ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বৈশাখের কেনাকাটা

পোশাকে লোকজ সংস্কৃতির নানা অনুষঙ্গ, দেশীয় তাঁতে শহুরে সাজ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৫ এপ্রিল ২০১৫

পোশাকে লোকজ সংস্কৃতির নানা অনুষঙ্গ, দেশীয় তাঁতে শহুরে সাজ

মোরসালিন মিজান ॥ হাতে কয়েক দিন আছে বটে। থাকুক। প্রস্তুতিটাও তো বড়সড়। তাই শুরু হয়ে গেছে তোড়জোড়। যে যার মতো করে ব্যস্ত। উপলক্ষ- পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ শুরুর দিনটি মাহা ধুমধামে উদ্যাপন করবে বাঙালী। অন্যের যা কিছু, ছুঁড়ে ফেলবে। আঁকড়ে ধরবে শেকড়। হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রীস্টানে কোন ভেদ থাকবে না। সবাই, সকলে মিলে যোগ দেবেন বাঙালীর সবচেয়ে বৃহৎ অসাম্প্রদায়িক উৎসবে। সে প্রস্তুতিই চলছে এখন। প্রথমেই আসে পোশাকের কথাটি। বর্ষবরণের দিন পোশাকে সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয় বাঙালীয়ানা। উৎসবের বর্ণাঢ্য বর্ণিল রূপটিও বিশেষত পোশাকে ফুটে উঠে। ফলে পোশাক কিনেই প্রাথমিক শুরুটা করছেন অনেকে। দেশীয় পোশাকের শোরুমগুলোতে এখন বেশ ভিড়। এ জাতীয় পোশাকের ভাল সংগ্রহ বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের দেশী দশ কর্ণার। এখানে একটু আগে ভাগেই জমে উঠেছে কেনাকাটা। দেখে বোঝা যায়Ñ বৈশাখ আসছে। দেশের দশ শীর্ষ ফ্যাশন হাউসের পোশাক নিয়ে এই কর্ণার। বরাবরই এখানে বাঙালীর ঐতিহ্য প্রাধান্য পেয়েছে। বৈশাখে সেটি আরও বেশি দৃশ্যমান। শনিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায় উৎসবের আমেজ। প্রবেশ করতেই কানে আসে প্রিয় সুর- এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ...। নিজের অজান্তেই গুন গুন করে ওঠে মন। শুরু হয়ে যায় কেনাকাটা। হাতের বাম পাশ ধরে এগোলে প্রথমেই নজর কাড়ে ফ্যাশন হাউস রঙ। এখানে নানা ডিজাইনের পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রিপিস। সবই দেশীয় তাঁত। ঐতিহ্যের সঙ্গে যোগ হয়েছে আধুনিকতা। উজ্জ্বল রঙ। বৈশাখের লাল সাদা যথারীতি প্রাধান্য পেয়েছে। বাদ যায়নি রংধনুর বাকি রংগুলোও। অধিকাংশ পোশাকে আবার বাংলা বর্ষপঞ্জি এঁকে দেয়া হয়েছে। সেখানে বাংলা ১২ মাস। দিন তারিখ। এর ব্যাখ্যা কী? জানতে চাইলে ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম হিরা বলেন, আমরা প্রতি বৈশাখে একটি নতুন থিম নির্বাচন করে তার ওপর কাজ করি। এবারের থিম বাংলা বর্ষপঞ্জি। বাংলা ক্যালেন্ডারের কথাটি শহুরে মানুষ একদমই ভুলতে বসছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা তা আবার একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। পাশেই ফ্যাশন হাউস দেশাল। এখানে রঙের ঔজ্জ্বল্য অতো নেই। প্রাকৃতিক রঙের খুব সুন্দর ব্যবহার। পোশাকের গায়ে ফোক মোটিফ। গ্রামীণ জীবনের অনুষঙ্গ প্যাঁচা, মাছ, পাখি, পুতুল ইত্যাদি এঁকে দেয়া হয়েছে। শপ ইনচার্জ রেহানা আক্তার জানালেন, বৈশাখে যারা একটু ব্যতিক্রমী চিন্তা করেন, তাদের জন্য দেশালের এমন আয়োজন। ফ্যাশন হাউস অঞ্জনসের প্রস্তুতিটাও বেশ। এখানে স্বামী স্ত্রী সন্তানের জন্য রয়েছে আকর্ষণীয় প্যাকেজ। প্রিয়জনের পোশাকের সঙ্গে নিজের পোশাকটি একদম মিলে যাবে। ছোট বাচ্চাদের পোশাকও হবে অভিন্ন। সেভাবেই প্যাকেজগুলো সাজানো হয়েছে বলে জানান শোরুমের দায়িত্বে থাকা বিশ্বজিত মালাকার। নগরদোলারও আছে প্যাকেজ আয়োজন। এখানে স্বামী স্ত্রী বা প্রেমিক প্রেমিকাদের ছাড়াও আছে মা এবং মেয়ের জন্য একটি প্যাকেজ। তবে সব শোরুমেই প্রচুর চাহিদা শাড়ির। দেশীয় তাঁতের শাড়িতে দারুণ সব কাজ করা হয়েছে। ফ্যাশন হাউস নিপুণে শাড়ির চমৎকার সংগ্রহ। হাফ সিল্ক, ফুল কটন ও মসলিনের ওপর এমব্রয়ডারি ব্লক ও স্ক্রিনপ্রিন্টের মানানসই কাজ দেখে মুগ্ধ হতে হয়। শোরুমের দায়িত্বে থাকা পুজা জানালেন, এখন তাঁদের বিক্রি ভাল। তবে আর দু’একদিন পর বিক্রি বেড়ে কয়েকগুণ হবে। এমনকি সব পোশাক পাওয়া যাবে না। দেশী দশের অন্য শোরুম-গুলোতেও বৈশাখের বিপুল সম্ভার। ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে পোশাক দেখছেন। কিনছেন। মিরপুর থেকে এসেছিলেন দুই বান্ধবী তানিয়া ও সিঁথি। নিজেদের জন্যই কেনাকাটা। কিন্তু এত আগে কেন? জানতে চাইলে মজার একটি জবাব পাওয়া গেল। দুই বান্ধবীর বক্তব্যটি এরকমÑ বৈশাখে সব পোশাকের অভিন্ন রং লাল সাদা। কাপড়ও দেশীয়। এর মধ্য থেকেই ব্যতিক্রম কিছু খুঁজে নিতে হয়। যারা আগে আসেন তারা সুবিধাটা বেশি পান। এ জন্য আগে আসা। বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থী শিমুল একা এসেছিলেন। না, নিজের জন্য কেনেননি। ৭ বছরের ছোট বোনটির জন্য পছন্দ করে কিনেছেন। বললেন, নিজের ঐতিহ্য সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার বড় উৎসবটি বৈশাখ। এই উৎসবে বোনটি নিয়ে যোগ দিতে চাই। বয়স্কদের জন্যও বৈশাখের পোশাক কেনা করা হচ্ছে। তেমন দৃশ্যও কম চোখে পড়েনি। আর প্রেমিক-প্রেমিকাদের কথা তো বলাই বাহুল্য। একে অন্যের হাত ধরে ঘুরছেন। পোশাক দেখছেন। দু’জনের পছন্দ হলে পরেই কিনছেন। সব মিলিয়ে আনন্দঘন সময়। আর এ আনন্দের সবটুকুই এনে দিয়েছে বৈশাখ।
×