ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাস্তবতার সঙ্গে ঘোষণার মিল খুঁজে পাওয়া মুশকিল

চট্টগ্রামে নির্বাচনী ব্যয় মনজুরের ৩০ আর নাছিরের ২৭ লাখ টাকা

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ৪ এপ্রিল ২০১৫

চট্টগ্রামে নির্বাচনী ব্যয় মনজুরের ৩০ আর নাছিরের ২৭ লাখ টাকা

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চসিক নির্বাচনে দুই হেভিওয়েট মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগ সমর্থিত আ জ ম নাছির উদ্দিন ও বিএনপি সমর্থিত মনজুর আলম নির্বাচনী ব্যয়ের যে হিসেব তুলে ধরেছেন সে অনুযায়ী মনজুর আলম নিজস্ব তহবিল থেকে ৩০ লাখ টাকা এবং আ জ ম নাছির উদ্দিন ২৭ লাখ টাকা নিজের আয় থেকে ব্যয় করার কথা উল্লেখ করেছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ ২৮ লাখ টাকা নিজ তহবিল ও অন্যান্য সোর্স থেকে নিয়ে খরচ করবেন বলে জানিয়েছেন। এ তথ্য পাওয়া গেছে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রদত্ত হলফনামার সঙ্গে যুক্ত ফরমে। বিস্তারিত ব্যাখ্যায় মনজুর আলম জানিয়েছেন, তিনি পোস্টার ছাপাবেন ১ লাখ পিস। যাতে ব্যয় হবে ৫ লাখ টাকা। দশটি নির্বাচনী ক্যাম্প অফিসের বিপরীতে ২ লাখ টাকা, কেন্দ্রীয় ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা ও কর্মীদের জন্য মিলে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা, সম্ভাব্য এজেন্টদের জন্য ৫৪ হাজার টাকা, ভেন্যুর সম্ভাব্য ভাড়া ও শ্রমিকদের পারিশ্রমিক হিসেবে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ১ লাখ পিস লিফলেট ছাপানোর বিপরীতে ৩ লাখ টাকা, ২ লাখ হ্যান্ডবিল ছাপানোর বিপরীতে ১ লাখ টাকা, ৫০ হাজার স্টিকারের বিপরীতে ৩ লাখ টাকা, ২শ’ পিস ব্যানার তৈরি ও টাঙ্গানোর বিপরীতে খরচ বাবদ ৮০ হাজার টাকা, ৪শ’ পিস ডিজিটাল ব্যানার তৈরি ও টাঙ্গানোর বিপরীতে ২ লাখ টাকা, ১শ’ পথসভার বিপরীতে ৩০ হাজার টাকা, যানবাহন ভাড়া বাবদ ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ১শ’ প্রোট্রেটের বিপরীতে ৫০ হাজার টাকা, ২শ’ ছবি ও প্রতীকের বিপরীতে ১ লাখ টাকা, আপ্যায়ন খাতে ৩ লাখ টাকা, ৭শ’ কর্মীর বিপরীতে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা, মিডিয়ায় প্রচার বাবদ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং অন্যান্য খাতে ৪০ হাজার টাকা ব্যয় করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। অপরদিকে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন নিজস্ব আয় থেকে ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ের কথা জানিয়েছেন। বিস্তারিত ব্যাখ্যায় তিনি উল্লেখ করেছেন, ৮২ হাজার পোস্টারের বিপরীতে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪শ’ টাকা, তেরোটি নির্বাচনী ক্যাম্পের বিপরীতে ১ লাখ ১০ হাজার ৫শ’ টাকা, ক্যাম্প নির্মাণে ও কর্মীদের খরচে ৫২ হাজার টাকা, এজেন্টদের বিপরীতে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ভেন্যুর ভাড়া ও শ্রমিকদের বিপরীতে ৪৬ হাজার ৫শ’ টাকা, ২ লাখ ৪০ হাজার লিফলেট ও ছবির বিপরীতে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ৩ লাখ হ্যান্ডবিলের বিপরীতে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫০ টাকা, ৬শ’ ডিজিটাল ব্যানারের জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, তিনশ’ পথসভা অনুষ্ঠানে ৯০ হাজার টাকা, যানবাহন ও মাইকিংয়ের ভাড়া বাবদ ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫শ’ টাকা, ৮২ প্রোট্রেট তৈরির বিপরীতে ৮২ হাজার টাকা, ২০৫টি প্রতীকের বিপরীতে ৪১ হাজার টাকা, সম্ভাব্য ১৪ অফিসের জন্য ১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, ১২শ’ কর্মীর বিপরীতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, মিডিয়ায় প্রচার খাতে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, ফটোকপি, স্টেশনারি, বিজ্ঞপ্তি ও অন্যান্য খাতে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ ২৮ লাখ টাকা নির্বাচনে ব্যয় করবেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে, এসব মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয়ের পরিমাণ নিয়ে প্রদত্ত হলফনামা সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা পাচ্ছে না। অতীতের প্রতিটি নির্বাচনে এ ধরনের ব্যয়ের হিসেব দেয়ার সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুঁজে না পাওয়ার কারণে ‘এসব কথার কথা’ বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে বহু আগে। এরপরও নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের কাছ থেকে ব্যয়ের পরিমাণ এবং টাকার উৎস জানানোর বাধ্যবাধকতা রাখায় প্রার্থীরাও যেনতেনভাবে একটি হিসাব মিলিয়ে তা জমা দেন। যা সচেতন যে কোন মানুষের কাছে হাস্যকর। চট্টগ্রামে সাধারণ একটি ধারণা অনুযায়ী বিজয়ের জন্য যে কোন মেয়র প্রার্থীকে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। পক্ষান্তরে কাউন্সিলরদের ক্ষেত্রে বিজয় লাভে ৫০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু প্রার্থীরা এসব ব্যয়ের হিসাব দেখাতে পারেন না নির্বাচন কমিশনের পূর্ব ঘোষণা মানতে গিয়ে। মূল ব্যয়ের সঙ্গে ঘোষণার মিল না থাকলেও এ নিয়ে কখনও কোন মহল বা পক্ষ চ্যালেঞ্জও করেন না। তাই এ নিয়ে কোন প্রার্থীকে ঝামেলাও পোহাতে হয় না। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের ছাপানো ফরমে বিষয়টি উল্লেখ করতে হয় বলে তা মানার জন্যই করা হয়ে থাকে। এ জাতীয় ঘটনা বাস্তবিক অর্থে প্রতারণার শামিল বলে সচেতন মহল মনে কে র।
×