ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কামালের পদত্যাগ নিয়ে আইসিসির ভুল ব্যাখ্যা

প্রতিশোধের আগুনে পুড়ছেন শ্রীনিবাসন

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৩ এপ্রিল ২০১৫

প্রতিশোধের আগুনে পুড়ছেন শ্রীনিবাসন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কুৎসিত, মস্তিষ্ক বিকৃত, পচা, দুর্গন্ধময়, শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হয়, কথা বললেও দুর্গন্ধ বের হয়; এত সব বিশেষণ কার জন্য জানেন? এরই মধ্যে জানা হয়ে গেছে, আইসিসির (আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা) চেয়ারম্যান ও সাবেক বিসিসিআই (বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া) সভাপতি নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের জন্য। কে এসব বিশেষণ দিয়েছেন? বুধবার আইসিসির সভাপতি পদ থেকে সাবেক হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এরপর কী আর প্রতিশোধ নেবেন না শ্রীনিবাসন। প্রতিশোধের আগুনে পুড়ছেন। তা প্রতিশোধ নিতেও চাচ্ছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছে, জুনে যে বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ রয়েছে বাংলাদেশে; সেই সিরিজ বাতিল করে দেয়ার পাঁয়তারা করছেন। বিসিসিআইয়ে যে তার পক্ষের লোকজন আছেন, সিরিজটি বাদ করতে তারা তৎপর হচ্ছেন। এতে করে যদি প্রতিশোধ নেয়া যায়। এরই মধ্যে আবার জানা গেছে, বিশ্বকাপের ফাইনালে বিজয়ী দলকে শিরোপা তুলে দিতে না পেরে কামাল যে পদত্যাগপত্র আইসিসির কাছে দিয়েছেন, আইসিসিও এর ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার কামালের পক্ষ থেকেই এ ভুল ব্যাখ্যার প্রমাণ দেয়া হয়। গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পদত্যাগপত্রের সঙ্গে আইসিসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তির অমিল জানানো হয়। বুধবার দুপুরে মুস্তফা কামাল আইসিসির সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগের কথা জানান। রাতে আইসিসি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে এবং সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইসিসির সিইও ডেভ রিচার্ডসনের কাছে পাঠানো পদত্যাগপত্রে লোটাস কামাল আইসিসির সদস্য ও সহযোগী সদস্য দেশের সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন এবং কারও বিরুদ্ধে তার কোন অভিযোগ নেই। আইসিসির বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা বক্তব্যের প্রতিবাদ ও ব্যাখ্যা দিয়েছেন লোটাস কামাল। বৃহস্পতিবার পরিকল্পনামন্ত্রীর দফতর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইসিসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত তার উদ্ধৃতি সঠিক নয়। সেখানে বলা হয়, লোটাস কামাল সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। আসলে পদত্যাগপত্রে বিষয়টি এমন ছিল না। পদত্যাগপত্রের কপি পাঠানো হয় সাংবাদিকদের। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ছয় বছর ধরে আইসিসিতে তোমাদের সঙ্গে আছি। এই সময় আমি কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে, আমি তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’ কিন্তু আইসিসি তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে, লোটাস কামালের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে। অবশ্য মুস্তফা কামালের পদত্যাগের পর আইসিসি কী করল, তা নিয়ে তেমন মাথা ব্যথা কাররই নেই। সবার মাথা ব্যথা শ্রীনিবাসন কী করেন। কিংবা বিসিসিআই কী করে। যতদূর বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছে, শ্রীনিবাসন প্রতিশোধ নেয়ার মিশন এরই মধ্যে শুরু করে দিয়েছেন। বিসিসিআইয়ে তার যে পক্ষের লোক আছে, তাদের দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সিরিজটি বাতিল করতে চাইছেন। কিন্তু তাতেও কী শ্রীনিবাসন সফল হতে পারবেন? এখন বিসিসিআইয়ের সভাপতি জগমোহন ডালমিয়া। বাংলাদেশ ক্রিকেটের পুরনো বন্ধু। যার সহযোগিতায় বাংলাদেশ ক্রিকেট টেস্ট আঙ্গিনায় পা রাখে। সেই ডালমিয়া থাকতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হবে, তা ভাবাই যায় না। তাছাড়া মুস্তফা কামালত বিসিসিআইয়ের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। বলেছেন শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে। এখন শ্রীনিবাসন বিসিসিআইয়ের সভাপতিও নন। তবে আইসিসির চেয়ারম্যান। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। যে কোন চাল চালতে পারেন। যদি শেষপর্যন্ত শ্রীনিবাসন কোন চালাকি করে বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ বাতিলের চূড়ান্ত সাফল্যে পৌঁছেও যান, বিসিসিআই সেই সফরটি বাতিল করেও দেয়; তখন রাজনৈতিকভাবেও এর সমাধান খোঁজা হতে পারে। তখন নরেন্দ্র মোদির দ্বারস্থও হতে পারে বাংলাদেশ সরকার। মোদি নিশ্চয়ই কোনভাবেই দু’দেশের সম্পর্ক কোনভাবে ক্ষতির মুখে পড়ুক, তা চাইবেন না। বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনত বলেই দিয়েছেন, ‘দুই দেশের ক্রিকেট সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার কোন কারণই দেখছি না।’ জুন আসতে এখনও দেরি। তবে এরইমধ্যে বিসিসিআইয়ে দ্রুত এ সফর নিয়ে সভা ডাকার চেষ্টা চলছে। সেই সভায় কী সিদ্ধান্ত আসবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে আপাতত পদত্যাগ করায় কামাল কিন্তু ঠিকই প্রশংসিত হচ্ছেন। সঙ্গে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে যে অনিয়ম হয়েছে, আম্পায়ারদের ভুলগুলো নিয়ে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলেছেন মুস্তফা কামাল, এ জন্যও প্রশংসাই পাচ্ছেন। মুস্তফা কামালকেত এ জন্য চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে শিরোপা তুলে দিতেই দেয়া হলো না। বিশ্ব গণমাধ্যমে শুধু তারই বন্দনা চলছে। সাহসী সিদ্ধান্ত যে নিয়েছেন কামাল। ১০৬ বছর হলো ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার জন্ম। শুরুতে ১৯০৯ সালে বর্তমান আইসিসির নাম ছিল ইমপেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স। এরপর ১৯৬৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কনফারেন্স হলো। সেখান থেকে ১৯৮৯ সালে গিয়ে হলো ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। যা আজও বহাল আছে। কোন দিনই এমন ঘটনা দেখা যায়নি। কোন সভাপতিই আইসিসির কার্যকলাপে অখুশি হয়ে কিংবা আইসিসির কোন ব্যক্তির কলুষিত সিদ্ধান্তে অখুশি হয়ে পদত্যাগ করেননি। কামাল সেই নজির গড়লেন এবং যখন এমনটি করলেন তখন ‘বিগ থ্রি’-ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড যে ক্রিকেটটাকে এখন নিয়ন্ত্রণ করে তাদেরও হতভম্ব করে দিলেন। এ জন্য গণমাধ্যমে কামালের প্রশংসা চলছেই। সেই সঙ্গে নিজ দেশের গণমাধ্যমেই ধিক্কৃত হচ্ছেন শ্রীনিবাসন। এমন পরিস্থিতিতে এখন শ্রীনিবাসনের সামনে প্রতিশোধ নেয়া ছাড়া কোন বিকল্প পথ খোলা নেই। সেই প্রতিশোধের আগুনেই এখন পুড়ছেন শ্রীনিবাসন। যেখানে আইসিসির কিছু লোকের কার্যকলাপ যতই ঘৃণ্য হোক, কেউ কোন কথা বলেন না, সেখানে মুস্তফা কামাল পদত্যাগ করে, মুখ খুলে ‘হিরো’ও বনে গেলেন।
×