ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

একুশ মিনিট পর আসে ফায়ার সার্ভিস, পুড়ে মরল তামান্না

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৩ এপ্রিল ২০১৫

একুশ মিনিট পর আসে ফায়ার সার্ভিস, পুড়ে মরল তামান্না

আজাদ সুলায়মান ॥ ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিন, প্রশিক্ষকের ভুল ও উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই দুর্ঘটনায় পড়ে প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজটি। আর ফায়ার সার্ভিসের গাফিলতিতেই বুধবার রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম (র) বিমানবন্দরে দুর্ঘটনায় হারাতে হয়েছে তামান্নার মতো সম্ভাবনাময়ী এক পাইলটকে। উড্ডয়নের মাত্র দুই মিনিটের মাথায় উড়োজাহাজটি ধপাস করে মাটিতে পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে যায়। তখন প্রশিক্ষক ক্যাপ্টেন সাঈদ কামাল সৌভাগ্যক্রমে ভেতর থেকে বের হয়ে আসতে পারলেও আটকা পড়েন তামান্না। আগুন তখন তাঁর পাশ ঘিরে। তামান্না তখন বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকেন। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের কেউ এগিয়ে আসেননি। একুশ মিনিট পর যখন ফায়ার সার্ভিস পৌঁছে, ততক্ষণে পুড়ে ছাই তামান্না। এখন তাঁর পরিবারে কেবলই শোকের মাতম। পরিবারের অভিযোগ, ফায়ার সার্ভিসের উদ্বারকর্মীরা সঠিক সময়ে সেখানে হাজির হলে তামান্নাকে বাঁচানো সম্ভব হতো। এরকম হাজারো অভিযোগ রয়েছে ফ্লাইং একাডেমি, শাহ মখদুম এয়ারপোর্টসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এদিকে, বৃহস্পতিবার তামান্নাকে সমাহিত করা হয়েছে গাজীপুরের কানাইয়ে তাঁর নানার বাড়িতে। এর আগে দুপুরে নিকুঞ্জ কেন্দ্রীয় মসজিদে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। অপরদিকে, ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রশিক্ষক ক্যাপ্টেন সাঈদ কামালকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়েছে। তাঁর অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিসৎকরা। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির কাজ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবারও কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলের কিছু আলামত সংগ্রহ করেন। প্রাথমিক তদন্তে যতটুকু উঠে এসেছে তাতে জানা যায়, রানওয়ে থেকে উড্ডয়ন করার মাত্র মিনিট দুয়েকের মধ্যে প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজটির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাড়াহুড়ো করে ফের রানওয়েতে নেমে আসার চেষ্টা করেন তামান্না। তখনই নিজের ভুলের কারণে উড়োজাহাজটি ধপাস করে রানওয়ের অদূরে ছিটকে পড়ে। তাতেই আগুন ধরে যায়। এ সময় প্রশিক্ষণ ক্যাপ্টেন শাহেদ কামাল কোনক্রমে বের হয়ে আসতে পারলেও দুর্ভাগ্য তামান্নার। আগুনের মাঝে তিনি যখন পুড়ছিলেন, তখন চিৎকার করে বলতে থাকেন, বাঁচাও বাঁচাও। