ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যেই মাঠে নামবো’

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৩ এপ্রিল ২০১৫

‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যেই মাঠে নামবো’

রুমেল খান ॥ ২০-২৫ এপ্রিল ২০১৫ এএফসি অনুর্ধ-১৪ গার্লস রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা নেপালের কাঠমা-ুতে অনুষ্ঠিত হবে। ‘সাউথ এ্যান্ড সেন্ট্রাল জোনে’ পড়েছে বাংলাদেশ। গ্রুপ ‘বি’ তে বাংলাদেশের সঙ্গে আছে ভারত ও ভুটান। গ্রুপ ‘এ’ তে আছে ইরান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল। এ আসরে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আবাসিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প শুরু হয় বাংলাদেশের মেয়েদের। ক্যাম্পে ৩৯ কিশোরী ফুটবলারকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়। পরে এখান থেকে ১২ জনকে বাদ দিলে তাদের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭। এএফসির নিয়ম অনুযায়ী চূড়ান্ত দল হবে ১৮ জনের। এই টুর্নামেন্টে সাতটি দেশ দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলবে। প্রতি গ্রুপ থেকে শীর্ষ দুই দল খেলবে সেমিতে। কোচ ছোটনের লক্ষ্য টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল খেলা। তবে দলের নির্ভরযোগ্য ফরোয়ার্ড সানজিদা আক্তারের লক্ষ্যটা আরও বড়Ñ ‘আমরা এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।’ দলে কি এমন আছে যে চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব? ‘ভারতের বিরুদ্ধে এর আগেও খেলেছি অনুর্ধ-১৬ আসরে। ভারতের বিরুদ্ধে একটা গোলও আছে আমার। প্রতিপক্ষকে হারানো অবশ্যই সম্ভব। আর ভুটানের বিরুদ্ধে না খেললেও আমাদের জাতীয় দল তাদের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে কক্সবাজারে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলে জিতেছে ৯-০ গোলে। কোচ বলেছেন সেই ম্যাচের ভিডিও তিনি আমাদের দেখাবেন।’ দলে জাতীয় বা সিনিয়র দলের একাধিক খেলোয়াড় খেলেন। এ প্রসঙ্গে সানজিদা বলেন, ‘সিনিয়রদের বিরুদ্ধে খেলে আমাদের জন্য ভালই হয়েছে, যা আমাদের ভারতের বিরুদ্ধে ভাল খেলতে সাহায্য করবে।’ গত বছর অক্টোবরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ। এ আসরে থেকে এশিয়ার সেরা ১০ ফুটবলার বাছাই করে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)। আর সেই তালিকায় নাম ওঠে বাংলাদেশের সানজিদার। বাছাইপর্বে বাংলাদেশের মেয়েরা ভারত ও ইরানকে হারাতে না পারলেও জর্দান ও আরব আমিরাতকে হারায়। আর সেই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়ে সবার নজর কাড়ে ময়মনসিংহের কিশোরী সানজিদা আক্তার। তার অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্য মুগ্ধ করে এএফসি কর্তৃপক্ষকে। তাই সানজিদা ঠাঁই পায় সেরা দশজনের তালিকায়। সানজিদার অবস্থান সপ্তম। কোচ ছোটন এর আগে জনকণ্ঠকে বলেছিলেন, ‘অনুর্ধ-১৬ দলের যেসব খেলোয়াড় এই দলে আছে, তারা দীর্ঘ পাঁচ মাস বাড়িতে থাকায় এবং কোন অনুশীলনের মধ্যে না থাকায় তাদের ভেতর আগের যে লড়াকু ভাব ও ফিটনেস ছিল সেটা অনেক কমে গেছে। প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে কিছু খেলোয়াড়ের পারফর্মেন্সের অধোগতিতে সেটাই ধরা পড়েছে।’ তবে সানজিদার দাবি- বাড়ি গিয়ে অনুশীলনে বিরতি দেয়নি সে, ‘প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর একঘণ্টা প্র্যাকটিস করতাম। ওখানে আমাদের একটা দল আছে, সবাই মিলে খেলতাম।’ এবার নবম শ্রেণীতে উঠেছে ময়মনসিংহের কলসিন্দুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী সানজিদা (উল্লেখ্য, অনুর্ধ-১৪ দলে আছে এই স্কুলের মোট ১৪ খেলোয়াড়!)। গত বছর অষ্টম শ্রেণীতে জেএসসি পরীক্ষার কারণে খেলতে যেতে পারেনি পাকিস্তানের ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত ‘সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ’-এ। ‘এ নিয়ে কোন আফসোস নেই। কারণ সামনে আরও অনেক টুর্নামেন্ট আসবে। আশা করি সেগুলোতে খেলার সুযোগ পাব’Ñ সানজিদার আশাবাদ। ইতোমধ্যেই নারায়ণগঞ্জ মহিলা জেলা একাদশের বিরুদ্ধে ছোটনের দল দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে। দুটোতেই জিতেছে সানজিদারা। প্রথম ম্যাচে ৬-৪ এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ১০-০। প্রথম ম্যাচে সানজিদা কোন গোল করতে না পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে দুটি গোল করে। দ্বিতীয় ম্যাচে সানজিদাকে হাফ টাইমের পর উঠিয়ে নেয়া হয়। ‘এজন্যই ওই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করতে পারিনি’- আক্ষেপ ঝরে যুক্তরাষ্ট্রের এ্যাবি ওয়ামবাখ, আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি, এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া ও পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর গুণমুগ্ধ সানজিদার কণ্ঠে। এএফসি থেকে ঘোষিত সেরা ফুটবলারের সম্মান পাওয়ার পর নিজের এলাকায় বিষয়টি যথেষ্ট আলোড়ন তোলে। এলাকার সাংসদ এবং সমাজকল্যাণমন্ত্রী এ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন সানজিদাকে দেন নগদ ৪০ হাজার টাকা ও একটি ক্রেস্ট (অনুর্ধ-১৬ দলের ময়মনসিংহের অপর দুই কিশোরী ফুটবলার কল্পনা ও শিউলিও পায় প্রত্যেকে ৫ হাজার টাকা এবং ক্রেস্ট)। এলাকাবাসী, আত্মীয়স্বজন, সহপাঠীদের নয়নমণিতে পরিণত হয় সানজিদা। ‘মা-বাবা খুব খুশি হয়েছেন। আমাকে প্রাণভরে দোয়া করেছেন। বলেছেন, ভাল করে খেলতে। এই ৪০ হাজারের সঙ্গে বাবা আরও ১০ হাজার টাকা যোগ করে আমার নামে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট করে সেখানে রেখে দিয়েছেন’- জানায় সানজিদা। উল্লেখ্য, কৃষক বাবা লিয়াকত আলী এবং গৃহিণী মা জোছনা খানমের ৪ মেয়ে, দুই ছেলে। সানজিদা হচ্ছে তাদের তৃতীয় কন্যা। আগামী মাসেই নেপালে অনুর্ধ-১৪ দলের সঙ্গে খেলতে সেখানে যাচ্ছে সানজিদা, যা তার প্রথম বিদেশ সফর। ভয় করছে না? ‘মোটেও না। আমি খেলার জন্য মুখিয়ে আছি’- সপ্রতিভ উত্তর সানজিদার। সে আলাপচারিতা শেষ করে একটি স্বপ্নের কথা জানিয়ে- ‘আগামীতে এএফসির সেরা মহিলা খেলোয়াড় হতে চাই।’
×