ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিরাপদ খাদ্য, পানির অভাবে বছরে মারা যায় ২২ লাখ শিশু

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৪ এপ্রিল ২০১৫

নিরাপদ খাদ্য, পানির অভাবে বছরে মারা যায় ২২ লাখ শিশু

নিখিল মানখিন ॥ নিরাপদ খাদ্য ও পানির অভাবে দক্ষিণ ও পূর্ব-দক্ষিণ এশিয়ায় বছরে ৭ লাখ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুর মৃত্যু ঘটে আর বিশ্বে মারা যায় ২২ লাখ শিশু। নিরাপদ খাদ্য ও পানির নিশ্চয়তা বাড়াতে না পারলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা খুব দ্রুত বেড়ে দ্বিগুণ হবে। আগামী ৭ এপ্রিল পালিত হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়েছে। আর গত তিন বছরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মোট রোগীর মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ বুলেটিনেও প্রকাশ পেয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মানুষের বেঁচে থাকার গুরুত্বপূর্ণ দুটি উপাদান হলো খাদ্য ও পানি। দুটি উপাদান অনিরাপদ হয়ে পড়লে মানুষের পক্ষে সুস্থ জীবন বজায় রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই উৎপন্নস্থল থেকে মুখে যাওয়ার আগ পর্যন্ত খাদ্য ও পানি নিরাপদ রাখতেই হবে। এ উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় সামনে অপেক্ষা করছে ভয়াবহ মুহূর্ত। তাই খাদ্য ও পানি নিরাপদ রাখতে কাজ করা সকলের পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য। দ্রুত নগরায়নের ফলে রাস্তাঘাটে প্রচুর পরিমাণে অনিরাপদ খাদ্য তৈরি ও বিক্রি হওয়ায় বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে। নিরাপদ খাবারের জন্য আইন থাকলেও একটি দেশের অবকাঠামো, সুযোগ-সুবিধা ও অভিজ্ঞ জনবলের অভাবে খাবার মনিটর করার জন্য নিয়ন্ত্রক কাঠামো খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। নিরাপদ খাবার বলতে জীবাণু ও পরজীবীদুষ্ট নয় এমন খাবারকেই বোঝানো হয়ে থাকে। এখানে থাকবে না কোন ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য এবং যা প্রাকৃতিকভাবে তৈরি বিষ থেকে মুক্ত থাকবে। তবে অবশ্যই সে খাবারটি হতে হবে প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। খাদ্যজাত অসুস্থতার প্রকোপের জন্য প্রধানত দায়ী কিন্তু রোগজীবাণুই। শস্য জন্মানো, আহরণকালীন অবস্থা, প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্যাকেজিং, খাদ্য সংরক্ষণ, সরবরাহ এবং খাদ্য গ্রহণের আগে খাবার তৈরি ও পরিবেশনের প্রক্রিয়ার মধ্যে সর্বত্রই খাদ্যের মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এর যে কোন পর্যায়েই খাদ্যের মানের অবনতি ঘটতে পারে, যদি না সে ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়। অনেক ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ কোন না কোনভাবে খাদ্যচক্র বা পানির মাধ্যমে আমাদের দেহে আসছে এবং মানুষ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগের শিকার হচ্ছে। ইদানীং ফল, শাকসবজি, মাছ ও দুধে ফরমালিনভীতি সর্বস্তরের মানুষকে একটি অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলেছে। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে অভিজাত চেন স্টোর, মুদি দোকান, সুপার মার্কেট- যেখানেই ক্রেতা-ভোক্তারা যাক না কেন, সন্দেহটি তাদের মনে থেকেই যাচ্ছে। খাদ্যসামগ্রী গুদামজাত করতে বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়াজাত ও গুদামজাত করতে ডিডিটি ও অন্যান্য কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। বলা হয়ে থাকে, এর বিষাক্ত উপাদানগুলো গরম পানিতে ধোয়ার পরও প্রচুর পরিমাণে থেকে যাচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতে ডিডিটির ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও বাংলাদেশে এর ব্যবহার এখনও রয়েছে। শরীরের জন্য ক্ষতিকর যে কোন উপাদানেরই অনেকের স্বল্পমেয়াদী ও অনেকের দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়া আছে। খাদ্যে বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটলে একসঙ্গে বেশকিছু লোক অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, কিছু লোক মারাও যেতে পারে। ক্ষতিকারক যে কোন উপাদানের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের ভয়াবহতা অনেক বেশি। অজ্ঞাতসারে সে ক্ষতি করে দিতে পারে একটি গর্ভস্থ শিশু থেকে শুরু করে জনগোষ্ঠীর একটি অংশ বা একটি প্রজন্ম কিংবা তার পরবর্তী প্রজন্মকেও বলে তথ্য দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিনি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ জানান, ভেজাল খাদ্য স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ভোক্তারা আক্রান্ত হয় লিভার, কিডনি, হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে।
×