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের কেউ এগিয়ে তো আসেইনি, বরং দুই গ্রামবাসী এগিয়ে এলেও তাঁদের সাহায্য করতে অনুমতি দেয়া হয়নি। তাতেই জীবন্ত পুড়ে মারা যান তামান্না। এ দুর্ঘটনার দরুন চরম ভীতি নেমে আসে অন্যান্য প্রশিক্ষার্থীর মাঝে। বর্তমানে এই ফ্লাইং একাডেমিতে ১৮ জন প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। আতঙ্কিত তাঁদের অভিভাবকরা। আর এ দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবারে শোকের পাশাপাশি চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নিকুঞ্জের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, সামনে তামান্নার কফিন রেখে বিলাপ করছেন তাঁর বাবা-মা, ভাইসহ অন্য স্বজনরা। এ সময় আগতরা যখন এটাকে স্রেফ দুর্ঘটনা বলে সান্ত¡না দিচ্ছিলেন তখন তামান্নার পরিবার তা মানতে চায়নি। তামান্নার এক খালু মুশফিক এ মৃত্যুর দায়ভার শুধু দুর্ভাগ্যের ওপর চাপানোর পক্ষে নন। বলেছেন, অনেক অনিয়ম ও অসঙ্গতিমূলক কাজকর্মের দরুন এ জাতীয় দুর্ঘটনা ঘটে। তামান্নার শোকার্ত মা তখন বলেন, অনেক অভিযোগ আছে। সময় হলে বলব। এখন সব বলতে চাই না। মেয়ে অনেক কথাই বলত আমার কাছে। তদন্ত কমিটির এক সদস্য জনকণ্ঠকে জানান, বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজটি নিয়ে রানওয়ে থেকে উড্ডয়ন করেন তামান্না নিজেই। পাশেই ছিলেন প্রশিক্ষক ক্যাপ্টেন সাঈদ কামাল। রানওয়ে থেকে মাত্র পাঁচ শ’ ফুট উপরে উড্ডয়নের দুই মিনিট পরই দেখা দেয় ইঞ্জিনে ত্রুটি। এতে ইঞ্জিনটি একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। তখন তামান্না নিজেই আবার অবতরণ করতে গিয়ে মারাত্মক ভুল করে ফেলেন। এ জাতীয় জরুরী অবতরণ বা ফোর্স ল্যান্ডিং করতে যেসব কৌশল ও নিয়ম অনুসরণ করতে হয় সেটা করতে পারেননি। তিনি স্বাভাবিকভাবে ল্যান্ডিং করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। তামান্না সোজা বামে ৬০ ডিগ্রী কৌণিকে বাঁক নিয়ে ফের রানওয়েতে ফিরে এসে উড়োজাহাজটি অবতরণ করানোর চেষ্টা চালান। তাতেই এটি ধপাস করে মাটিতে পড়ে যায়। তাঁর উচিত হয়নি এভাবে ৬০ ডিগ্রী কৌণিকে বাঁক নেয়া। তাহলে কিভাবে করা উচিত ছিল- জানতে চাইলে একজন ক্যাপ্টেন বলেন, সাধারণত এ জাতীয় সিঙ্গেল ইঞ্জিন বিশিষ্ট উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দিলে বা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলেও নিরাপদে ল্যান্ড করার যথেষ্ট সুযোগ ও নিয়ম থাকে, যেটা করতে ব্যর্থ হয়েছেন তামান্না ও তাঁর প্রশিক্ষক ক্যাপ্টেন সাঈদ কামাল। এরকম পরিস্থিতিতে কিছুতেই আর স্বাভাবিক ল্যান্ডিং না করে সামনের দিকে ৩০ ডিগ্রী কৌণিক অবস্থানে ডান অথবা বাম দিকে আস্তে আস্তে নেমে অবতরণ করা যেত। কারণ সেসনা জাতীয় প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ যে কোন স্থানেই ফোর্স ল্যান্ড করেও অক্ষত থাকা যায়। কিন্তুু এক্ষেত্রে কেন ক্যাপ্টেন সাঈদ কামালের মতো দক্ষ প্রশিক্ষক থাকতেও তামান্না এমন সিদ্ধান্ত নিলেন সেটাই বোধগম্য নয়। