ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে দল বা জোটের প্রভাবে

মেয়র পদে নাছির নবাগত, মঞ্জুর পুরনো

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৩ এপ্রিল ২০১৫

মেয়র পদে নাছির নবাগত, মঞ্জুর পুরনো

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে নতুন এবং পুরনোর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতার লড়াই নিয়ে নগরজুড়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। মেয়র পদে মোট ১২ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষিত হলেও শেষ পর্যন্ত এদের মধ্যে অনেকেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও নাগরিক কমিটি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন ও বিএনপি সমর্থিত এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলন মনোনীত মেয়র প্রার্থী এম মনজুর আলমের মধ্যে ভোটের প্রধান লড়াই যে হবে তা নিশ্চিত। এ ক্ষেত্রে মেয়র নির্বাচনের জন্য আ জ ম নাছির উদ্দিন নবাগত এবং মনজুর আলম দ্বিতীয়বারের মতো এ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন। সঙ্গত কারণে নতুন ও পুরনো প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লড়াইয়ে ভোটাররা কাকে বেছে নেবেন তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী ২৮ এপ্রিল নির্বাচনের দিন পর্যন্ত। সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আ জ ম নাছির উদ্দিন নবাগত হওয়ায় তাঁকে নিয়ে নগর কার্যক্রম সংক্রান্ত কোন সমালোচনা নেই। পক্ষান্তরে, মনজুর আলম ২০১০ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়র হিসেবে সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম চালাতে গিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন। এক্ষেত্রে বলা চলে এই দুই রাজনীতিবিদের নিয়ে ভোটাররা ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গীকে বিচার বিশ্লেষণ করে চলেছেন। এর আগে ১৯৯৪ সাল থেকে টানা তিনবার মেয়র পদে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগের এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী কর্পোরেশন পরিচালনার ক্ষেত্রে এবং উন্নয়নে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা মনজুর আলমের পক্ষে সম্ভব হয়নি। কেননা, তিনি এ পদে একদিকে ছিলেন নবাগত অন্যদিকে ছিলেন এক টার্মের। এর পাশাপাশি আ জ ম নাছির উদ্দিনকে নিয়ে সফলতা ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনার কোন সুযোগ নেই। কেননা, তিনি এবার প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এবারের ভোটার সংখ্যা ১৮ লক্ষাধিক। তন্মধ্যে সোয়া লক্ষাধিক ভোটার নতুন প্রজন্মের। অপরদিকে মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেকই হচ্ছে নারী। কর্পোরেশনের বিভিন্ন ফি বৃদ্ধি, হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর পাশাপাশি হাইকোর্টের নির্দেশে ব্যাটারিচালিত রিক্সা বন্ধ করে দেয়ার ঘটনায় মনজুর আলমকে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে নানা নেতিবাচক আলোচনা রয়েছে, যা ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। পক্ষান্তরে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন একদিকে প্রার্থী হিসেবে নবাগত, অপরদিকে তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত। এর পাশাপাশি তিনি চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সহ-সভাপতির পদেও আসীন। এছাড়া চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ একটি হাউজিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত থেকে আগামীকাল ৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য এ সোসাইটির সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব সংগঠনের কাজে তাঁর ভূমিকা বলিষ্ঠ হিসেবে প্রচার রয়েছে। তবে অনেকের মাঝে নেতিবাচক মনোভাবেরও কমতি নেই। এসব মিলে ভোটাররা ভোটের দিক কোন প্রার্থীর পক্ষে ঝুঁকবেন তা আগাম চিন্তা ভাবনা করা মোটেই সহজ নয়। আ জ ম নাছির উদ্দিন সরকার দলীয় সমর্থনের প্রার্থী হিসেবে এবারের নির্বাচনে বিভিন্ন মহলের সহযোগিতা পেতে সমর্থ যে হবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পক্ষান্তরে, মনজুর আলম বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হলেও দীর্ঘ সময় জুড়ে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে পৃষ্ঠপোষকতার কারণে তার প্রতি অনেকের সমর্থন যে নেই তা বলা যাবে না। বঙ্গবন্ধু পরিবারের অনেকের নামে তিনি