ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ নেতার সহযোগিতায় নাশকতা মামলার আসামি

৪ মাদ্রাসা শিক্ষক বেতন তুলছেন

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ৩ এপ্রিল ২০১৫

৪ মাদ্রাসা শিক্ষক বেতন তুলছেন

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ২ এপ্রিল ॥ জেলা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশ উপেক্ষা করেও পলাশবাড়ি উপজেলার ২টি মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ ৪ সহকারী শিক্ষক সহিংসতা ও নাশকতার একাধিক মামলার পলাতক আসামি হওয়া সত্ত্বেও যথারীতি ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন। চিহ্নিত এ জামায়াত নেতারা ওই ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটারে মনোনীত আওয়ামী লীগ দলীয় গবর্নিং বডির সভাপতির স্বাক্ষরে এবং যোগসাজসে যথারীতি দায়িত্ব পালন না করেও গোপনে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন অব্যাহত রেখেছেন। উল্লেখ্য, জেলা শিক্ষা অফিসার কুতুব উদ্দিন স্বাক্ষরিত গত ২ ফেব্রুয়ারি এক পত্রে পলাশবাড়ি সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ভাইস-প্রিন্সিপাল ও পলাশবাড়ি উপজেলা জামায়াতের আমীর আব্দুল মজিদ আকন্দ, এবতেদায়ী প্রধান জামায়াত নেতা মোজাম্মেল হক এবং মেরীরহাট সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও সহিংসতা-নাশকতার মামলার আসামি হওয়ায় বরখাস্তকৃত পলাশবাড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম নজরুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক বেলাল উদ্দীন সরকারের মাদ্রাসায় অনুপস্থিতি ও মামলার পলাতক আসামি হওয়ায় তাদের বেতন-ভাতা বন্ধসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু জেলা শিক্ষা অফিসারের ওই নির্দেশ উপেক্ষা করে গবর্নিং বডির সভাপতি যথাক্রমে পলাশবাড়ি আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সরকারের স্বাক্ষরে চলতি মার্চ মাসেও যথারীতি ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন-ভাতা উত্তোলন করা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার কুতুব উদ্দিন বলেন, তার নির্দেশটি উপেক্ষিত হওয়া বিষয়টি তিনি অবহিত। সুতরাং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। কুমিল্লায় জামায়াত নেতার অর্থ আত্মসাত ॥ মাদ্রাসা থেকে বরখাস্ত নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা থেকে জানান, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঈদগাহ সফিকিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা সুপার জামায়াত নেতা মুহা. আইউব মজুমদারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও মাদ্রাসার বিভিন্ন ফান্ডের মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর কর্তৃক তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ বিভিন্ন সময়ে তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ওই সুপারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করলেও তিনি তার কর্মস্থলে অবস্থানের মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে চলছেন। প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, মাদ্রাসার সুপার মুহা. আইউব মজুমদার মাদ্রাসার মালিকানাধীন দোকান ভাড়ার টাকা, ছাত্র ভর্তি ফি, পরীক্ষার ফি, এককালীন চাঁদা, ইউনিয়ন পরিষদ অনুদানের টাকা, দাতা সদস্যের বিপরীতে আদায়কৃত টাকাসহ বিগত প্রায় ১৮ বছর যাবত ওই মাদ্রাসা ফান্ডের লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেন। বিভিন্ন সময়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন এসব অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করেন। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সাবেক মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দেওয়ান মোঃ জাহাঙ্গীর কর্তৃক দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনে মাদ্রাসা সুপার আইয়ুব মজুমদার বিনা অনুমতিতে হজ ও কাফেলা ব্যবসায় বিভিন্ন সময়ে ১১বার হজে গমনের বিষয়সহ অন্যান্য অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের শিক্ষা পরিদর্শক বিপুল চন্দ্র সরকার ও সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক মনিরুজ্জামান কর্তৃক তদন্তে মাদ্রাসার সুপারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমানীত হওয়ায় প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। পরে মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের পরিচালক প্রফেসর মোঃ মফিজ উদ্দিন আহমদ ভূঁইয়া গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নিকট প্রেরণ করেন। মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান অভিযোগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল বাহার জানান, বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে সুপার ও জামায়াত নেতা আইউব মজুমদার মাদ্রাসার বিভিন্ন ফান্ডের হিসাব গরমিল করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতসহ ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে তাকে গত ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ একাধিক তদন্তে প্রমানীত হলেও তিনি মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া ও অবস্থানের মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন। এতে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াসহ স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে। তবে মাদ্রাসার সুপার আইয়ুব মজুমদার জানান, বর্তমানে তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। তার এক ছেলে মোঃ হাসান জামায়াতের রাজনীতি করেন। তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসন থেকে ৩, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ২, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ২, চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি ২, গোয়েন্দা সংস্থা ১ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একবার তদন্ত হয়েছে। এসব তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে জেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে জবাব দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।
×