ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়েমেনে আটকে পড়াদের ফিরিয়ে আনতে সহায়তা দেবে ভারত

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২ এপ্রিল ২০১৫

ইয়েমেনে আটকে পড়াদের ফিরিয়ে আনতে সহায়তা দেবে ভারত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইয়েমেনে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনতে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছে সরকার। এ বিষয়ে ভারত নীতিগতভাবে রাজিও হয়েছে। সেখানে দেড় থেকে তিন হাজার বাংলাদেশী রয়েছেন। এছাড়া আটকে পড়া নাগরিকদের জন্য কুয়েতে একটি হেল্প লাইন চালু করেছে সরকার। বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক এ সব কথা বলেন। পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক জানান, ইয়েমেনে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ভারতের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সঙ্গেও আলোচনা শুরু করেছে সরকার। এম শহীদুল হক জানান, ইয়েমেনে দেড় থেকে তিন হাজার বাংলাদেশী রয়েছেন বলে সরকারের হাতে তথ্য রয়েছে। সেখানে বিমান চলাচল না করায় কোন কর্মকর্তাকে পাঠানোও সম্ভব হচ্ছে না। তবে ইয়েমেনে আমাদের কর্মকর্তাদের পাঠানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে সেখানে যাওয়ার একমাত্র উপায় হলো সমুদ্রপথ। আশা করছি, আমরা সেখানে লোক পাঠাতে পারব। পররাষ্ট্র সচিব জানান, বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা ছাড়াও নয়াদিল্লীর সঙ্গেও আলোচনা হচ্ছে। কেননা ভারত সরকার জাহাজে করে ইয়েমেন থেকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের ইয়েমেন থেকে ফিরিয়ে আনতে ভারত নীতিগতভাবে রাজি হয়েছে। তারা বলেছে, নিজেদের সব নাগরিককে ফিরিয়ে আনার পর এবং আটকে পড়া বাংলাদেশীরা শনাক্ত হয়ে গেলে ভারত সহযোগিতা করতে পারে। বাংলাদেশীদের মধ্যে অধিকাংশই ইয়েমেনের এডেন এলাকায় রয়েছে। এখনও ইয়েমেন সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা ওই এলাকা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ইয়েমেনে বাংলাদেশের কোন মিশন নেই। কুয়েত হাইকমিশন থেকেই ইয়েমেনের দায়িত্ব দেয়া আছে। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব অনেক বেশি। এদিকে, বুধবার ভারতের গণমাধ্যম জানিয়েছে, ভারত সরকার ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অনুরোধ পেয়েছে বলে সেদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বন্ধুরাষ্ট্র বাংলাদেশের সহযোগিতায় তারা সম্ভব সব কিছুই করবেন। শহীদুল হক জানান, আটকে পড়া বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সৌদি আরবের দূতাবাস ও কুয়েতের দূতাবাসের সঙ্গেও এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এছাড়া এ বিষয়ে যোগাযোগ ও সহযোগিতার জন্য একটি ‘হেল্প লাইন’ চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশে আটকে পড়া বিহারীদের পাকিস্তান ফিরিয়ে নেবে না বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব বলেন, এ বিষয়ে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এ সম্পর্কে এ মুহূর্তে কোন মন্তব্য করতে চাইছি না। মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের প্রতিবেশী দেশ ইয়েমেনে গত কয়েক মাস ধরে অস্থিরতা চলছে। সম্প্রতি সে দেশের হুতি বিদ্রোহীরা রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এ অবস্থায় বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখান থেকে ফিরতে পারছেন না বাংলাদেশীরা। ইয়েমেনে বাংলাদেশের দূতাবাস না থাকায় তারা কোন সহায়তাও পাচ্ছেন না। এরই মধ্যে ইয়েমেনের রাজধানী সানায় আটকে পড়া বাংলাদেশী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা ও সিরাজুল হক সহায়তার আশায় বাংলাদেশে গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ইয়েমেনে আটকে পড়া মোস্তফা গত শনিবার গণমাধ্যমকে বলেছেন, এখানে বাংলাদেশের কোন দূতাবাস নেই, তাই কোন সাহায্যও পাচ্ছি না। পাকিস্তান দূতাবাসের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করেছিলাম, কিন্তু তারা বলছে, এ মুহূর্তে বিদেশী কোন নাগরিককে সেবা দেয়ার সুযোগ তাদের নেই এরপর ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সাড়া পাননি বলে জানান মোস্তফা। তিনি বলেন, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার অনেক আগেই দূতাবাস গুটিয়ে নিয়েছে। এখন বুঝতে পারছি না, কী করব? আপাতত সানায় হোটেল শাহরানে অবস্থান করছি। ইয়েমেনে বৈধ সরকারকে ফিরিয়ে আনতে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন অভিযানে সমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে ইয়েমেনের সার্বভৌমত্ব ও সীমানার অখ-তা রক্ষা এবং দেশটির জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী বৈধ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায়ও বাংলাদেশের সমর্থন রয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। হেল্প লাইন চালু ॥ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইয়েমেনে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বুধবার থেকে কুয়েতে হেল্প লাইন চালু হয়েছে। এ হেল্প লাইনে আটকে পড়া বাংলাদেশী নাগরিক ও তাদের স্বজনদের যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। এই হেল্প লাইনের নাম্বার-০০৯৬৫-৫০৫৭০৭৫৪, ০০৯৬৫-৯৪৯৩৪৩৬৩, ০০৯৬৭-৭৩৩৮৫৬৯৯৮।
×