ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সুরাশ্রিত জন্মদিনের শুভেচ্ছায় সিক্ত সন্্জীদা খাতুন

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৫ এপ্রিল ২০১৫

সুরাশ্রিত জন্মদিনের শুভেচ্ছায় সিক্ত সন্্জীদা খাতুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জীবনভর অশুভের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেছেন কল্যাণের কথা। মানবিক ও মুক্ত সমাজ বিনির্মাণে রেখে চলেছেন অনন্য ভূমিকা। সংস্কৃতিকে সঙ্গী করে দীর্ঘ পথ হেঁটেছেন সম্প্রীতির পথে। সুরকে হাতিয়ার করে আজও লড়াই করছেন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। সম্প্রীতি ও প্রগতির দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে কেটে যায় তাঁর প্রতিটি দিন। তিনি হলেন ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের সভাপতি সন্্জীদা খাতুন। শনিবার চৈত্রের সন্ধ্যায় উদযাপিত হলো এই সঙ্গীত গুণীর জন্মদিন। সুরের আশ্রয়ে জানানো হলো জন্মদিনের শ্রদ্ধা। তবে প্রথামাফিক প্রচলিত জš§দিন উদযাপনের বাগাড়ম্বর ছিল না আয়োজনে। অনুষ্ঠানে ছিল না কোন প্রধান অতিথি কিংবা সভাপতি। ছিল না ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা নিবেদন পর্ব। আর যাঁকে ঘিরে এমন আয়োজন তিনি মঞ্চে না উঠে বরং দর্শকসারিতে বসে রইলেন সারাটি ক্ষণ। সুহৃদ ও শুভাকাক্সক্ষীদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে সুরের অনুরণনে সিক্ত হলেন। শনিবার ছিল বরেণ্য রবীন্দ্র গবেষক ও ছায়ানট সভাপতি সন্জীদা খাতুনের ৮৩তম জš§দিন। ছায়ানটের রমেশচন্দ্র দত্ত মিলনায়তনে সন্্জীদা খাতুনকে নিবেদন করে গান পরিবেশন করা হয়। ফুল দিয়ে সাজানো ছোট্ট মঞ্চ সেখানে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বসেছিলেন শিল্পীরা। সনজীদা খাতুনকে জš§দিনের শুভেচ্ছা জানানোর এই অনুষ্ঠানে গানের ডালি নিয়ে মাটিতে আসন পেতে বসেছিলেন ছায়ানটের সঙ্গীত বিদ্যায়তনের শিক্ষার্থী শিল্পীরা। তারা পরিবেশন করেন চারটি কোরাস সঙ্গীত। কোরাসের ফাঁকে ফাঁকে একক কণ্ঠে গান শোনান সঙ্গীতাঙ্গনের পরিচিত মুখগুলো। তাঁকে নিবেদিত গানের পর্ব সূচনা হয় সমবেত কণ্ঠে কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘শুভ্র সমুজ্জ¦ল, হে চির-নির্মল’ গানটি পরিবেশনের মাধ্যমে। এ গানের রেশ ধরে সম্মেলক কণ্ঠে শিল্পীরা গাইলেন রবীন্দ্রনাথের পূজা পর্যায়ের গান ‘ধ্বনিল আহ্বান মধুর গম্ভীর প্রভাত-অম্বর-মাঝে’। এর পর একক গান নিয়ে মঞ্চে আসেন ফাহমিদা খাতুন। পরিবেশন করেন তিনটি গান। শুরুতে ‘আজি যে রজনী যায়’ ও ‘সে আমার গোপন কথা’ শীর্ষক দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে শোনান। শেষ করেন ™ি^জেন্দ্র লাল রায়ের গান ‘মলয় আসিয়া কয়ে গেছে কানে’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। ইফ্্ফাত আরা দেওয়ান পরিবেশন করেন তিনটি গান। গানগুলো হলো ‘আয়রে বসন্ত ও তোর কিরণ মাখা পাখা তুলে’, ‘লিখন তোমার দোলায় হয়েছে ধূলি’ ও ‘দিনের বেলায় বাঁশি তোমার বাজিয়েছিলে অনেক সুরে’। শারমিন সাথী ইসলাম ময়না গেয়ে শোনান দুটি নজরুলসঙ্গীত ‘বনে বনে দোলা লাগে’ ও ‘কুহু কুহু কোয়েলিয়া’। শেষ করেন দ্বিজেন্দ্র লাল রায়ের সুরে ‘একি মধুর ছন্দ’। এছাড়া একক কণ্ঠে গান শোনান লাইসা আহমেদ লিসা, মিতা হক ও খায়রুল আনাম শাকিল। পাঠে অংশ নেন জাহিদ রেজা নূর। পুরো এই আয়োজনটির শেষ হয় দুটি কোরাসের মধ্য দিয়ে। এর মধ্যে ছিল সলিল চৌধুরীর গণসঙ্গীত ‘ও আলোর পথযাত্রী, এ যে রাত্রি, এখানে থেমো না’ ও লোকগীতি ‘মানুষ ধর মানুষ ভজ, শোন বলি রে পাগল মন’। কোরাসে অংশ নেন অমিত আচার্য হিমেল, খায়রুল ইসলাম, মঞ্জু মনোয়ার নিপা, আশরাফুজ্জামান পিনু, শ্রাবণী শর্মা, আবিদা সুলতানা বাঁধনসহ অনেকে। বছরব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক চলচ্চিত্র উৎসব ॥ মুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি যৌথভাবে ‘নতুন চলচ্চিত্র, নতুন নির্মাতা’ শিরোনামে দেশের চলচ্চিত্রকারদের নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য, পূর্ণদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নিয়ে বছরব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করেছে। বছরব্যাপী এ উৎসবে নতুন নতুন চলচ্চিত্র নির্মাতা তৈরির পাশাপাশি তাদের সামাজিক পরিচিতি গড়ে উঠবে। একজন সৃজনশীল মেধাবী তরুণ নির্মাতা এই সামাজিক পরিচিতি জাতীয় চলচ্চিত্র-সংস্কৃতির পরিসরে তরুণের টিকে থাকার জমিন তৈরি করবে। এই কর্মসূচী বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে তাদের সৃজনশীল কর্মপ্রয়াস দর্শকদের সামনে নিয়মিত তুলে ধরার একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে উঠবে। উৎসবের বিস্তারিত তথ্য এবং অংশগ্রহণ বিষয়ক নিয়মাবলী জানাতে শনিবার সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন উৎসবের অন্যতম জুরি সদস্য চলচ্চিত্র গবেষক ও সমালোচক অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, অধ্যাপক সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী, চলচ্চিত্র নির্মাতা সামির আহমেদ এবং শিল্পী সব্যসাচী হাজরা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কবি ও চলচ্চিত্রকার টোকন ঠাকুর এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা নোমান রবিন। উৎসব বিষয়ক বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন উৎসব পরিচালক ও ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি বেলায়াত হোসেন মামুন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘নতুন চলচ্চিত্র, নতুন নির্মাতা’ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকারদের নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য, পূর্ণদৈর্ঘ্য এবং প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের বছরব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক উৎসব। উৎসবটি এপ্রিল ২০১৫ থেকে এপ্রিল ২০১৬ পর্যন্ত চলবে। উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এ মাসের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে এবং সমাপনী অনুষ্ঠান আগামী বছরে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। সমাপনী অনুষ্ঠানে বছরব্যাপী বাছাইকৃত ও প্রদর্শিত চলচ্চিত্রসমূহের মধ্য থেকে তিনটি বিভাগে ৩ জন নির্মাতাকে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করা হবে। প্রয়াত তিনজন গুণী চলচ্চিত্রকারের নামে এই তিনটি পুরস্কার প্রবর্তিত হয়েছে। পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র বিভাগে ‘জহির রায়হান শ্রেষ্ঠ কাহিনীচিত্র পুরস্কার’, প্রামাণ্যচলচ্চিত্র বিভাগে ‘আলমগীর কবির শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্র পুরস্কার’ এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য কাহিনী, নিরীক্ষা এবং এনিমেটেড চলচ্চিত্র বিভাগে ‘বাদল রহমান শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার’ প্রদান করা হবে। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচনে সাত সদস্যের জুরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। জুরি কমিটির প্রধান হচ্ছেন অগ্রজ চলচ্চিত্রকার ও চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম, লিয়াকত আলী লাকী, চলচ্চিত্র গবেষক ও অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, চলচ্চিত্র নির্মাতা সামির আহমেদ, চলচ্চিত্র গবেষক ও অধ্যাপক সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী এবং শিল্পী সব্যসাচী হাজরা। যে কোন বয়সের চলচ্চিত্র নির্মাতা, যে কোন ফরম্যাটে নির্মিত চলচ্চিত্র নিয়ে এই কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। উৎসবে স্বল্পদৈর্ঘ্য ও পূর্ণদৈর্ঘ্য, কাহিনী ও প্রামাণ্য, নিরীক্ষা ও এনিমেটেড সব ধরনের চলচ্চিত্রের জন্য দ্বার উন্মুক্ত থাকবে। একজন নির্মাতা একাধিক চলচ্চিত্র এই কর্মসূচীতে জমা দিতে পারবেন। তবে এক মাসে একটির বেশি নয়। ‘নতুন চলচ্চিত্র, নতুন নির্মাতা’ কর্মসূচীটি বাংলাদেশের নবীন চলচ্চিত্রকারদের নির্মিত চলচ্চিত্রের নিয়মিত প্রদর্শনী, দর্শক-নির্মাতা মতবিনিময় এবং বছরব্যাপী প্রদর্শিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্য থেকে সেরা ৩ জন নির্মাতা বাছাইয়ের প্রতিযোগিতামূলক উৎসব। উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে সেরা তিন নির্মাতাকে পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান করা হবে। পদাতিক নাট্য সংসদের নাট্যোৎসব ও সম্মাননা ॥ মুক্ত করো মানবতা সেøাগানে ভাষাসৈনিক, শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক ও পদাতিক নাট্য সংসদের আজীবন সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইনের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পদাতিক নাট্য সংসদ ৭ থেকে ১১ এপ্রিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হল এক্সপেরিমেন্টাল হলে সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসেন নাট্যোৎসব ও স্মারক সম্মাননার আয়োজন করেছে। এবারের সম্মাননা পাচ্ছেন অধ্যাপক মমতাজউদ্দীন আহমদ ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এবারের উৎসবে ভারতের অনীক ও রঙ্গকর্মীসহ দেশের ৫টি দল অংশ নেবে। দেশের নাট্যদলগুলো হলো থিয়েটার, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়, আরণ্যক নাট্যদল, বটতলা ও পদাতিক নাট্য সংসদ। জাতীয় নাট্যশালার মূল হল ও পরীক্ষণ হলে প্রতিদিন সন্ধ্যায় দুটি করে মোট ১০টি নাটক মঞ্চস্থ হবে। উৎসব উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর একটি রেস্তরাঁয় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন পদাতিক নাট্য সংসদের সম্মানিত সদস্য কাজী রফিক, সহ-সভাপতি শেখ মোসলেউদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল হক, যুগ্ম সম্পাদক ওয়াহিদুল ইসলাম। বক্তারা বলেন, ১৯৭৮ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই নাট্যদলটি গঠিত হয়। ৩৮ বছরে ৩৮টি নাটক মঞ্চে এনেছে।
×