ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনারে মঞ্জুরি কমিশন প্রধান

মলিকিউলার বায়োলজি চিকিৎসা খাতে আমূল পরিবর্তন আনবে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১ এপ্রিল ২০১৫

মলিকিউলার বায়োলজি চিকিৎসা খাতে আমূল পরিবর্তন আনবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরী বলেছেন, উন্নত ও সুস্থ জীবনের জন্য মেডিক্যাল সায়েন্সের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসা বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিতে হলে মানসম্মত গবেষণার বিকল্প নেই। এটা নিশ্চিত করতে অতীতের তুলনায় বর্তমানে গবেষণার জন্য অর্থের পরিমাণ অনেক বাড়িয়েছে সরকার। গতানুগতিক চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিবর্তে মলিকিউলার বায়োলজির মাধ্যমে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের যুগান্তকারী চিকিৎসা ব্যবস্থার উদ্ভাবন সম্ভব। যা মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুও বৃদ্ধি করবে। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের চিকিৎসা সেক্টরে আমূল পরিবর্তন বয়ে আনবে। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডাঃ মিলন হলে ‘এ্যাপলিকেশন অফ এ্যাডভান্সড টেকনোলজি ইন বায়োমেডিক্যাল রিসার্স’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথি বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সহায়তায় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের হেকেপ প্রজেক্টের অধীন এ্যাসটাবলিসমেন্ট অফ এ সেন্টার ফর এ্যাডভান্সড বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ ও অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগ এ সেমিনারের আয়োজন করে। বেসিক সায়েন্স ও প্যারাক্লিনিক্যাল সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক এম ইকবাল আর্সলান-এর সভাপতিত্বে সেমিনারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান বিশেষ অতিথি এবং বিএসএমএমইউয়ের সম্মানিত উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোঃ রুহুল আমিন মিয়া, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ হেলথ সায়েন্সেসের (বিইউএইচএস) মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক (ড.) লিয়াকত আলী। সভাপতিত্ব করেন ও স্বাগত বক্তব্য রাখেনÑ বিএসএমএমইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও এ্যাসটাবলিসমেন্ট অফ এ সেন্টার ফর এ্যাডভান্সড বায়োমেডিক্যাল রিসার্চের সাব-প্রজেক্ট ম্যানেজার ডাঃ এসকে মোঃ খোরশেদ আলম। অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে সবরকমের সহায়তা প্রদান অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকিউলার বায়োলজির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বর্তমানে মলিকিউলার ডায়াগনসিস রোগ নির্ণয়ে অসাধ্য সাধন করছে। মলিকিউলার ডায়াগনসিস জেনেটিক লেভেলে অতি সামান্য ত্রুটি যেমন সিঙ্গেল নিউক্লিওটাইড পলিমরফিজম ও পয়েন্ট মিউটেশন অতিসূক্ষ্মভাবে নির্ণয় করে নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় করতে পারে। এর ফলে অসংখ্য বংশগত রোগের ডায়াগনোসিস সম্ভব হচ্ছে। অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান বলেন, গত ১০ বছরে মলিকিউলার বায়োলজির ভীষণভাবে উন্নতি ও অগ্রগতি হয়েছে। ৪৪ বছরে দেশে মেডিক্যাল সায়েন্সের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে রিসার্চ বেইসড মেডিক্যাল প্র্যাকটিসে পরিণত করা হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত গবেষণা কার্যক্রম নিশ্চিত করা হবে। এজন্য জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, সমঝোতার মাধ্যমে সমন্বিতভাবে গবেষণা কার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষার্থীসহ গবেষকবৃন্দ যাতে ইনটেলেকচ্যুয়াল প্লেজার নিয়ে কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করা জরুরী। সেমিনারে অন্য বক্তারা বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞান বায়োকেমিস্ট্রির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৫৩ সালে ডিএনএ’র ডাবল হেলিক্যাল গঠন আবিষ্কৃত হওয়ার পর বিগত ৬০ বছরে বায়োকেমিস্ট্রির অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছে। আর এ উন্নতির পিছনে রয়েছে বায়োকেমিস্ট্রির মলিকিউলার অ্যাপ্রোচÑ যার মাধ্যমে গড়ে উঠেছে বায়োকেমিস্ট্রির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত এক নতুন বিজ্ঞানÑ মলিকিউলার বায়োলজি বা অণুজীববিজ্ঞান। মূলত বায়োকেমিস্ট্রির ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে মাল্টিডিসিপ্লিনারি কৌশল ব্যবহার করে মলিকিউলার বায়োলজি একের পর এক জীববিজ্ঞানের নানা মৌলিক প্রশ্নের সমাধান বের করে চলেছে। তারই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ফল হিসেবে একবিংশ শতাব্দীর চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। শুধু তাই নয়, অদূর ভবিষ্যতে বায়োকেমিস্ট্রি এবং সেল ও মলিকিউর বায়োলজি রোগ নির্ণয় ও নিরাময় যে আরও অভিনব পদ্ধিতির প্রবর্তন করবে সেই ইঙ্গিত ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী মেডিক্যাল বায়োকেমিস্ট্রি রোগ সৃষ্টির অন্তর্নিহিত কারণ ব্যাখ্যা করে এবং রোগ নির্ণয় বা ডায়াগনোসিস-এ প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে। বক্তারা উল্লেখ করেন, সফলতা আসতে শুরু করেছে জিন থেরাপি আর স্টেমসেল থেরাপিতে। বক্তারা আরও বলেন, রোগ নির্ণয় চিকিৎসা সেবা এবং চিকিৎসা গবেষণায় মলিকিউলার বায়োলজির ব্যবহার আরও বাড়ানোর জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের নাম পরিবর্তন করে ‘ডিপার্টমেন্ট অব বায়োকেমিস্ট্রি এ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি রাখা জরুরী হয়ে পড়েছে। নতুন নামকরণের ফলে একদিকে যেমন প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে বিভাগের পূর্ণ গঠন সহজ হবে, অন্যদিকে তেমনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে বিভাগের কার্যাবলীর সঠিক পরিচিত তুলে ধরা যাবে। এমনকি ভাল মানের গবেষণার জন্য গ্র্যান্ট আকর্ষণ করাও সহজ হবে।
×