ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চসিক নির্বাচন ॥ আওয়ামী লীগ বিএনপির জনসমর্থনের পরীক্ষা

জয়ের মালা নিয়ে মূল লড়াই হবে নাছির ও মনজুরের মধ্যে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১ এপ্রিল ২০১৫

জয়ের মালা নিয়ে মূল লড়াই হবে নাছির ও মনজুরের মধ্যে

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বিগত ১৯৯৪ সাল থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আনুষ্ঠানিক নির্বাচন শুরু হয়েছে। আসন্ন এ নির্বাচন হবে পঞ্চম দফার। এর আগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী নির্বাচিত হয়ে হ্যাট্টিক বিজয় অর্জন করেন। ২০১০ সালের চতুর্থ দফার নির্বাচনে মেয়র পদটি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলমের হাতে চলে যায়। নির্দলীয় নির্বাচন হলেও বরাবরই এ পদটিতে লড়াই হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর মধ্যে। এবারও একই অবস্থা। আওয়ামী লীগের সমর্থনে প্রার্থী হয়েছেন আ জ ম নাছির উদ্দিন। আর বিএনপির সমর্থনে আবারও প্রার্থী হয়েছেন সদ্য বিদায়ী মেয়র এম মনজুর আলম। যিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার একজন উপদেষ্টা। চট্টগ্রাম মহানগরীতে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে হাওয়া বইতে শুরু করেছে। আশা করা হচ্ছে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন অর্থাৎ ৯ এপ্রিলের পর থেকে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গন চূড়ান্তভাবে সরগরম হয়ে উঠবে। আওয়ামী লীগ নেতা নাছির উদ্দিন ১৪ দলের সমর্থন পেয়েছেন। আর মনজুর আলম সমর্থন পেয়েছেন ২০ দলের। তবে যেহেতু দলগত নির্বাচন নয় সেহেতু আ জ ম নাছির প্রার্থী হয়েছেন নাগরিক কমিটির ব্যানারে। আর মনজুর আলম প্রার্থী হয়েছেন চট্টগ্রাম নাগরিক আন্দোলনের ব্যানারে। ব্যানার যাই হোক নেপথ্যে এ নির্বাচন প্রকারান্তরে দু’দলেরই প্রেস্টিজের এবং জনসমর্থনের লড়াই হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মনজুর আলম বয়সে প্রবীণ। বিএনপির রাজনীতিতে নবীন। আর আ জ ম নাছির উদ্দিন আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে পুরনো। তবে মেয়রের মতো একটি পদের নির্বাচনে প্রথম হিসেবে নবীন বলা চলে। সঙ্গত কারণে এ নির্বাচন অনেকটা নবীন আর প্রবীণের লড়াই বললে অত্যুক্তি হবে না। এ দুই প্রার্থীর হলফনামা অনুযায়ী দু’জনই ব্যবসায়ী। তবে মনজুর আলম একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি। এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ছিল প্রস্তুতিতে। বিএনপির ছিল নীরবতা। সেই নীরবতা ভঙ্গ করে এখন বিএনপির সাবেক মন্ত্রী, এমপি, নেতাকর্মী ও সমর্থকরা তৎপর হয়েছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রধান করা হয়েছে সাবেক এমপি এম ইসহাক মিয়া ও সদস্য সচিব করা হয়েছে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে। পক্ষান্তরে, মনজুর আলমের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রধান করা হয়েছে সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান এবং তার প্রধান এজেন্ট হিসেবে আগেভাগে ঘোষণা করা হয়েছে সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে। এ নির্বাচনের লক্ষ্যণীয় একটি বিষয় হচ্ছে দু’দলেই মেয়র প্রার্থিতা নিয়ে মতভেদের শেষ ছিল না। আওয়ামী লীগে ছিল একাধিক প্রার্থী। আর বিএনপিতে ছিল কোন্দল। কিন্তু দু’দলেরই হাইকমান্ডের নির্দেশেই তা নিমিষেই নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। এখন বিজয়ের মালা কার গলায় পড়বে তার বল ভোটারদের হাতে। ভোটাররা একযোগে যেদিকে ঝুঁকবেন তিনিই পঞ্চমবারের মতো চসিকের মেয়র পদের চেয়ারটিতে আসীন হবেন। মেয়র পদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছিরের প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে তিনি প্রথমে রাজনীতিবিদ, পরে ক্রীড়াবিদ এবং সর্বশেষ ব্যবসায়ী। সে হিসেবে রাজনীতি, ক্রীড়াঙ্গন এবং ব্যবসায়ী মহলে তার সমর্থন রয়েছে। পক্ষান্তরে, বিএনপির সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এম মনজুর আলমসহ তাঁর পুরো পরিবার ব্যবসা ও শিল্পায়নের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। ব্যাংক, গার্মেন্টসসহ উৎপাদনমুখী বিভিন্ন শিল্প কারখানার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের সমর্থনে তিনবার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন তাঁর ১০ নং কাট্টলী এলাকা থেকে। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ আসনে তিনি আওয়ামী লীগের টিকেটে এমপি হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টিকেট না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আনারস মার্কায় নির্বাচন করেন। কিন্তু শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। অপরদিকে, আ জ ম নাছির উদ্দিন বহু বছর ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার পর গত প্রায় দুই বছর ধরে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন হয়ে দলের সাংগঠনিকসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন। বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলমের জন্য আবদুল্লাহ আল নোমান ও আমীর খসরু সবচেয়ে বেশি তৎপর। শনিবার থেকে সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনও মাঠে নামছেন বলে দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে স্পষ্ট প্রতীয়মান আওয়ামী লীগ ও বিএনপি স্ব স্ব প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে এক্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছেন। অবসান ঘটেছে ল্যাং মারামারি, কোন্দলসহ অনাকাক্সিক্ষত সকল ঘটনার। বিষয়টি নাছির উদ্দিনের ক্ষেত্রে প্লাস পয়েন্ট। পাশাপাশি বিএনপির সমর্থত প্রার্থী মনজুর আলমের জন্যও বিএনপি ও শরিক দলগুলোর ঐক্য এখন প্রকাশ্যে।
×