ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোস্তাফা জব্বার

একুশ শতক ॥ জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতের কথা

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ৫ এপ্রিল ২০১৫

একুশ শতক ॥ জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতের কথা

॥ তিন ॥ ৬ জুন রাতে পতাকাটিকে বানানোর প্রধান কারণ ছিল সেটিকে ৭ জুন পল্টন ময়দানের কুচকাওয়াজে নিয়ে যাওয়া। পতাকাটি কিসে করে নিয়ে যাওয়া হবে এবং কে সেটি বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দেবেন সেইসব নিয়ে রাতে বেশ আলোচনা হয়। পরদিন জয় বাংলা বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানাবে সেই ভাবনাতেই পতাকার জন্ম হলে ৭ জুন আসম আবদুর রবকে অধিনায়ক করে জয় বাংলা বাহিনীর দলটি তৈরি হয়। এই প্রসঙ্গে মনিরুল ইসলাম বলেন, “৭ জুন সকালে আবহাওয়া মেঘলা থাকায় এবং পতাকার আবেগও বেশি মাত্রায় অনুভব করায় এটাকে প্রদর্শিত করে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে ছোট লাঠিতে পেঁচিয়ে নিয়ে গিয়ে শেখ মুজিবের হাতে তুলে দেয়ার কথা ভাবা হয়। জহুরুল হক হল থেকে শুরু হয়ে সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে চলে বাদনের তালে তালে কুচকাওয়াজ দল। পল্টন ময়দানে শ্রমিক লীগের সমাবেশ র‌্যালি থাকলেও ছাত্রলীগের এই পদক্ষেপ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ছাত্রলীগের বাহিনীটি মঞ্চে দণ্ডায়মান শেখ মুজিবকে অভিবাদন জানাতে মঞ্চের কাছে যায়। মঞ্চের কাছে গিয়ে রাতে তৈরি করা পতাকাটি ডাকসুর সহ-সভাপতি আসম আবদুর রব শেখ মুজিবের হাতে তুলে দেন। শেখ মুজিব পতাকাটা খুলে দেখেই পাশে কার হাতে দিয়ে দেন।” বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার জন্মের মুহূর্তটির কথা জানার পর এই আগ্রহটি জাগা উচিত যে, ’৭০ সালের জুন মাসের ৬ তারিখে জন্ম নেয়া জাতীয় পতাকাটি মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের পতাকা হলো কেমন করে। এটি দুর্ভাগ্যজনক হতে পারে যে, আমাদের নতুন প্রজন্মের মানুষদের এসব বিষয়ে তেমন আগ্রহ নেই। আবার এটিও সত্য যে, আমরা তাদের সামনে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরি না। রাষ্ট্রও সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে না। আমাদের কেন জানি এক ধরনের জড়তা কাজ করে। অথচ দুনিয়াতে এমন কারও থাকার কথা নয়, যে তার নিজের দেশ, নিজের পতাকা, নিজের জাতীয় সঙ্গীত বা তার মুক্তিযুদ্ধের কথা জানতে চাইবে না। সম্ভবত আমরা এক বিরল প্রাণী! যা হোক আমরা জাতীয় পতাকার পরের ধাপটির দিকে এগিয়ে যেতে পারি। জাতীয় পতাকাটির ইতিহাসে জন্মের পরের বড় ঘটনাটি হচ্ছে ২ মার্চ ১৯৭১ তারিখে বটতলায় এর উত্তোলন। সেদিন বটতলাতে আমি, আফতাব, মাহবুব ভাইসহ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সমাজতন্ত্র ও স্বাধীনতাপন্থী সবাই ছিলাম। বটতলার সভায় সচরাচর বটগাছের নিচেই বক্তারা থাকতেন। কখনও মঞ্চ হতো, কখনও হতো না- কেবল মাইক থাকত। কিন্তু সেদিন ব্যতিক্রম হলো। কলা ভবনের গাড়ি বারান্দার ওপরে ছিলেন রব ভাইরা। আমরা নিচে সেøাগান দিচ্ছিলাম। আফতাব ও চিশতীর উচ্চকিত গলার আওয়াজ এখনও আমার কানে বাজে। আমরা তখন পুরো বটতলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বীর বাঙালী অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর, পাঞ্জাবী কুত্তারা বাংলা ছাড়, পদ্মা মেঘনা যমুনা তোমার আমার ঠিকানা ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছিলাম। যদিও আমরা