ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে;###;দুর্ঘটনা রোধে এখনই বন্ধ করা প্রয়োজন

নৌযান তৈরির ডকইয়ার্ড

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৫ এপ্রিল ২০১৫

নৌযান তৈরির ডকইয়ার্ড

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ বাল্কহেড, কার্গো, ড্রেজার, ট্রলারসহ নানা নৌযান তৈরি হচ্ছে যেখানে সেখানে। এসব প্রতিষ্ঠানের বৈধ কাগজপত্রাদিও নেই। এমনকি এসব নৌযানের নকশায় মারাত্মক ত্রুটি। ফলে এগুলো নৌপথে দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি ঘন ঘন নৌ-দুর্ঘটনার জন্য এ ধরনের নৌযানকেই দায়ী করা হয়েছে। সর্বশেষ বুধবার মুন্সীগঞ্জের মেঘনায় এবং ফতুল্লার বুড়িগঙ্গায় ট্রলার দুর্ঘটনাও একই সুতোয় গাঁথা। এছাড়াও গত কয়েক বছরে মুন্সীগঞ্জে পর পর ডুবে গেছে যাত্রীবাহী মদিনার আলো, শরিয়তপুর-১, এমএল সারস, মিরাজ-৪ ও পিনাক-৬। এতে মারা গেছে কয়েকশ’ যাত্রী। এসব দুর্ঘটনার পেছনেও নৌযানের নক্সায় ত্রুটি ও এসব অবৈধ নৌযানই বেশি দায়ী। বিআইডব্লিউটিএর নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হক জানান, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোতে অননুমোদিত ডকইয়ার্ড রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি রেড মার্ক চিহ্নিত করা হয়েছে। ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রক্রিয়া চলছে। এগুলোতে শুধু বাল্কহেড, কার্গো, ড্রেজার, ট্রলারই শুধু নয়, লঞ্চ ও জাহাজ পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী ও মেঘনার তীরে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অসংখ্য ডকইয়ার্ড। আর এসব ডকইয়ার্ড থেকেও স্টিলের পাত বা স্ক্রাপ দিয়ে নৌযানের কাঠামো নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়। এসব নৌযানের কোন হুইল থাকে না। নৌকার মতো হালের সঙ্গে লম্বা স্টিলের পাত বা কাঠের খুঁটির মতো বস্তু ব্যবহার করা হয় হুইলের বিকল্প হিসেবে। চালক নৌযানের ছাদে বসে কখনও পা দিয়ে আবার কখনও হাত দিয়ে নৌযানটি চালিয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের পণ্য পরিবহনের জন্য দেশী প্রযুক্তিতে এ ধরনের নৌযান নির্মাণ করা হচ্ছে। কোন ধরনের কারিগরি নক্সা ছাড়াই মিস্ত্রি বা ওয়েল্ডারের পরিকল্পনায় এসব নৌযান নির্মাণ করা হয়ে থাকে। যারা এ ধরনের নৌযান নির্মাণ করছে তাদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। অশিক্ষিত এই পেশাজীবী গোষ্ঠীই এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ডকইয়ার্ডগুলোর বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ডকইয়ার্ড মালিকরা কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে বাল্কহেড মালিকদের দাবি বৈধভাবেই চলছে এসব নৌযান। এখনই এ ধরনের নৌযান তৈরি নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে নৌপথের জন্য আরও ভয়াবহ সঙ্কটের সৃষ্টি হবে। তাই নৌপথ সুরক্ষায় এসব অবৈধ যান তৈরির কারখানাগুলোকে বিধির মধ্যে নিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হক এ ব্যাপারে জানান, এক্ষেত্রে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে। স্ব স্ব দায়িত্ব যথাযথ পালনের মাধ্যমে এগুলো বন্ধ বা নিয়মের মধ্যে নিয়ে আনতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সমন্বিত প্রয়াস। সে বিষয়েই চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের অনেক দায়িত্ব। নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে এমন অবৈধ নৌযান প্রতিরোধ করার ব্যাপারে নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে।
×