ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

একাত্তরের এই দিনে লালমনিরহাটে শহীদ হন ৪ শতাধিক

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৪ এপ্রিল ২০১৫

একাত্তরের এই দিনে লালমনিরহাটে শহীদ হন ৪ শতাধিক

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ৩ এপ্রিল ॥ একাত্তরের ৪ এপ্রিল সকালে লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিম পাশে রিক্সাস্ট্যান্ডে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকিস্তানী সেনা, রাজাকার ও অবাঙালীরা। ডিআরএম অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ট্রেনযাত্রী, হকার, অর্থাৎ যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই ধরে এনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে পাখির মতো গুলি করেছে। পরে জানা যায়, ওখানে সেদিন চারশতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়। হত্যাযজ্ঞ শেষে লাশ টেনে হিঁচড়ে রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজারের অফিসের পাশে জলমগ্ন জঙ্গলে ভরা খালে ফেলে দেয়া হয়। পরে লাশের ওপরে দেয়া হয় মাটিচাপা। বিভীষিকাময় এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এখনো কয়েকজন বেঁচে আছেন। তাঁদের একজন আকতার হোসেন জানান, অবাঙালী কালুয়া, রশিদ কসাই, নিয়াইচুঙ্গি ময়েজ উদ্দিন, কুখ্যাত রাজাকার মহির এই হত্যাযজ্ঞের নেতৃত্ব দিয়েছিল। পাকিস্তানী মেজর সামুদ্দর হক দাঁড়িয়ে থেকে এই হত্যাযজ্ঞ শেষ করে। স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের বিচার হয়নি। আকতার হোসেন জানান, তাঁকেও হানাদার ও তাদের দোসররা গুলি করেছিল। গুলি তাঁর পায়ে লাগে। সে সময় পানি পানি করলে হানাদাররা মুখে প্রস্রাব করে দেয়। মরে গেছে ভেবে তাঁকেও খালে ফেলে মাটি চাপা দেয়া হয়েছিল। এক সুইপার তাঁকে বাঁচায়। মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত রেলওয়ে কর্মী আব্দুস ছালাম জানান, ৪ এপ্রিল সংঘটিত গণহত্যায় শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা আজও তৈরি হয়নি। ৮৩ শহীদের নাম রেলওয়ের শহীদ মিনারে (মুক্তমঞ্চে) খোদাই করা আছে। রেলওয়ে কর্মচারী জাফর ইসলাম জানান, তাঁর মা রেলওয়ে হাসপাতালের নার্স ছিলেন। লতিফা সিস্টার নামে তিনি বিশেষ পরিচিত। একইদিনে রেলস্টেশনের হত্যাযজ্ঞ শেষে পাকিস্তানী হানাদাররা রেলওয়ে হাসপাতাল চত্বরে আসে। সেখানে মায়ের সামনে তাঁর কিশোর দু’ভাই লুটু ও টুটুকে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে হত্যা করে। দুই ভাই সেই সময় লালমনিরহাট সরকারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম ও ৯ম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। জীবন বাঁচাতে মায়ের আঁচলে তারা মুখ লুকিয়েছিল। সেখান থেকে টেনে নিয়ে এসে হানাদাররা তাদের গুলি করে।
×