ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র চূড়ান্ত অনুমোদন ৬ এপ্রিল

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১ এপ্রিল ২০১৫

সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র চূড়ান্ত অনুমোদন ৬ এপ্রিল

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ চূড়ান্ত অনুমোদন পাচ্ছে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র। আগামী ৬ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে এটি। দুর্নীতি ও অপচয় রোধ করতে এবং সামাজিক নিরাপত্ত কর্মসূচীতে কাক্সিক্ষত সাফল্য আনতে এই কৌশল হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার। এর আগে ২৫ মার্চ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ থেকে কৌশলপত্রের খসড়া পাঠানো হয়েছিল। ওইদিন পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম এ কৌশলপত্রের খসড়াটি মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপন করবেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জিইডির সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, আজ (মঙ্গলবার) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, এটি আগামী সোমবার অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপন করা হচ্ছে। অনুমোদনের পরই আমরা যেভাবে পরামর্শ দিয়েছি সেভাবেই ধাপে ধাপে এটি বাস্তবায়ন করবে সরকার। এটিই হবে বাংলাদেশের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র। তিনি জানান, দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ কৌশলপত্রটির খসড়া অবশেষে অনুমোদন পাচ্ছে। নতুন কৌশলপত্র অনুযায়ী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী উৎপাদনমুখী হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে বন্যা, ঝড় হলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খাদ্যশস্যভিত্তিক কর্মসূচীর ব্যবস্থা রয়েছে। আর বাকি সব কর্মসূচী হবে নগদ টাকাভিত্তিক। এ ছাড়া সত্যিকারের দরিদ্র জনগোষ্ঠী যাতে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় কর্মসূচীর সুবিধা ভোগ করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে সারা দেশে অতিদরিদ্রদের একটি স্বচ্ছ তালিকা প্রণয়নের পরিকল্পনাও করা হয়েছে। সূত্র জানায়, এই কৌশলপত্র বাস্তবায়নের মাধ্যমে বদলে যাচ্ছে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী। সেই সাথে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর এবং এ খাতে বিনিয়োগকে উৎপাদনমুখী করার উদ্যেগ নেয়া হচ্ছে। এজন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিতে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত করা হয়েছে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের খসড়া। এই কৌশলপত্রের মাধ্যমে বর্তমান চলমান প্রায় ১৪৫টি কর্মসূচীকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসা হবে। তাছাড়া আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। আসছে জীবনচক্রভিত্তিক সমন্বিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী। জিইডি সূত্র জানায়, সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীতে বরাদ্দ ১১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নতুন নীতিমালার আওতায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই বরাদ্দ ২০২১-২২ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়াবে ৬৬ হাজার ২০০ কোটি টাকায়। প্রস্তাবিত এ বরাদ্দের মধ্যে বিভিন্ন পেনশন, ভাতা ও বৃত্তিমূলক কর্মসূচীতে ২১ হাজার ২০০ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে আগামী অর্থবছরে, যা ২০২১-২২-তে বেড়ে দাঁড়াবে ৪৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকায়। জীবনচক্র পদ্ধতিতে তিন ধরনের কর্মসূচীতে মোট বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে গিয়ে দাঁড়াবে ২১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে নাগরিক ভাতা হিসাবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তিন হাজার ১০০ কোটি দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে হবে নয় হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে সরকারী চাকরিজীবীদের ভাতা খাতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে সাত হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে গিয়ে দাঁড়াবে ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। প্রতিবন্ধী ভাতা আগামী অর্থবছরে থাকবে ৬০০ কোটি টাকা, যা ২০২১-২২ সালে গিয়ে দাঁড়াবে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে শিশুদের ভাতা চার হাজার ৩০০ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ২০২১-২২ সালে গিয়ে দাঁড়াবে নয় হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে স্কুলের শিশুদের বৃত্তি দেয়া হবে তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা ২০২১-২২ সালে গিয়ে দাঁড়াবে আট হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অসহায় মহিলাদের জন্য আগামী অর্থবছরে প্রস্তাব করা হয়েছে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা ২০২১-২২ সালে গিয়ে তা দাঁড়াবে চার হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বিভিন্ন বিশেষ কর্মসূচীতে থাকবে এক হাজার ৪০০ কোটি, যা ২০২১-২২ সালে বেড়ে দাঁড়াবে দুই হাজার কোটি টাকা। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রস্তাব করা হয়েছে নয় হাজার ৭০০ কোটি টাকা, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে গিয়ে যা দাঁড়াবে ১৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকায়। ছোট ছোট কর্মসূচীর জন্য আগামী অর্থবছরে চার হাজার ২০০ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ২০২১-২২ সালে বেড়ে দাঁড়াবে পাঁচ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদন পেলে এই কৌশলপত্রের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী বাস্তবায়ন হবে তিন পর্যায়ে। প্রথম পর্যায় প্রারম্ভিক একত্রীকরণ ও সমন্বয় অংশ হবে ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত। বর্তমানে যে সকল মন্ত্রণালয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে তাদেরকে পাঁচটি ক্লাস্টারে বিন্যস্ত করা হবে। প্রতিটি ক্লাস্টারের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকবে একটি মন্ত্রণালয়। বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় তাদের নিজস্ব কর্মসূচীগুলোর নকশা প্রণয়ন ও কার্যকরী বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্বপূর্ণ হবে। ক্লাস্টারের থিমের সঙ্গে বলিষ্ঠ সংযোগ রয়েছে এমন একটি মন্ত্রণালয়ই ক্লাস্টার সমন্বযের দায়িত্ব পালন করবে। দ্বিতীয় পর্যায় সমন্বয় সাধন ও বাস্তবায়ন অংশ হবে ২০২১ সাল থেকে ’২৬ সাল পর্যন্ত। প্রথম পর্বের মতো সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারভিত্তিক সমন্বয়ের মাধ্যমে কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হবে। তবে একটি আধা-সায়ত্তশাসিত সামাজিক নিরাপত্তা সংস্থা সমন্বয় ও তদারকির দায়িত্বে থাকবে। সরকারী কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ, দারিদ্র্য ও নীতি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এ সামাজিক নিরাপত্তা সংস্থা গঠিত হবে। তৃতীয় পর্যায় জীবনচক্র কর্মসূচী ও অন্যান্য কর্মসূচীর সমন্বয় অংশ হবে ২০২৬ সালের পরবর্তী সময়ে।
×