ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চলছে ৬ বছর, দেখা মাত্রই স্যালুট অবশেষে ধরা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৫ এপ্রিল ২০১৫

চলছে ৬ বছর, দেখা মাত্রই স্যালুট অবশেষে ধরা

আজাদ সুলায়মান ॥ ছয় বছর চলেছে গাড়িটি। কেউ ধরেনি। কেউ কোনদিন কাগজপত্রও চেক করেনি। ট্রাফিক সার্জেন্টরা কখনই এ জাতীয় অভিজাত গাড়ি ধরা দূরে থাক, দেখা মাত্রই স্যালুট দিয়ে রাস্তা বাতলে দেয়। তারা ধরেই নেয়, এটা হয় কোন ভিআইপি, সিআইপি অথবা প্রভাবশালী কারোর গাড়ি। ধরলে উল্টো চাকরি নিয়ে টান। অথচ যিনি গাড়িটির মালিক, তিনি তেমন কিছুই নন। একজন দুর্ধর্ষ গডফাদার। চোরাচালান করেই তিনি হয়েছেন বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক। সমাজে তার অবস্থান খুবই উঁচুতে। নিজে চালান মার্সিডিজ। এই মার্সিডিজ চালানোর নেপথ্যেও রয়েছে আরও চমকপ্রদ সব কাহিনী। যা শুনে শুধু বিস্মিত হননি, আঁতকে উঠেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান। বলেছেন, এ জাতীয় গাড়ি সব খুঁজে বের করা হবে। ওরা যতোই প্রভাবশালীই হোক, আইনের আওতায় আনা হবে। চব্বিশ ঘণ্টার এক নাটকীয় অভিযান শেষে শুক্রবার রাতে গাড়িটির সন্ধান পায় শুল্ক গোয়েন্দা। এ জন্য তারা কাজ করছিলেন দীর্ঘদিন ধরেই। সোর্স খবর দেয়, রাজধানীতে এ ধরনের প্রায় শতাধিক দামী গাড়ি অবাধে চলছে, যেগুলো মিথ্যা ঘোষণায় কোটি কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা হয়েছে। প্রথম বারের মতো এ ধরনের গাড়ি ধরা পড়েছে শুল্ক গোয়েন্দার অভিযানে। শনিবার মগবাজারে এ অফিসে রাখা মার্সিডিজ গাড়িটি সম্পর্কে যখন তথ্য দিচ্ছিলেন, তখন মহাপরিচালক ডক্টর মইনুল খান নিজেও বিস্ময়ের সঙ্গে প্রশ্ন রেখেছেন, কিভাবে গাড়িটি আনা হলো বন্দর দিয়ে, কিভাবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা গাড়িটি বিআরটিএ-থেকে রেজিস্ট্রেশন পেল, কেনই বা ট্রাফিক পুলিশ একদিনও গাড়িটির কাগজপত্র চেক করেনি। এ সব প্রশ্নের উত্তর তিনি নিজেও দিতে পারেননি। বলেছেন, অনুমান নির্ভর আর ধারণাভিত্তিক কিছু কথা। জানিয়েছেন-গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন করা বেলায়েত হোসেন নামের একজন ব্যক্তির নামে, যিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় একজন চোরাচালানের গড ফাদার। যার সিদ্ধিরগঞ্জের কারখানায় গত মাসে অভিযান চালিয়ে শুল্ক গোয়েন্দারা উদ্ধার করে ২০ কোটি টাকার বিদেশী সব কসমেটিক্স পণ্য যার সবটাই ভেজাল। সেই বেলায়েতকে খুঁজতে গিয়ে উঠে আসে মার্সিডিজের এই কাহিনী। যা অনেকটা কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বের হয়ে আসার মতো ঘটনা। শুল্ক গোয়েন্দারা বেলায়েতের অবৈধ সম্পদের খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারেন, তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের সিমরাইলের একজন স্থানীয় বাসিন্দা হলেও তিনি থাকেন ধানম-ির ৫ নং রোডের ২৩/এ ফ্ল্যাটে। ওখানেই হানা দিয়ে দেখা যায়, তিনি এই গাড়িটির মালিক। তখন সেটার কাগজপত্র সম্পর্কে অনুসন্ধান করে শুল্ক গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন, এ গাড়িটি আনা হয়েছে ২০০৯ সালে। সেটা মিথ্যা ঘোষণায় পদ্মা ওয়েলের নামে একটি বিল অব এন্ট্রির কাগজের নামে এই গাড়িটি বিআরটিএ-তে রেজিস্ট্রেশন করে নেন। এ সম্পর্কে ডক্টর মইনুল খান জানান, গাড়িটির মডেল “কার সেডান মার্সিডিজ ২০০৮ কমপ্রেসার, সিসি ২০০০, কালার ব্ল্যাক”। রেজিস্ট্রেশন নং ঢাকা মেট্রো-গ-১৪- ৯৭৩৮। এ গাড়িটি সরাসরি জার্মান থেকে আনা। যার মূল্য ৭ কোটি টাকা। এতে কমপক্ষে ৩ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়েছে। গাড়িটি ২০০৯ সালে ভুয়া বিল অব এন্ট্রি নং সি- ২৫১৩৯-এর মাধ্যমে বন্দর থেকে খালাস করা হয়। প্রতি বছর গাড়িটি বিআরটিএতে নবায়ন করা হয়। তিনি জানান, এ গাড়িটি চোরাই পথে আনা হয়েছে। এখন সেটা তদন্ত করে বের করা হবে কোন বন্দরের কর্মর্র্কতারা গাড়িটি খালাসে সহায়তা করেছে। ডক্টর মইনুল খান জনকণ্ঠের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, গাড়িটির মালিক বেলায়েত একজন পেশাদার চোরাচালানকারী। তার কারখানায় এর আগে হানা দিয়ে কোটি কোটি টাকার অবৈধ পণ্য আটকের পর থেকেই এখন পলাতক। শুক্রবার রাতে র‌্যাব-২এর সহায়তায় তার বাড়িতে হানা দিয়ে এটা ধরা হয়। তার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি একজন মাদক ব্যবসায়ী। এর আগে তার কারখানায় তিন কন্টেনার মাদক দ্রব্য মওজুদ রাখা ছিল। সেখানে হানা দেয়ার আগেই তিনি সেই মদ সরিয়ে ফেলেন। এমন একজন স্মাগলার বেলায়েত ঢাকা ক্লাবেরও মেম্বার। তাকে ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অপর একটি সূত্র জানায়, এ ধরনের আরও শতাধিক বিলাসবহুল গাড়ি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে এনে চালানো হচ্ছে। তার মতোই তথাকথিত মুখোশধারী প্রভাবশালীরাই এ সব গাড়ি চালাচ্ছেন। তাদের ধরার জন্য শুল্ক গোয়েন্দারা মাঠে ।
×