ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চসিক নির্বাচন

মেয়র লড়াই আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার, বিএনপির মর্যাদার

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২ এপ্রিল ২০১৫

মেয়র লড়াই আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার, বিএনপির মর্যাদার

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ১২ প্রার্থীর প্রার্থিতা বুধবার যাচাই বাছাই শেষে বৈধ ঘোষিত হয়েছে। একজনের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। আগামীতে প্রত্যাহারের শেষদিনে এ পদে কজন প্রার্থী লড়াইয়ে নামবেন তা এখনও নিশ্চিত না হলেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আ জ ম নাছির উদ্দিন ও বিএনপি সমর্থিত এম মনজুর আলম এ পদ নিয়ে লড়াইয়ে থাকবেন এবং তাদের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে সীমাবদ্ধ থাকবে তা হলফ করে বলা যায়। অবশিষ্ট ১০ প্রার্থী শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের মাঠে থাকছেন কিনা তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন পর্যন্ত। এ নির্বাচন নিয়ে চট্টগ্রামের রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠছে। চূড়ান্ত রূপ নেবে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিনের পর থেকে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত আচরণবিধি মেনে চলতে গিয়ে মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের কেউ প্রকাশ্যে ভোট ভিক্ষায় নামতে না পারলেও সামাজিকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রার্থী ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টায় ইতোমধ্যে লিপ্ত হয়েছেন। একটি মেয়র পদ, ৪১টি সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৪ সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে চসিক নির্বাচনের ভোটের লড়াই নিয়ে ভোটারদের মাঝে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। তবে অন্যতম প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের আ জ ম নাছির উদ্দিন ও বিএনপির মনজুর আলমকে নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে সবচেয়ে বেশি। এসব আলোচনা ও জল্পনা কল্পনা থেকে বেরিয়ে এসেছে মনজুর আলমের জন্য এ লড়াই হবে মর্যাদার। আর আ জ ম নাছিরের জন্য হবে জনপ্রিয়তার। মনজুর আলম দ্বিতীয়বারের জন্য মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন। পক্ষান্তরে, আ জ ম নাছির প্রথমবারের মতো দলীয় সমর্থন পেয়ে নাগরিক কমিটির ব্যানারে ভোটের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হচ্ছেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়রসহ প্রার্থীদের বিজয়ের তালিকা বরাবরই আওয়ামী লীগ দলীয় সমর্থিতদের পক্ষে থাকলেও সর্বশেষ ২০১০ সালের নির্বাচনে মেয়রসহ সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের অধিকাংশ পদ বিএনপির পক্ষে চলে যায়। তবে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হয়। উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সাল থেকে চসিকের নির্বাচনী তৎপরতার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। চসিকের এবারের নির্বাচন ৫ম দফার। বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য তফসিল ঘোষণা করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনজুর আলম ইতোমধ্যে পদত্যাগ করে তাঁর মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। যাচাই বাছাইয়ে তাঁর প্রার্থিতা বৈধ বলেও ঘোষিত হয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও নাগরিক কমিটি মনোনীত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিনের প্রথম দফার মেয়র পদে লড়াইয়ে প্রার্থিতাও টিকেছে। দুজনই ব্যবসায়ী। আ জ ম নাছিরের রাজনীতি ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে শুরু। পক্ষান্তরে, এম মনজুর