ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আবারও যাত্রীবাহী ট্রলারডুবি

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ৫ এপ্রিল ২০১৫

আবারও যাত্রীবাহী ট্রলারডুবি

আবারও ট্রলারডুবি, প্রাণহানি ও যাত্রী নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। অকালে ঝরে গেছে বেশ কয়েকজনের প্রাণ। চাঁদপুরের মতলব উত্তরের বেলতলীর লেংটার মেলা থেকে ফেরার পথে বৃহস্পতিবার বুড়িগঙ্গা নদীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় বালুবাহী নৌকার ধাক্কায় এক ট্রলারডুবির ঘটনায় ১৬ জন প্রাণ হারিয়েছে। অন্যদিকে বুধবার মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় মেঘনা নদীতে আরেক ট্রলারডুবিতে শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। একই দিন ভোলার চরফ্যাশনে ২৪ জেলেসহ মেঘনা নদীতে ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। অবশ্য চরফ্যাশনের ঘটনায় লাইফ জ্যাকেটের সহায়তায় সবাই কয়েক ঘণ্টা পর একটি চরে পৌঁছতে সক্ষম হয়। অন্য দুটি ট্রলারডুবির ঘটনায় এখনও নিখেঁাঁজ রয়েছেন কয়েকজন। গত ২২ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় লঞ্চ ডুবে ৭০ জনের প্রাণহানির পর এ ঘটনাগুলো ঘটল। লঞ্চ বা ট্রলার দুর্ঘটনা আমাদের দেশে নতুন নয়। প্রায় প্রতিবছরই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। বড় কোন দুর্ঘটনা হলেই কর্তৃপক্ষের মধ্যে নড়াচড়া শুরু হয়, পরে তা একসময় থেমে যায়। কোন কোন দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন করা সম্ভব হলেও দায়ী কেউ শাস্তি পেয়েছে এমন দৃষ্টান্ত খুব একটা নেই। এরপর আবারও দুর্ঘটনা বাড়ে, বাড়ে মৃত্যুর মিছিলও। বিভিন্ন তথ্যে জানা যায়, গত দুই দশকের ১৯৯৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে ৬৫৮টি লঞ্চ দুর্ঘটনায় মারা গেছেন প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার লোক। এসব দুর্ঘটনায় নিখোঁজ প্রায় দেড় হাজার লোক। এসব দুর্ঘটনায় নিশ্চিহ্ন হয়েছে ৩৯৩টি পরিবার। একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যকে হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছে ৬৫৬টি পরিবার। আরেক পরিসংখ্যান মতে, দেশ স্বাধীনের পর এ পর্যন্ত ২০ হাজার দুর্ঘটনায় ১০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে কিন্তু এখনও তেমন অগ্রগতি নেই নৌ-নিরাপত্তায়! তথ্যানুযায়ী বিভিন্ন সময়ে এসব দুর্ঘটনার পর উচ্চপর্যায়ের পাঁচ শতাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু সব ঘটনার বেশির ভাগেরই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি। হাতেগোনা কয়েকটি জমা পড়লেও তা আলোর মুখ দেখেনি। তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নানা ধরনের সুপারিশের কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়েছে খুবই কম। এসব কমিটির মতে, লঞ্চ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী নৌযানের ত্রুটিপূর্ণ নক্সা প্রণয়ন, অদক্ষ চালক, অতিরিক্ত যাত্রী ও পণ্যবোঝাই এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস না মানা- এসব অভিযোগ তোলা হলেও কার্যত কোন একটির বিরুদ্ধেও যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। দেশের যোগাযোগ, যাতায়াত ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বড় একটা মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষেত্রে। জলপথে যাতায়াত ব্যবস্থা এখন উন্নত হলেও এক্ষেত্রে সার্বিক ব্যবস্থা খুব উন্নত, তা বলা যাবে না। নৌপথে বড় জাহাজ ছাড়াও ছোট ছোট ট্রলার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল করে। জানা গেছে, দেশে চলাচলকারী লঞ্চ, ট্রলারসহ যাত্রীবাহী নৌযানের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। এসবের বেশিরভাগই নৌপথের চলাচলের জন্য উপযোগী নয়। বহু ক্ষেত্রেই নিয়ম-নীতি মানা হয় না। অধিক মাল ও যাত্রী তোলা নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়। এসব অনিয়ম যেন দেখার কেউ নেই। যথাযথ তদারকি এবং আইনবিধি পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত না হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে না। এই নৌ-দুর্ঘটনার পর আবারও বোঝা গেল যথাযথ তদারকির অভাবটি। কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে বছরের পর বছর নৌপথে বিদ্যমান এ অনিয়মের দায় সাধারণ মানুষকে জীবনের বিনিময়ে শোধ করতে হচ্ছে। নৌপথে ট্রলারডুবির মতো অসহায়ভাবে আর কোনো মানুষকে যাতে জীবন দিতে না হয়, তার জন্য এখনই ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। নৌপথের যাত্রা নির্বিঘœ করতে হবে। অগণিত মানুষের নিরাপদ যাতায়াত ও সুষ্ঠু ব্যবসা-বাণিজ্য অব্যাহত রাখতে নৌপথের দিকে নজর দিতে হবে জরুরী ভিত্তিতে।
×