ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইয়েমেনে আটকেপড়া বাংলাদেশীরা উদ্বেগ উৎকণ্ঠায়

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ৪ এপ্রিল ২০১৫

ইয়েমেনে আটকেপড়া বাংলাদেশীরা উদ্বেগ  উৎকণ্ঠায়

ফিরোজ মান্না ॥ ইয়েমেন গৃহযুদ্ধে বাংলাদেশী নাগরিকরা চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিনরাত কাটাচ্ছেন। আটকেপড়া বাংলাদেশী নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া বা দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম, ভারত ও সৌদি আরবের সাহায্য চেয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের উদ্ধারের কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কোন কোন এলাকায় টেলিফোন ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। চারদিকে ভারি গুলি ও বোমার শব্দে আতঙ্কগ্রস্ত নাগরিকরা দূতাবাস ও আত্মীয়স্বজন কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। অন্যান্য দেশের নাগরিকদের ইতোমধ্যে সরিয়ে নেয়ার ফলে বাংলাদেশী নাগরিকদের মধ্যে ভয়ভীতি আরও প্রবল হয়ে উঠেছে। কুয়েতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের হেল্প লাইনেও বেশিরভাগ নাগরিক যোগাযোগ করতে পারেননি। সৌদি জোট হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আকাশ ও স্থলে অভিযান শুরু করার পর থেকে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। শুরুর দিকে অভিযানের তীব্রতা কম থাকায় বাংলাদেশী কর্মীরা দেশে ফেরার বা অন্য কোন নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করেনি। এখন পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে চলে গেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশী নাগরিকদের উদ্ধারের কাজ কঠিন হয়ে পড়েছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বলেন, ইয়েমেন পরিস্থিতি মন্ত্রণালয় প্রতিনিয়ত মনিটর করছে। ইতোমধ্যে আইওএম, ভারত ও সৌদি আরবের কাছে বাংলাদেশী নাগরিকদের উদ্ধারের জন্য সাহায্য চাওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে উদ্ধার অভিযান চালাবে বলে আইওএম, ভারত ও সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ইয়েমেন থেকে দেশে ফিরতে চান এমন কয়েকজন বাংলাদেশী নাগরিক ফোনে জানিয়েছেন, তারা চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সৌদি, ওমান, কুয়েতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা যেন সব সময় ইয়েমেনে বসবাসকারী বাংলাদেশী নাগরিকদের খোঁজ খবর রাখেন। আইওএম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখন যে পরিস্থিতি তাতে সেখান থেকে কাউকে ফেরত আনাটাও কঠিন। বিদ্রোহীদের দমন করতে সৌদি আরবের নেতৃত্বে বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। হুতি বিদ্রোহীরা কিছুটা পিছু হটতে শুরু করলেই বাংলাদেশী নাগরিকদের সরিয়ে আনা হবে। হুতি বিদ্রোহীরা চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সর্বক্ষনিক ইয়েমেন পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। জানা গেছে, ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ বেশ কয়েকটি বড় শহরে ব্যাপকহারে বোমাবাজি ও বিমান হামলা শুরুর পর থেকেই দেশটিতে বিদেশী কর্মী কাজ করতে পারছেন না। তারা যে যেখানে ছিলেন সেখানেই অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। দেশটিতে বাংলাদেশের ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার লোক কাজ করেন। অবরুদ্ধ এই কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে কিনা তা এখন পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করে কোন কিছুই বলেনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ইয়েমেনে বাংলাদেশের কোন দূতাবাস না থাকায় দেশটিতে কুয়েতের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতি বুঝে সেখান থেকে বাংলাদেশী কর্মীদের সরিয়ে নেয়া হবে। কুয়েতের রাষ্ট্রদূত আসাব উদ্দিন ইয়েমেন পরিস্থিতির ওপর রজর রাখছেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হযেছে। ইয়েমেনে বাংলাদেশী কর্মীদের অবস্থা সম্পর্কে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব খন্দকার ইফতেখার হায়দারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের বেশ কিছু কর্মী দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরেই বসবাস করে আসছেন। তাদের যতটা না অসুবিধা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি অসুবিধা হচ্ছে নতুন কর্মীদের। এমন ৬ হাজারের বেশি কর্মী সেখানে অবরুদ্ধ জীবনযাপন করছেন। ইয়েমেন থেকে মোস্তফা নামের এক কর্মী টেলিফোনে জানান, এখানকার পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। পাকিস্তান ও ভারতের নাগরিকদের এমন পরিস্থিতিতে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ইউরোপসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকদের আগেই সরিয়ে নেয়া হয়। বাংলাদেশী অনেক কর্মী অবশ্য পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার দিকে খেয়াল রাখছেন। দ্রুত পরিস্থিতি শান্ত হলে তারা থেকেই যেতে চান। আবার অনেকে দেশে ফিরে যেতে চাইছেন। কিন্তু ইয়েমেনে বাংলাদেশের কোন দূতাবাস বা কনসুলার অফিস থাকলেও সেখানে গিয়ে আশ্রয় নেয়া যেত। শুক্রবার সকালে ইয়েমেন থেকে একজন বাংলাদেশী নাগরিক টেলিফোন করে শুধু জানাতে পেরেছেন আমরা ভাল নেই, দ্রুত সরকার ব্যবস্থা না নিলে মহাবিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হবে। এই কথা বলতে গিযে দুই দফা তার ফোন কেটে যায়। তিনি একটি হোটেলে আশ্রয় নিয়ে আছেন। পরে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ শুক্রবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইয়েমেনে আটকেপড়া বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার তৎপরতা শুরু করেছে সরকার। এ জন্য আটকে পড়াদের স্বজনদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আটকেপড়াদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া সমন্বয়ের জন্য ঢাকায় দুটি হটলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গেও ফোনে বা ই-মেইলে যোগাযোগ করা যাবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কুয়েত দূতাবাসের কাউন্সিলর এসএম মাহবুবুল আলমের সঙ্গে +৯৬৫৯৯৫৭৪২০৩ নম্বরে এবং সধযনঁন৫০[email protected] ই-মেইল, ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার এ্যান্ড ওয়েলফেয়ার উইংয়ের মহাপরিচালক লুৎফুর রহমানের সঙ্গে ০০৮৮-০১৭২৬২৬০৯৬৭ নম্বরে এবং [email protected] ই-মেইল ঠিকানায় এবং এমআরপি এ্যান্ড কনস্যুলার পরিচালক বিএম জামাল হোসেনকে ০০৮৮-০১৭১১৩৮০৩৭৪ নম্বরে এবং [email protected] ই-মেইল ঠিকানায় যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
×