কয়েকটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে তা পরিচালনা অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়া তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি। দুই প্রধান প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন ও মনজুর আলমের মধ্যে রাজনৈতিক দলীয় সমর্থনের ব্যবধান খুব বেশি নয়। এক্ষেত্রে নবাগত ও রাজনৈতিক দলীয়ভুক্ত নয় এমন ভোটাররা একযোগে যে প্রার্থীর পক্ষে ঝুঁকবেন তিনিই হয়ত শেষ পর্যন্ত জয়ের মালাটি গলায় নেবেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও মূলত দলীয় সমর্থনের হওয়ায় এ নির্বাচনও জাতীয় নির্বাচনের মতো আওয়ামী লীগ-বিএনপি তথা ১৪ দল বনাম ২০ দলের লড়াই হিসেবেই বিবেচিত। নৌকা বা ধানের শীষ প্রতীক না থাকলেও প্রার্থীর পরিচয় কোন দলের তা ভোটারদের সমীকরণে চলে আসে। ফলে দলীয় সমর্থনের ভোটাররা স্ব স্ব দলের সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে বা ভোট প্রয়োগে সাধারণত পিছপা হবেন বলে মনে হয় না। চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনের বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে এ নির্বাচনে ব্যক্তি ইমেজও অন্যতম প্রধান হিসেবে কাজ করবে। কারণ নগর পিতার পদটি প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদার যেমন, তেমনি দেশের দ্বিতীয় বৃহত নগর চট্টগ্রামের জন্য পরিচিতির বিষয়টিও বিদ্যমান। জাতীয় নির্বাচনের মতো দলীয় সমর্থনের প্রার্থীর পক্ষে ভোটাররা ঝুঁকলে ফলাফল হতে পারে এক ধরনের। পক্ষান্তরে, এর সঙ্গে ব্যক্তি ইমেজ যোগ করে ভোটাধিকার প্রয়োগ হলে ফলাফল হতে পারে আরেক ধরনের। এসব নিয়ে সরস-নিরস আলোচনা চলছে ভোটার-নন ভোটারসহ সকল মহলে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচন নিয়ে ওয়ার্ডভিত্তিক পর্যালোচনা চললে এতেও মেয়র নির্বাচন করার বিষয়টি সর্বাগ্রে প্রাধান্য পাচ্ছে। ৪১ ওয়ার্ড ও ১৪ সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আসনে যারা নিজেদের পাশাপাশি মেয়র প্রার্থী হিসেবে যার পক্ষে সর্বশক্তি নিয়োগ করবেন সে সব ওয়ার্ডের ফলাফল নিয়েই জয়ের ভাগ্য নির্ধারণের সম্ভাবনা বেশি। সদ্য বিদায়ী ও পুনঃমেয়র পদপ্রার্থী মনজুর আলমের প্লাস পয়েন্ট হিসেবে রয়েছে তিনি একটি বড় দলের সমর্থিত এবং কর্পোরেশন পরিচালনায় এক টার্মের অভিজ্ঞ। এর পাশাপাশি বিনয়ী ও ভদ্র হিসেবে তাঁর পরিচিতি রয়েছে। পাশাপাশি আ জ ম নাছির উদ্দিন এ পদে নবাগত হলেও ক্রীড়াঙ্গনসহ বিভিন্ন সংগঠনের শীর্ষ পদগুলোতে তিনি আসীন। এছাড়াও তিনি দেশের বৃহত দল আওয়ামী লীগের নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অধিষ্ঠিত আছেন। কর্মঠ, উদ্যমী হিসেবে তাঁর সফলতার বহু নজির রয়েছে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়িক কার্যক্রমেও সম্পৃক্ত। ছাত্র ও তরুণ সমাজে রয়েছে আ জ ম নাছির ক্রেজ। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগে পুরনো বহু নেতাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তিনি এ দলের নজর শাখার সাধারণ সম্পাদকের পদে আসীন হতে সক্ষম হয়েছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও রয়েছে তাঁর একটি ভাল সম্পর্ক। শুধু তাই নয়, এবারের নির্বাচনে তার জন্য আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দল মাঠে নামছে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে। মনজুর আলমের ক্ষেত্রেও বিএনপি এবং ২০ দল মাঠে নেমেছে। তবে দলের সমর্থনে ২০১০ সালে মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার পর দলের জন্য ব্যাপক কোন অবদান রাখতে পারেননি বলে সমালোচনা রয়েছে। এরপরও চট্টগ্রামে বিএনপির মধ্যে আবারও তাকে এ পদের জন্য সমর্থন দেয়া হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে বছরের পর বছর মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে মূল লড়াই চলে আসছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোও এ দু’দলের প্রভাবে প্রভাবান্বিত। সঙ্গত কারণে চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ-বিএনপি বা ১৪ দল-২০ দলের লড়াই বললে অত্যুক্তি হবে না। এ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আগামীতে জাতীয় রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে উভয় দলের প্রয়াস থাকবে ব্যাপক। আর এ কারণেই দু’দল বা দুই জোটের সমর্থকরা স্ব স্ব দল বা জোট সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে তৎপরতা যে চালাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
×