলো হচ্ছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, ইয়েমেন, কম্বোডিয়া, চাইনিজ তাইপে, তিমুর, নেপাল, ম্যাকাও, পাকিস্তান, মঙ্গোলিয়া, ব্রুনাই এবং ভুটান। প্লে-অফ ম্যাচে জয়ী ছয়টি দেশ শীর্ষ ৩৪ দলের সঙ্গে যুক্ত হবে । এই ৪০ দেশ এশিয়ান কাপ ও বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে খেলবে। ৪০ দেশকে ৮ গ্রুপে ভাগ করে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় রাউন্ড। প্রতি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ও ৪ সেরা গ্রুপ রানার্সআপ দল নিয়ে মোট ১২ দল বিশ্বকাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ড ও এশিয়ান কাপের মূলপর্বে কোয়ালিফাই করবে। এই রাউন্ডে ম্যাচগুলোর তারিখ হচ্ছে ১১ ও ১৬ জুন, ৩ ও ৮ সেপ্টেম্বর ৮ ও ১৩ অক্টোবর ১২ ও ১৭ নবেম্বর, ২৪ ও ২৯ মার্চ ২০১৬। সেরা ৪ দল ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে অংশ নেবে। পঞ্চম সেরা দল ওশেনিয়া অঞ্চলের সেরা দলের সঙ্গে বাছাই খেলবে। এখন পরিবর্তন এসেছে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডে কোয়ালিফাইংয়ের ফরম্যাটে। এখানে অবশ্য যোগ্যতা অর্জনকারী দলসংখ্যা ২৪টিই রাখা হয়েছে। বাকি ৪টি গ্রুপ রানার্সআপ, প্রতি গ্রুপের তৃতীয় স্থান পাওয়া দলগুলো ও ৪টি সেরা চতুর্থ স্থান অর্জনকারী দলÑ সব মিলিয়ে ১৬ দল ‘সরাসরি’ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডে উত্তীর্ণ হবে। বাকি ৪ চতুর্থ স্থান পাওয়া দল ও প্রতি গ্রুপের পঞ্চম বা শেষ স্থান পাওয়া দলগুলো, অর্থাৎ ২৯-৪০ এ থাকা দলগুলো এশিয়ান কাপ বাছাইতে কোয়ালিফাই করতে দুই রাউন্ডের হোম এ্যান্ড এ্যাওয়েভিত্তিক প্লে-অফে অংশ নেবে। প্রথম রাউন্ডের তারিখ ২ ও ৭ জুন, (২০১৬) দ্বিতীয় রাউন্ডের তারিখ ৬ সেপ্টেম্বর, ১১ অক্টোবর (২০১৬), প্লে-অফের ফরম্যাটের ব্যাপারে এখনও ঘোষণা আসেনি এএফসির কাছ থেকে। সম্ভাব্য ফরম্যাট ২৯-৩২ এ থাকা দলগুলো খেলবে ৩৩-৩৬ এ থাকা দলগুলোর সঙ্গে। জয়ী ৪ দল এশিয়ান কাপ বাছাইতে উঠবে। আর হেরে যাওয়া ৪ দল ৩৭-৪০ এ থাকা দলগুলোর বিপক্ষে খেলবে। এখান থেকে জয়ী ৪ দল এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের বাকি ৪টি কোটা পূরণ করবে। প্লে-অফ খেলতে হবে না বলে বাংলাদেশ অনেক বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে। তৃতীয় রাউন্ড হোম এ্যান্ড এ্যাওয়ে পদ্ধতিতে হবে কিনা তার ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত কতগুলো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। তবে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বে কমপক্ষে ৮ ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে। বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ জানান, ‘২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার অনুষ্ঠিত এশিয়ান কাপের উদ্বোধনী ম্যাচটা দেখেছিলাম ভিআইপি গ্যালারিতে বসে। ওই আসরে বাংলাদেশ ছিল না। তবে আমি তো আশা করি ২০১৯ সালে আমিরাতে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান কাপের উদ্বোধনী ম্যাচটাও দেখব একইভাবে। তবে সেই আসরে অবশ্যই থাকবে বাংলাদেশ!’ সোহাগের এই স্বপ্ন বাংলাদেশী সব ফুটবলপ্রেমীরই স্বপ্ন। সেটা সত্যি হবে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
×