আলম আওয়ামী লীগ দলীয় সমর্থনে ইতোপূর্বে তিন দফায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে বিএনপির সমর্থনে মেয়র প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন। বিএনপির সমর্থন নিয়ে বিজয়ী হলেও বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাঁর সুদৃঢ় তেমন সম্পর্ক গড়ে উঠেনি বলে দাবি রয়েছে দলের পক্ষ থেকে। তারপরও দল যেহেতু তাকে সমর্থন দিয়েছে সে কারণে নির্বাচনী মাঠে তার জন্য কাজ করতে ২০ দলের সভায় একাট্টা হয়ে প্রস্তুতিতে লিপ্ত রয়েছেন। মনজুর আলম তাঁর বিগত বিজয়ের ধারাবাহিকতায় পুনরায় এ পদে নির্বাচিত হতে ব্যাপকভাবে তৎপর হয়েছেন। পক্ষান্তরে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত আ জ ম নাছির উদ্দিন দলের ভাবমূর্তি ও গৌরবকে অক্ষুণœ রাখতে সর্বশক্তি নিয়োগ করছেন। তাঁর সমর্থনে আওয়ামী লীগ শরিক ১৪ দল এক হয়ে তার জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। থানা ও ওয়ার্ড ভিত্তিক এমনকি পাড়ায় পাড়ায় কমিটি করার প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০১০ সালের নির্বাচনে মেয়রসহ কাউন্সিলর পদে পরাজয়ের গ্লানি মুছতে তাদের প্রয়াস থাকবে সর্বোচ্চ। পক্ষান্তরে, বিএনপিও আদাজল খেয়ে লেগেছে মেয়রসহ কাউন্সিলর পদে ব্যাপকভাবে বিজয় ঘরে তোলার জন্য। ২০ দল যেহেতু সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যাপকভাবে তৎপর। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের হরতাল প্রত্যাহার করা হলেও দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। এ অবরোধ কর্মসূচীর কোন সুফল না থাকলেও তারা এ কর্মসূচী থেকে পিছ পা হয়নি। বুধবার নগর বিএনপির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এবং চেয়ারপার্সনের আরেক উপদেষ্টা সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উভয়ই যুগপৎভাবে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিজয় ঠেকানোর সাধ্য নেই। তাদের মতে, সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেছে। এ নির্বাচনে কোন ধরনের কারচুপি না হলে জনরায় বিএনপি তথা ২০ দলের পক্ষে আসবে বলে তারা নিশ্চিত। পক্ষান্তরে, আওয়ামী লীগের পক্ষে নগর শাখার সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম ১৪ দলের নেতা ইন্দু নন্দন দত্ত জানিয়েছেন, এ নির্বাচনে ২০ দল সহিংসতার পথে না গেলে সুন্দর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দল সমর্থিত মেয়র ও বিক্ষিপ্তভাবে বিএনপি ও জামায়াত বিরোধী কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত। এর কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, বিএনপির সাম্প্রতিক সময়ে আন্দোলনের নামে যে নাশকতা দেশজুড়ে অব্যাহত রেখেছে তাতে তারা জনপ্রিয়তার শূন্যের কোঠায় চলে গেছে। সঙ্গত কারণে বিএনপি তাদের স্বভাবসুলভভাবে কারচুপির অভিযোগ তুললেও তা ধোপে টিকবে না। কারণ, সরকার ইতোমধ্যে এ নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের সর্বাত্মক প্রয়াস গ্রহণ করেছে। এবারের চসিক নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে এ নগরীর প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ে। এক্ষেত্রে সাবেক মেয়র ও বর্তমান মেয়র পদপ্রার্থী মনজুর আলম খুব বেশি যে সফল হননি তা ভোটাররা আলোচনায় আনছেন। পক্ষান্তরে, মেয়র পদে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিনের প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে তাঁর পক্ষে আওয়ামী লীগের কোন্দল ও বিভেদ নেই এবং ১৪ দল তাকে সমর্থন দিয়েছে। এ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা গতবারের চেয়ে বেড়ে ১৮ লাখে উন্নীত হয়েছে। বিরোধী দলের আন্দোলন সংগ্রামের নামে নাশকতায় ক্ষত বিক্ষত ভোটাররা আগামীতে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রামের মেয়র ও কাউন্সিলর পদে কাদেরকে নিয়ে আসতে উদ্যোগী হচ্ছেন তা বলে দেবে ভবিষ্যত।
×