ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এক বছরে দাম বেড়েছে কেজিতে ১২ টাকা ॥ ইলিশ দুর্মূল্য হচ্ছে পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে

গোমাংস আর ইলিশের দাম মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৩ এপ্রিল ২০১৫

গোমাংস আর ইলিশের দাম মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে

এম শাহজাহান ॥ ষাটোর্ধ ফজলুল সাহেব বাজারে গিয়ে এখনও আগে কিনেন গরুর মাংস আর ইলিশ মাছ। রানের ও সিনার মাংস কিনেন টিপে টিপে। আর মাছের ডালিতে খুঁজে বেড়ান পদ্মার ইলিশ। কারণ গরুর মাংস আর ইলিশ মাছ তাঁর সবচেয়ে প্রিয় খাবার। রসনা বিলাসীদের কাছে এই মাংসের কদর সব সময় ছিল, আছে এবং থাকবে। কিন্তু দামের কারণে নিম্ন মধ্যবিত্তের লাগামের বাইরে চলে যাচ্ছে গরুর মাংসের দাম। দামের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে প্রিয় এই মাংসের স্বাদ ভুলে যেতে হবে সাধারণ ভোক্তাদের। এক বছরে কেজিতে প্রায় ১২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে বাড়ছে ইলিশ মাছের দামও। দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে নিম্নবৃত্তের মানুষদের ইলিশ ছাড়াই পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে হবে। এদিকে, রাজধানীতে প্রতিকেজি মাংস বিক্রি হচ্ছে ৩৮০-৪০০ টাকায়। যদিও দেশী গরুর মাংসের দাম ২৮০ এবং বিদেশী গরুর মাংসের দাম ২৬০ টাকা নির্ধারণ করে গত বছর মাংস বিক্রির নির্দেশ দিয়েছিল ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। এই নির্দেশ বর্তমানে দেশের কোন বাজারে মানা হচ্ছে না। একের পর এক কারণ দেখিয়ে বাজারে গরুর মাংসের দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। হরতাল-অবরোধের দোহাই এবং পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধিতে কয়েক দফা মাংসের দাম বাড়ানো হয়েছে। আবার ভারত থেকে গরু কম আসছে ও আনতে আগের চেয়ে বাড়তি ব্যয় হচ্ছে এ কারণেও মাংসের দাম বাড়াচ্ছেন তারা। যদিও গতবছর রোজার আগে রাজধানীতে সিটি কর্পোরেশন মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেয়। সেই নির্ধারিত দরের চেয়ে কেজিতে ১০০-১২০ টাকা বাড়তি দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর কাঁচা বাজারগুলোতে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৩৮০-৪০০ টাকায় আর খাসির মাংস ৫৮০ টাকায়। এর আগের সপ্তাহে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৩৫০ টাকা আর খাসির মাংসের দাম ছিল ৫৫০ টাকা। এদিকে, গত রমজানে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং ব্যবসায়ীরা বসে মাংসের দর নির্ধারণ করে। ওই সময় দেশী গরুর মাংস ২৮০ টাকা, বিদেশী গরু মাংস ২৬০ টাকা, মহিষ ২৫০ টাকা, খাসি ৪৫০ টাকা, ভেড়া ও ছাগী ৪০০ টাকা হারে নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত রমজানের সময় যে দাম নির্ধারণ করা হয় তাই সারা বছর বহাল থাকে। কিন্তু এ বছর শুরু থেকেই মাংসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল জানিয়েছেন, ভারত থেকে গরু ও মহিষ আমদানি কমে গেছে। বিএসএফ আটকে দিচ্ছে এবং দেখামাত্র গুলি করছে। আবার আগে প্রতিটি গরু আনতে দেড় হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এখন সেখানে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। এই বাড়তি খরচের কারণে গরুর মাংসের দাম বাড়ছে। ছোট মাংস ব্যবসায়ীরা এখন বাজার থেকে গরু কিনতে পারছেন না। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তারা দু’তিন জন মিলে একটি গরু কিনে মাংস বানিয়ে বিভিন্ন ছোট ছোট বাজারে বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, তাই ভারতের পাশাপাশি ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমার থেকে গরু-মহিষ আমদানি করা যায় কিনা সরকারকে তা ভাবতে হবে। গরু পাচার বন্ধে ভারতের নির্দেশ ॥ ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বাংলাদেশে গরু পাচার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে সীমান্তে টহল আরও বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। বুধবার দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত পোস্ট আঙরাইলে বুধবার বিএসএফ সদস্যদের উদ্দেশে বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি এ নির্দেশনা দেন। এ সময় রাজনাথ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুবই আন্তরিক এবং সেটা আরও বাড়াতে চায়। তবে ভারত সরকার গরু, ওষুধ ও জাল নোট পাচার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কয়েক মাস আগে একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটি ইতোমধ্যে তাদের কাজ শেষ করেছে এবং আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে। এদিকে, ভারতের সরকারী হিসেবে, ২০১৪ সালে দেশটি থেকে বাংলাদেশে প্রায় ১৭ লাখ গরু পাচার হয়েছে। ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গরুর মাংস রফতানিকারক দেশ এবং পঞ্চম ভোক্তা দেশ। বাংলাদেশে গরুর মাংসের বাজার অনেকটাই ভারতীয় গরুর ওপর নির্ভর করে আছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে ভারতের গরু সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে আসতে না পারলে দেশে মাংসের বাজার আরও অস্থির হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে অস্থির ইলিশের বাজার ॥ এদিকে বাংলা নববর্ষ সামনে রেখে বৈশাখী ঝড় এখন ইলিশ মাছের বাজারে। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে ইলিশ মাছের দাম।
×