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে প্রশিক্ষকের কাজ কী? প্রশিক্ষকরা তো পাশে বসেন এ জাতীয় পরিস্থিতিতে যাতে শিক্ষানবিসরা কোন ভুল করলেও সেটা থেকে বিরত রাখা। এদিকে, ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দেয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়কে দায়ী করা যায় বলে জানিয়েছেন সিভিল এ্যাভিয়েশনের একজন পরিদর্শক। তাঁর মতে, ওই জাহাজের ইঞ্জিন নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হতো কিনা, পরিদর্শন করা হতো কিনা, উড্ডয়নের কতদিন আগে কী ধরনের সার্ভিসিং করা হয়েছিল সেগুলো খতিয়ে দেখতে হবে। এ বিষয়ে সিভিল এ্যাভিয়েশন সূত্র জানায়, রাজশাহী হযরত শাহ মখদুম (র) বিমানবন্দরে নিয়োজিত ফ্লাইং ক্লাবের নিজস্ব প্রধান প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে এর আগেও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালনে গাফিলতি রয়েছে। প্রশ্ন রয়েছে তাঁর যোগ্যতা নিয়েও। তিনি এক সময় ছিলেন ফ্লাইং ক্লাবের ঝাড়ুদার। পরে নকল সনদ দিয়ে হয়ে যান প্রধান প্রকৌশলী। এ অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন সিভিল এ্যাভিয়েশনের একাধিক কমকর্তা। ইঞ্জিনের রক্ষণাবেক্ষণ সঠিকভাবে করা হলে এমন বিপর্যয় ঘটত না। এদিকে, উড়োজাহাজটি বিকট শব্দে যখন ধপাস করে পড়ে যায়, তার আগেই ফায়ার সার্ভিসের প্রস্তুতি রাখাটা ছিল আবশ্যক। এ্যাভিয়েশনের নিয়ম হচ্ছে, প্রশিক্ষণকাজে এ জাতীয় উড়োজাহাজ যখনই আকাশে উঠবে তার আগেই এয়ারপোর্টের রানওয়ের পাশেই ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট সর্বোচ্চ সতর্কতায় (স্ট্যান্ডবাই) রাখা থাকবে, যাতে কোন দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই সার্ভিস দেয়া সম্ভব। কিন্তু বুধবার কী ঘটেছে শাহ মখদুমে? ইঞ্জিনটি বন্ধ হওয়ার পরই তো প্রশিক্ষক ক্যাপ্টেন সাঈদ কামাল কন্ট্রোল টাওয়ারে ‘মে-ডে’ বলে বিপদ সঙ্কেত দেন। তারপর থেকেও যদি টাওয়ারের নির্দেশনা অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট তাৎক্ষণিক দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যেত, তাহলে তামান্নার শরীর এতটা পুড়ত না। শাহ মখদুম সূত্র জানায়, উড়োজাহাজটি বিকট শব্দে ধপাস করে রানওয়ের শেষ মাথায় বিমানবন্দরের সীমানার ভেতরে পড়ে যাওয়ার পর আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। টাওয়ারও সেটা প্রত্যক্ষ করে। ভেতরের ফায়ার সার্ভিসও তো কয়েক শ’ গজ কাছেই। তারপরও ফায়ার সার্ভিসের সেখানে পৌঁছতে সময় লেগেছে একুশ মিনিট। ততক্ষণে তামান্না পুড়ে ছাই। এ সম্পর্কে একজন প্রত্যক্ষদর্শী চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে জনকণ্ঠকে বলেন, দুর্ভাগা উড়োজাহাজটি পড়ে যাবার পর জানালা ভেঙ্গে মুুহূর্তেই ককপিট থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হন ক্যাপ্টেন সাঈদ কামাল। তামান্নাও চেষ্টা করেন। কিন্তু সিটবেল্ট লকড হয়ে যাওয়ায় তিনি আর বের হতে পারেননি। উপরন্তু তিনি যে পাশে বসা ছিলেন উড়োজাহাজটি সে পাশেই ঝুঁকে পড়ায় তার ওপরে পড়ে যান ক্যাপ্টেন কামাল। কামালের দক্ষতার জোরে আগুনের মাঝখান থেকে