ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইরানের সঙ্গে চুক্তি ব্যর্থ করে দেয়া হলে সংঘাত বাড়বে ॥ ওবামা

কঠিন হবে ॥ কংগ্রেসকে রাজি করানো

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ৪ এপ্রিল ২০১৫

কঠিন হবে ॥ কংগ্রেসকে রাজি করানো

ইরানের পরমাণু কর্মসূচী প্রশ্নে দীর্ঘ ও কঠিন দর কষাকষির পর আশার আলো দৃশ্যমান হলেও ওবামা প্রশাসনকে এখন অবশ্যই কংগ্রেসের সম্ভবত আরও শক্তিশালী প্রতিপক্ষ এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলসহ সংশয়বাদী মিত্রদের সম্পাদিত চুক্তিতে সম্মত করাতে হবে। বৃহস্পবিার কাঠামো চুক্তি ঘোষণার পরপরই প্রেসিডেন্ট ওবামা সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান এবং ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে টেলিফোন করে ওই প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তিনি উপসাগরীয় দেশগুলোর নেতৃবৃন্দকে এই বসন্তে ক্যাম্প ডেভিডে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এখন জুনে চূড়ান্ত সময়সীমার আগেভাগেই চুক্তির খুঁটিনাটি বিষয়গুলো প্রস্তুত করা হচ্ছে। ওবামা কংগ্রেস নেতাদের একের পর এক টেলিফোন কলও করেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন যে, আইনপ্রণেতারা যাতে একটি ‘গঠনমূলক নিরীক্ষকের’ ভূমিকা পালন করতে পারে তাঁর প্রশাসন সে ব্যাপারে কাজ করবে। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট ও বিবিসির। কংগ্রেসের বেশিরভাগ আইনপ্রণেতা কাঠামোচুক্তি ঘোষণার ব্যাপারে সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সিনেট পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান টেনেসির রিপাবলিকান দলীয় সদস্য বব কর্কার বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো চুক্তির সুনির্দিষ্ট খুঁটিনাটি দেখার জন্য অপেক্ষা করা।’ তবে তিনি এখনও আশা করছেন ইস্টার অবকাশের পর কংগ্রেসের অধিবেশন আবার শুরু হলে তিনি প্রস্তাবটি কমিটিতে উত্থাপন করবেন। সুইজারল্যান্ডের লুজানে বৃহস্পতিবার ছয় প্রধান শক্তির সঙ্গে দুরূহ ও দীর্ঘস্থায়ী আলোচনা শেষে ইরানের পরমাণু কর্মসূচীর ভবিষ্যৎ প্রশ্নে একটি রূপরেখা চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। চুক্তির অধীনে ইরান ধাপে ধাপে পশ্চিাম নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিনিময়ে তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা হ্রাস করবে। প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছেন, ইরানের সঙ্গে একটি ‘ঐতিহাসিক সমঝোতায়’ পৌঁছানো গেছে। বিশ্ব শক্তিসমূহ এবং ইরানকে এখন ৩০ জুনের মধ্যে একটি ব্যাপকভিত্তিক পরমাণু চুক্তির খসড়া প্রণয়নের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। ৮ দিনব্যাপী আলোচনা শেষে এই কাঠামো চুক্তির কথা ঘাষণা করা হয়। লুজানের বিউ-রিভেজ প্যালেস হোটেলে ৩১ মার্চের স্ব-আরোপিত মূল সময়সীমা উত্তীর্ণের পরেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া এবং জার্মানির সঙ্গে ইরানের আলোচনা অব্যাহত থাকে। কাঠামো চুক্তির পর ইইউ’র শীর্ষ কূটনীতিক ফেদেরিকা যোথেরিনি প্রধান প্রধান বিষয় তুলে ধরে একটি যুক্ত বিবৃতি পড়ে শোনান। এর মধ্যে আছে ইরানের চালু সেন্টিফিউজের সংখ্যা হ্রাস, পরমাণু স্থাপনাসমূহ পরিবর্তন এবং এসব পদক্ষেপ যাচাই সাপেক্ষে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার প্রতিশ্রুতি। আলোচনা শেষে যুক্তরাষ্ট্র যে তথ্যবিবরণী প্রকাশ করেছে তাতে এসব শর্ত রাখা হয়েছে : ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ব্যবহৃত তার স্থাপিত সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ হ্রাস করবে এবং তার নিম্নমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত হ্রাস করবে। যে সব সেন্ট্রিফিউজ আর ব্যবহৃত হয় না সেগুলোকে গুদামজাত করা হবে, যা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) নজরদারি করবে। ইরানের সকল পরমাণু স্থাপনা আইএইএ’র নিয়মিত পরিদর্শনের আওতায় আসবে। ইরান আরাকে তার হেভি-ওয়াটার চুল্লি নতুন করে নকশা করবে যাতে সেগুলো পরমাণু অস্ত্র নির্মাণক্ষম প্লুটোনিয়াম উৎপাদন করতে না পারে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচী সম্পর্কিত যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হবে, তবে ইরান তার দায়িত্ব পালন না করলে সেগুলো আবার আরোপ করা যাবে। ওবামা বলেছেন, চুক্তির বাস্তবায়ন ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। তিনি বলেন, ইরান প্রতারণা করলে বিশ্ব তা জানতে পারবে। চুক্তি শুধু বিশ্বাসের ওপর করা হয়নি বরং নজিরবিহীন সত্যতা যাচাইয়ের ভিত্তিতে করা হয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, ‘আমরা অতীত পারস্পরিক অবিশ্বাস গড়ে তুলেছি। আমি আশা করি কিছু কিছু অবিশ্বাস দূর করা যাবে।’ প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, ‘কয়েকমাসব্যাপী কঠিন কূটনীতির মাধ্যমে এই কাঠামো চুক্তি এসেছে এবং এটি একটি ভালো চুক্তি।’ তিনি বলেন, ‘কংগ্রেস যদি বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণের বিচারে না গিয়ে এবং কোন যৌক্তিক বিকল্প ছাড়াই এই চুক্তি ব্যর্থ করে দেয় তবে কূটনীতির ব্যর্থতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেই দোষারোপ করা হবে।’ ‘আন্তর্জাতিক ঐক্য; ভেঙ্গে পড়বে এবং সংঘাতের পথ আরও বিস্তৃত হবে।’ এদিকে, ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে টেলিফোন সংলাপে কাঠামো পরমাণু চুক্তির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি এর মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে তার ঘনিষ্ঠতম মিত্রদের সঙ্গে সংঘাতের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওবামাকে দোষারোপ করেন। নেতানিয়াহু বলেন, তিনি এই রূপরেখার প্রতি তাঁর ‘জোরালো বিরোধিতা’ ব্যক্ত করছেন। তিনি বলেন, এই কাঠামোর আওতায় যে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে তা ‘ইসরাইলের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলবে।’
×