তিন জনেই খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম, তবুও এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকতে হতো স্লোগান দেয়ার জন্য। গাড়ি বারান্দায় থেকে বক্তব্য প্রদানের অন্যতম কারণ ছিল জমায়েতটি বড় হওয়ার ভাবনা। এমনিতে বটতলায় যত লোক ছিল তেমনি করে কলা ভবনের সকল ফ্লোরের বারান্দায়ও প্রচুর লোক ছিল। আমাদের যেসব সমর্থক সরাসরি মিছিলে আসতেন না তাদের জায়গা ছিল বারান্দাগুলো। শহরের নানা প্রান্ত থেকে ছাত্রদের মিছিলের পর মিছিল আসছিল। আমরা তখন জানতাম, সবচেয়ে বড় মিছিলটা আসবে জগন্নাথ কলেজ থেকে। সেটাই হয়েছিল এবং তারাই তৈরি করেছিল পতাকার নতুন ইতিহাস। সেই নজরুলের কথা বাংলাদেশের কারও ভুলে যাওয়া উচিত নয়। মনে আছে, ১ মার্চের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা প্রতি মুহূর্তে বদলাতে থাকে। ১ মার্চে আমরা যেমন করে জিন্নাহ হলের নাম বদলাই তেমন করে ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ও ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের বন্দুক লুট করি। সেদিনই ছাত্রলীগের একক নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়Ñ ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক এবং ডাকসুর ভিপি ও জিএসকে নিয়ে। ওরা ছিলেন নুরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, আসম আবদুর রব ও আবদুল কুদ্দুস মাখন। এদের মধ্যে শাজাহান সিরাজ ও আসম আবদুর রব ছিলেন স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশপন্থী সিরাজ গ্রুপের সদস্য। অন্য দু’জন ছিলেন শেখ ফজলুল হক মণির শিষ্য। ছাত্রলীগে তখন এমনটাই হতো। দুটি ওপেন সিক্রেট গ্রুপের মাঝে প্রধান পদগুলো ভাগাভাগি হতো। যদিও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি, জেলা কমিটি ও কলেজ ছাত্র সংসদসমূহে সিরাজপন্থীদেরই একতরফা প্রাধান্য ছিল। রাজপথও দখলে ছিল আমাদের। ২ মার্চ ৭১ পতাকা উত্তোলন সম্পর্কে মহিউদ্দিন আহমদ তাঁর বইতে লিখেছেন (৩৮ পৃষ্ঠা); “২ মার্চ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের বটতলায় এক ছাত্র জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়। যেহেতু কোন মঞ্চ তৈরি করা হয়নি কলাভবনের পশ্চিম দিকে গাড়ি বারান্দার ছাদের ওপর ছাত্রলীগের প্রধান নেতারা সবাই দাঁড়ালেন। সংখ্যায় তারা ১০/১২ জন হবেন। মুহুর্মুহু সেøাগান চলছে বীর বাঙালী অস্ত্র ধর/ বাংলাদেশ স্বাধীন কর। এমন সময় জগন্নাথ কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি মিছিল এলো। তাদের হাতে একটি পতাকা। এটা সেই রকম পতাকা যা সত্তরের ৬ জুন রাতে তৈরি করা হয়েছিল। ১ মার্চ রাতে ইকবাল হলের ২১৫ নম্বর কক্ষে নতুন এই পতাকাটি বানানো হয়। এই কক্ষটি ছিল চিশতী শাহ হেলালুর রহমানের। বাঁশের মাথায় বাঁধা পতাকাটি উঁচু করে ধরে আসম আবদুর রবের হাতে দেয়া হলো। রব বাঁশটা ধরে কয়েকবার ডানে বাঁয়ে ঘোরালেন। তারপর বললেন এটা স্বাধীন বাংলার পতাকা। তারপর পতাকাটা হাতে হাতে ঘুরল।” মহিউদ্দিন যে বিবরণ দিয়েছেন তার সঙ্গে এটি উল্লেখ করা প্রয়োজন ছিল যে, চিশতী শাহ হেলালুর রহমান দৈনিক আজাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ছিল। বাবরি চুলওয়ালা চিশতী একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে ইকবাল হলে শহীদ হন। পাকিস্তানী সেনারা তাকে গুলি করে হত্যা করে। বটতলার সমাবেশে স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের পক্ষে সেøাগান যারা দিয়েছিলাম তাদের মাঝে চিশতীও ছিল। বরং এটি বলা উচিত যে চিশতী