নিজেকে রক্ষা করে বের হয়ে আসার দৃশ্যও লোকজন পাশে থেকেই প্রত্যক্ষ করেন। কিন্তু তামান্না জোর গলায় চিৎকার করে বলতে থাকেন, বাঁচাও বাঁচাও। আমাকে বের করুন। আমি পুড়ে গেলাম। তাঁর এ আর্তচিৎকার কাছে থেকেই লোকজন শুনেছে। কিন্তু আগুনের তীব্রতায় কেউ এগিয়ে আসার সাহস করেননি। তারপরও এক যুবক এগিয়ে আসতে চাইলেও তাকে বিমানবন্দরের দেয়াল টপকে ভেতরে যেতে অনুমতি দেয়া হয়নি। এতে কৌতূহলী লোকজন তামান্নার চিৎকারে শুধুই আফসোস আর অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে। টানা বিশ মিনিটেও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন সেখানে হাজির হয়নি। একুশ মিনিটের মাথায় যখন একটি ইউনিট এলো, তখন সর্বনাশ যা হবার হয়ে গেল। সবার চোখের সামনে পুড়ে মরতে হলো সম্ভাবনাময় এক পাইলটকে। ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার করে জীবন্ত পোড়া এই তরুণীকে। কেন এই গাফিলতি জানতে চাইলে বিমানবন্দরের একাধিক সূত্র জানায়, যে দূরত্বে ফায়ার সার্ভিস ছিল সেখান থেকে ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছানো সম্ভব ছিল মাত্র তিন মিনিটেই। কিন্তু এটা সম্ভব হয়নি। কেন এই ব্যর্থতা বা গাফিলতি জানতে চাইলে সূত্রটি জানায়, ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট সেখানে প্রস্তুত থাকলেও ছিল না কর্মী। ওই গাড়ির চালক তখন অন্যদের নিয়ে দলবেঁধে বাইরে চা সিগারেট খেতে যায়। সেখান থেকে তাদের খুঁজে বের করে আনা হয়। এটাই ছিল মূল কারণ। এ সব অভিযোগ সম্পর্কে ফ্লাইং একাডেমির সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন আহমদ ফজলুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ইঞ্জিনে কোন ধরনের ত্রুটি থাকলে তো ক্যাপ্টেন সেটা নিয়ে উড়বে না। এটা নিয়মিত চেক করা হয়। সিভিল এ্যাভিয়েশন সেটা পরিদর্শন করে সনদ দেয়। আর প্রধান প্রকৌশলীর লাইসেন্সও তো ছয় মাস পর পর চেক করা হয়। তার যদি কোন ঘাটতি বা ব্যর্থতা থাকে সেটা ধরা পড়ত। এমন তো কিছুই হয়নি। তবে এসব অভিযোগ সত্যি হয়ে থাকলে তো তদন্তে বের হয়ে আসবে। তার আগে কিছু বলা ঠিক হবে না। বাবা-মা চেয়েছিলেন তামান্না ব্যারিস্টার হবেন ॥ বৃহস্পতিবার দুপুরে বাসায় গিয়ে দেখা যায়, এক শোকার্ত পরিবেশ। ড. আনিসুর রহমান ও রেহানা ইয়াসমিনের একমাত্র মেয়ে রেহানা তামান্না রহমান। বাবা-মার স্বপ্ন ছিল মেয়েকে ব্যারিস্টার বানানোর। কিন্তু তামান্নার জেদ ছিল তিনি পাইলটই হবেন। তার সে স্বপ্নও পূরণ হবার পথে ছিল। আর কিছুদিন পরেই পূর্ণাঙ্গ পাইলট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করতে পারতেন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা সব তছনছ করে দিল। বৃহস্পতিবার দেখা যায়, তাঁর মা শোকে পাথর হয়ে ড্রইং রুমে বসে আছেন। ওপাশের সোফায় তাঁর বাবা আনিসুর রহমান। কারও মুখে কোন কথা নেই। তাদের চারপাশে আত্মীয়-স্বজনের ভিড়। কিন্তু কেউই সান্ত¡নার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না। বাড়ির বাইরে তামান্নার একমাত্র ভাই দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর পাশে বন্ধুদের ভিড়। কিন্তু কেউই যেন সান্ত¡না দিতে পারছেন না। তামান্নার ভাইয়ের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে প্রিয় বোন হারানোর অশ্রু। এ সময় তার সহকর্মীরা জানান, সলো ফ্লাইং (একক উড্ডয়ন)’ একজন প্রশিক্ষণার্থী পাইলটের কাছে পরম কাক্সিক্ষত একটি বিষয়। দীর্ঘদিন তত্ত্বীয় ক্লাস, প্রশিক্ষকের সঙ্গে ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা আকাশে উড্ডয়ন (ফ্লাই)। এরপরই মিলে সলো ফ্লাইংয়ের সুযোগ। ২০১৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমিতে ভর্তি হওয়ার পর অন্য সব পাইলটের মতো এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলেন তামান্না রহমান। মঙ্গলবার তামান্নার জন্য এলো সেই দিনটি। অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে প্রশিক্ষক ছাড়াই রাজশাহীর আকাশে ঘুরে বেড়ালেন এই তরুণ প্রশিক্ষণার্থী বৈমানিক। সফলতার সঙ্গে সলো ফ্লাইং শেষে ভূমিতে অবতরণের পর তারই প্রশিক্ষক ক্যাপ্টেন সাঈদ কামাল অভিনন্দিত করলেন সবার আগে। এ সময় ক্যাপ্টেন সাঈদ পরদিন বুধবার তামান্নার সলো ফ্লাইং উদযাপনের ঘোষণা দেন। এরপর ক্যাপ্টেন সাঈদ সফলভাবে সলো ফ্লাইংয়ের ব্যাজ পরিয়ে দেন তামান্নাকে। ফ্লাইং একাডেমির উড়োজাহাজ শেখার প্রশিক্ষণ দেয়া হয় রাজশাহীতে। আর ঢাকায় চলে তাত্ত্বিক ক্লাস। তামান্নার এই সফলতার ব্যাজ পরানোর তোলা ছবি ঢাকায় একাডেমির সেক্রেটারি জেনারেল ক্যাপ্টেন আহমেদ ফজলুর রহমানকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়। নিয়মানুযায়ী সলো ফ্লাইংয়ের পরদিন প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণার্থীকে নিয়ে আবার উড্ডয়ন করেন এবং সলো ফ্লাইংয়ের ভুল-ত্রুটিগুলো হাতে-কলমে সংশোধন করে দেন। কথা ছিল ১ এপ্রিল প্রশিক্ষকের সঙ্গে উড্ডয়ন শেষে রাতে তামান্নার সলো ফ্লাইং উদযাপন করা হবে। মঙ্গলবারের এই আনন্দ ও সফলতার ছবি দেখে অত্যন্ত খুশি হন একাডেমির অন্যতম কর্ণধার ক্যাপ্টেন আহমেদ। প্রশিক্ষণার্থী বৈমানিকের এই সফলতায় শিক্ষক হিসেবে একরাশ ভাল লাগা নিয়ে বুধবার সকালে একাডেমিতে আসেন ক্যাপ্টেন আহমেদ। কিন্তু দুপুরেই আসে আকস্মিক এই দুর্ঘটনার খবর। বিষয়টি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না ক্যাপ্টেন আহমেদ। দুর্ঘটনার পর বারবার মোবাইল ফোন থেকে তিনি ওই ছবিটি দেখছিলেন। হাসিমুখে ক্যাপ্টেন সাঈদ তার ছাত্রীকে ব্যাজ পরিয়ে দিচ্ছেন। ছাত্রীও খুশি মনে স্যারের পরানো ব্যাজের দিকে তাকিয়ে আছেন। এই ছবিটিই বারবার দেখছেন ক্যাপ্টেন আহমেদ। এরপর স্যারের সঙ্গে বিজয় চিহ্ন দেখিয়ে আরও একটি ছবি তোলেন তামান্না ও অন্য দু’জন প্রশিক্ষণার্থী। চমৎকার একটি দৃশ্য। পরদিনই এই ছবি হয়ে ওঠে নস্টালজিয়ার স্মৃতি। প্রশিক্ষণার্থী দুর্ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আর প্রশিক্ষক সাইদ গুরুতর দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে হাসপাতালে লড়াই করছেন। তিনি এখন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন।
×