ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অটিস্টিক শিশুরা সমাজের বোঝা হতে পারে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৩ এপ্রিল ২০১৫

অটিস্টিক শিশুরা সমাজের বোঝা হতে পারে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতিবন্ধীদের প্রতি সকলকে সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আপনারা যারা সুস্থ আছেন, প্রতিবন্ধীদের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল হোন। তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ান, তারাও আমাদের সমাজের অংশ, আমাদের সম্পদ। তাদের কোন না কোন বিষয়ে সুপ্ত প্রতিভা থাকে। তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিলে তারাও সমাজ ও জাতির জন্য অনেক বড় বড় কাজ করতে পারে। অটিস্টিক শিশুরা সমাজের বোঝা হতে পারে না। তাদেরকে অবহেলা করা যাবে না। তাদেরকে সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। অটিস্টিক হয়েও বিশ্বে বিভিন্নভাবে বিখ্যাত ব্যক্তি হওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস-২০১৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। সমাজকল্যাণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী, প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন, সচিব নাছিমা বেগম। শতাধিক অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিশু, কিশোর, তরুণ এবং তাদের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী আইনস্টাইন, নিউটন, বিটোফেনসহ বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের কথাও তুলে ধরেন; যারা নানা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্ম নিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই মঞ্চ আর মিলনায়তনে অতিথিদের বসার স্থানের মাঝে ফাঁকা জায়গায় হেঁটে বেড়াচ্ছিল এক অটিস্টিক কিশোর। তার পরনে ছিল অটিজম দিবসের নীল ফতুয়া। তার এই হেঁটে বেড়ানো নিয়ে বিপাকে পড়ে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এএসএফ সদস্যরা, তাকে থামানোর চেষ্টা করলে মঞ্চে বসা শেখ হাসিনা তাদের নিষেধ করেন। এরপর অনুষ্ঠানের পুরোটা সময় নিজের মনে মিলনায়তনের ভেতরে হেঁটে বেড়ায় সেই কিশোর। শেখ হাসিনা বলেন, আগে অটিজম নিয়ে মানুষের তেমন জানা ছিল না। অটিস্টিক শিশুদের বাবা-মা সমাজের সবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতো। তাদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা ছিল না। সামাজিক ও পারিবারিকভাবে মায়েদেরও নানান বঞ্চনার শিকার হতে হতো। এখন মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। মানুষ অটিজম সর্ম্পকে অনেক কিছু জানতে পারছে। অটিজম বিশেষজ্ঞ ও তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি নিজেও অটিজম বিষয়ে খুব একটা জানতাম না। আমি জেনেছি আমার মেয়ের কাছ থেকে। অটিজম বিষয়ে তিনি পুতুলের কাছ পরামর্শ নিয়ে থাকেন বলেও জানান। বিশ্ব অটিজম দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের একটি সেমিনারে যোগ দেয়ায় সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল দেশের বাইরে রয়েছেন। অনুষ্ঠানের অটিজম বিষয়ে পুতুলের একটি সাক্ষাতকারের ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়। পুতুল দেশে ও দেশের বাইরে অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। মূলত তার বিভিন্ন উদ্যোগ ও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে অটিজম বিষয়ে সাধারণ মানুষের প্রচলিত ধারণায় আমূল পরিবর্তন আসে। এ বিষয়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি হয়। অটিজম বিষয়ে তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা থেকে ‘অ্যাকসিলেন্স ইন পাবলিক হেলথ অ্যাওর্য়াড’সহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে তিনি পুরস্কার পেয়েছেন। অটিস্টিক শিশুদের জন্য সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এবং নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন, ২০১৩ নামে দুটি আইন পাস করেছি। অটিস্টিকদের শিক্ষায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটিস্টিক শিশুদের সমাজের মূল ধারায় নিয়ে আসতে তাদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে। এজন্য সরকার প্রতিবন্ধিতা সর্ম্পকিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা গ্রহণ করেছে। এ নীতিমালার আওতায় ৫০ বিদ্যালয়ে প্রায় দশ হাজার প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রী পড়াশুনার সুযোগ পাচ্ছে। এজন্য সরকার ৯ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ভবিষ্যতে এ কার্যক্রমকে আরও সম্প্রসারণ করা হবে। প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি ও তাদের জন্য অবকাঠামোগত পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিশেষ বা একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম, অটিস্টিকদের বিনামূল্যে বিভিন্ন সেবা প্রদান, অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব নিউরো ডিজঅর্ডার এ্যান্ড অটিজম প্রতিষ্ঠা, প্রতিবন্ধীদের বিনামূল্যে ফিজিওথেরাপিসহ অন্য চিকিৎসা প্রদানের জন্য ৬৪ জেলায় ১০৩ প্রতিবন্ধী সেবা কেন্দ্র স্থাপন, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে ঘরে বসে প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন সেবাগ্রহণে সরকারের পদক্ষেপসহ সরকারী চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা রাখাসহ প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে আওয়ামী লীগের সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য শেষে অটিস্টিক শিশু ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে অনেকে সহায়তা চান এবং কাগজপত্র তাঁর হাতে তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সহায়তা করার আশ্বাস দেন। এদিকে, একই অনুষ্ঠানে গান গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী ও প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন। বিশ্ব অটিজম দিবসের এ অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী বক্তব্য শেষে ‘আমরা করব জয়’ গানটির কিছু অংশ গেয়ে শোনান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীও মন্ত্রীর সঙ্গে সুর মেলান। অনুষ্ঠানের ধন্যবাদ পর্বে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনও বক্তব্য শেষে গারো ভাষায় একটি গান গেয়ে শোনান। পরে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে ‘প্রভুর সেবা’ নিয়ে একটি গান গেয়ে শোনান প্রতিমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী অটিস্টিক শিশুদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন ও শিশুদের সঙ্গে ছবি তোলেন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ঘোড়ার গাড়ি সাজগোজ করা তিনটি হাতি শের বাহাদুর, ধোলাই সুন্দরী ও ফুল সুন্দরীকে নিয়ে একটি শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে শুরু হয়ে বিজয় সরণিতে গিয়ে শেষ হয়।
×