স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনের অগ্রসেনানি ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজকে তাকে স্মরণ করা হয় না। পতাকা বানানোর ক্ষেত্রে আমরা যাদের নামই দেখি না কেন চিশতীকে ছাড়া সেই সময়ে সিরাজপন্থীদের সংগঠিত হওয়ার কথা ভাবাই যেত না। রাজপথের লড়াকু এই সৈনিকের প্রতি আমার পরম শ্রদ্ধা। খুশি হতাম যদি রাষ্ট্র এমন একজন মানুষকে সম্মানিত করত। আমাদের সেই পতাকা যে পাকিস্তানকে কেমন করে কাঁপিয়ে দিয়েছিল তার বিবরণ রাও ফরমান আলীর বইতে পাওয়া যায়। তিনি তাঁর বইতে (বাংলা অনুবাদের ৬০-৬১ পৃষ্ঠায়) লিখেছেন, ২ মার্চের সকাল এসেছিল জঙ্গী ছাত্র ও শ্রমিকদের তৎপরতার মধ্য দিয়ে। ঢাকা নগরীর রাজপথের বিভিন্ন স্থানে তারা প্রতিবন্ধক তৈরি করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলকে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল এবং জিন্নাহ হলকে সূর্যসেন হল নামকরণ করা হয়। জাতীয় পতাকা ও কায়েদে আজমের ছবি পোড়ানো হয়। স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ানো হয় এবং তারই অনুসরণে সচিবালয় ও হাইকোর্টসহ অন্য অনেক সরকারি ভবন থেকে জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলা হয়। বলাবাহুল্য ফরমান আলী জাতীয় পতাকা বলতে পাকিস্তানের পতাকাকেই বুঝিয়েছেন। তিনি তার বইতে ২৩ মার্চের কথাও লিখেছেন। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার জাতীয় হয়ে ওঠার একটি কাহিনী রয়েছে। সেটি ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চের ঘটনা। ঘটনাচক্রে আমি সেদিন ঢাকায় ছিলাম না। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ শুনেই আমি গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। আমার ওপরে নির্দেশ ছিল গ্রামে গিয়ে কাজ করার। সেদিন পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবস ছিল। ঐদিনে বাংলাদেশের বাঙালীরা পুরো দেশে জয় বাংলার পতাকা উত্তোলন করে। ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে বঙ্গবন্ধু এই পতাকাকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করেন। তিনি তাঁর গাড়িতেও জয় বাংলার পতাকা ব্যবহার করেন। ২৩ মার্চ ১৯৭১ সম্পর্কে রাও ফরমান আলী লিখেছেন, (পৃষ্ঠা ৭৬) “২৩ মার্চ ছিল শেখ মুজিবের আন্দোলনের সর্বোচ্চ পর্যায়। এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক দিন। পাকিস্তান দিনটিকে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে উদযাপন করত। শেখ মুজিব দিনটিকে লাহোর প্রস্তাব দিবস হিসেবে উদযাপন করেছিলেন।” রাও ফরমান আলী তাঁর বইতে দিনটির বিবরণ প্রদান করতে গিয়ে আরও বলেন, সে ছিল এক চূড়ান্ত দিন যেদিন শেখ মুজিব তাঁর বাসভবনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বাস্তবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের প্রদেশে কেবল সেনানিবাসগুলোর ভেতরে পাকিস্তানের পতাকা দেখা গিয়েছিল। শেখ মুজিব তাঁর বাসভবনের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার অনুসারীর সামনে বাংলাদেশের পতাকাকে সম্মান দেখিয়েছিলেন, তাঁর অনুসারীরা তখন বাংলাদেশের সমর্থনে সেøাগান দিচ্ছিল। ২৩ মার্চ নিজের গাড়ির ওপর বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে শেখ মুজিব প্রেসিডেন্ট হাউসে এসেছিলেন।” যাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে নানা তর্ক করেন তাঁদের উচিত রাও ফরমান আলীর মতো পাকিস্তানীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে পাঠ করা। বস্তুত পক্ষে ৭ মার্চের পরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার কিছুই বাকি ছিল না। ২৩ মার্চের পর কি ছিল বাকি? বাংলাদেশের পতাকা যেটি সেই সময়ে জনগণের কাছে জয় বাংলার পতাকা নামেই বেশি পরিচিত সেটির বিবর্তনটাও এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন। পতাকার মানচিত্রটি সোনালি রঙে জন্ম নিলেও মুক্তিযুদ্ধকালে সেটি হলুদ রঙে পরিণত হয়। এর একটি প্রধান কারণ হচ্ছে দেশের সবখানে সোনালি কাপড় পাওয়া যেত না। দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে মানুষ জানত না যে, এই রংটি সোনালি হবে। আরও একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে মুক্তাঞ্চলে এই জয় বাংলার পতাকাই উড়েছে। অন্তত আমার অভিজ্ঞতায় তাই আছে। আমাদের দেশে একটু বড় গোছের নৌকায় জাতীয় পতাকা উড়ানোর প্রথা আছে। ৭১ সালে এই নৌকাগুলো ভৈরব বাজার পর্যন্ত পাকিস্তানী পতাকা উড়াত আর ভৈরব থেকে নৌকাটা ছেড়েই জয় বাংলার পতাকা উড়িয়ে দিত। এর কারণ ছিল ভৈরব সেতুর উজানের পুরো এলাকাটিই মুক্তাঞ্চল ছিল। জাতীয় সঙ্গীত বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বাছাই করার বিষয়ে মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন, “২ মার্চ ১৯৭১ বিকেলে সিরাজুল আলম খান ইকবাল হলের ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীকে নিয়ে বসলেন। কিছু কিছু বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার ছিল। তিনি কিছু একটা বলছেন আর কেউ একজন নোট নিচ্ছেন। তিনি বললেন, জাতীয় পতাকা কেমন হবে? কয়েকজন বলল, আজ বটতলায় যেটা তোলা হয়েছে, সেটাই হোক। জাতীয় সঙ্গীতের প্রসঙ্গ উঠতেই দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ গানটির প্রস্তাব এলো। কিন্তু এর দুটো সমস্যা ছিল। প্রথমত, গানটির কোথাও ‘বাংলা’ বা ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি নেই। দ্বিতীয়ত, গানটির কোন রেকর্ড পাওয়া যায় না। শেষমেশ প্রস্তাব করা হলো, রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত করা হোক। সিরাজুল আলম খান মাথা নাড়লেন। একজন সঙ্গে সঙ্গে নোট নিল। এরপর এলো ‘জাতির পিতা’ প্রসঙ্গ। অনেকেই আপত্তি জানিয়ে বললেন, এটা একটি পাকিস্তান-মার্কা প্রস্তাব। জাতি থাকলেই তার একটা পিতা থাকতে হবে নাকি? যেমন আছেন জিন্নাহ সাহেব? সুতরাং ‘জাতির পিতা’ প্রসঙ্গ বাদ পড়ল। আলোচনা হলো জাতীয় নেতা নিয়ে। সিদ্ধান্ত হলো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হবেন স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের ‘সর্বাধিনায়ক’। সিরাজুল আলম খান আরও কিছু নির্দেশনা দিলেন। যাঁরা নোট নিচ্ছিলেন, তাঁরা আরও দু-চারটা বাক্য জুড়ে দিচ্ছিলেন। পরে ইকবাল হলের ৩১৩ নম্বর কক্ষে এক পৃষ্ঠার একটি প্রাথমিক খসড়া তৈরি করেন রায়হান ফেরদৌস মধু। ডাকসুর সহ-সভাপতি আসম আবদুর রব এই কক্ষে থাকতেন। মধু যখন লেখাটির খসড়া তৈরি করেন, তখন সেখানে সিরাজুল আলম খান ও শেখ ফজলুল হক মনি উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যার পর নীলক্ষেতে আনোয়ার রেস্টুরেন্টে খসড়াটি পরিমার্জন করে একটা প্রচারপত্রের আকার দেয়া হয়। কাজটি করেন রায়হান ফেরদৌস মধু ও মহিউদ্দিন আহমদ। রাতেই তা ছাপিয়ে ফেলা হয়। এর শিরোনাম ছিল ‘জয় বাংলা- ইশতেহার নং এক’।” মহিউদ্দিন আহমেদের বিবরণে তেমন কোন অসত্য নেই। (সমাপ্ত) ঢাকা, ৩ এপ্রিল, ২০১৫ লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যারের জনক ॥ ই-মেইল : [email protected], ওয়েবপেজ: www.bijoyekushe.net,ww w.bijoydigital.com
×