ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘সাম্প্রদায়িকতা রুখতে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার সংস্কৃতি’

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১ এপ্রিল ২০১৫

‘সাম্প্রদায়িকতা রুখতে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার সংস্কৃতি’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাম্প্রদায়িকতাকে রুখে দিতে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে সংস্কৃতি। এর কোন বিকল্প নেই। সংস্কৃতিচর্চার পরিধি বাড়লে সঙ্কুচিত হবে রক্ষণশীলতা। গান, নাটক কিংবা আবৃত্তিসহ সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত হলে রক্ষণশীলতার পরিবর্তে মানুষের ভেতরে জেগে উঠবে মানবিকতা। তাই সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে তৈরি হবে মুক্তচিন্তার মানুষ। এ কারণে শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার প্রতি সন্তানদের আকৃষ্ট করতে অভিভাবকদেরও বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। মঙ্গলবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে সংস্কৃতি প্রতিবেদকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, টেলিভিশন চ্যানেল ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের অংশগ্রহণে যৌথভাবে এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ। দেশের সংস্কৃতি চর্চার নানা বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রাণবন্ত আলোচনা করেন সংস্কৃতি। সংবাদকর্মীদের নানা প্রশ্নের উত্তর এবং এ বিষয়ে সরকারী বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন সংস্কৃতিমন্ত্রী। সরকারীভাবে কিছু নতুন সাংস্কৃতিক কমসূচী নেয়া হবে উল্লেখ করে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, রাজধানীর হাতির ঝিলে একটি সংস্কৃতি কেন্দ্র গড়ে তেলার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রামের মুসলিম ইনস্টিটিউটকে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। একইভাবে ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ও মরমী শিল্পী হাসন রাজার জন্মভিটাতেও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম গড়ার বিষয়েও সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী সার্ক সম্মেলন উপলক্ষে বগুড়ার মহাস্থানগড়কে সার্ক সিটি হিসেবে ঘোষণা করা হবে। প্রাথমিকভাবে ১০ কোটি টাকার শিল্পী কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়েছে। আগামীতে এই তহবিল ৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হবে। জাতীয়ভাবে সংস্কৃতি চর্চার অগ্রগতি প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ইতোমধ্যে দেশের প্রতি জেলায় শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম চলছে। পাশাপাশি ১২টি উপজেলায়ও মুক্ত মঞ্চ নির্মিত হয়েছে। তবে সংস্কৃতি চর্চাকে আরও বেগবান করে তুলতে উপযুক্ত মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় অবকাঠামোসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা থাকলেও শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীর অভাবে অনুষ্ঠান না হচ্ছে ঢাকার বাইরে। এজন্য শিশুদের সংস্কৃতিচর্চার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ভূমিকা রাখতে হবে। শৈশব থেকেই একজন মানুষের মধ্যে শিল্প ও সংস্কৃতিকে বিকশিত করার ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। এ জন্য শিক্ষা, সংস্কৃতি ও শিশু মন্ত্রণালয়কে একযোগে কাজ করতে হবে। আফসোস করে তিনি বলেন, অনেক জেলায় সরকারী গ্রন্থাগার থাকলেও সেখানে পাঠক খুঁজে পাওয়া যায় না। গণগ্রন্থাগারে মঞ্চস্থ গীতিনৃত্যালেখ্য ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’ ॥ মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সমন্বিত নৃত্যতাল আর সুরের ছন্দময়তায় মঞ্চস্থ হলো মুক্তিযুদ্ধনির্ভর গীতিনৃৃত্যালেখ্য ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক সংগঠন বহ্নিশিখার আয়োজনে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে ভারতের কলকাতার মঞ্জির সেন্টার ফর ড্যান্স কালচার বিশেষ এই গীতিনৃত্যালেখ্যটি পরিবেশন করে। এটির নির্দেশনা দিয়েছেন মালঞ্চ ঘোষ। এই আয়োজনে সহযোগিতা করেছে ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। মঞ্জির সেন্টার ফর ড্যান্স এ্যান্ড কালচারের গীতিনৃত্যালেখ্যটির পরিবেশনের আগে নৃত্য পরিবেশন করে বহ্নিশিখার শিল্পীরা। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বহ্নিশিখার সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার সন্দীপ চক্রবর্তী ও নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বহ্নিশিখার সাধারণ সম্পাদক রুপু খান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আজকের এই আয়োজনটি একেবারেই ভিন্নরকমের। এর আগে এই ধরনের পরিবেশনা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। কলকাতার একটি নৃত্যের দল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর একটি গীতিনৃত্যালেখ্য পরিবেশন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের কথা মনে পড়ে গেল। শরণার্থী শিবিরে ভারতের সাধারণ মানুষ বাংলাদেশের মানুষের পাশে তাদের যার যা সাধ্য ছিল তাই নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিল। নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, কলকাতার একটি দল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে একটি গীতিনৃত্যালেখ্য রচনা করেছে এটি আমাদের কাছে খুব ভাল লাগার একটি ব্যাপার। এই ধরনের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান অব্যাহত থাকলে সেটা উভয় দেশের জন্যই মঙ্গলজনক। সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আরও দৃঢ় হয়েছে। ভারতের শিল্পীরা এই গীতিনৃত্যালেখ্যটি রচনা করেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। দুটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ॥ পকেট সাইজ ‘সরকারী কাজে ব্যবহারিক বাংলা’ ও ‘প্রশাসনিক পরিভাষা ২০১৫’ শীর্ষক দু’টি গ্রন্থ সঙ্কলনের মোড়ক উন্মোচন করেছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক। মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ গ্রন্থ দু’টির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। প্রমিত ভাষারীতি সম্পর্কে কর্মকর্তাদের অবহিত করার মাধ্যমে সরকারী কাজে ভাষার শুদ্ধতা নিশ্চিত করার উদ্দেশে বাংলা একাডেমির প্রমিত বানান রীতি অনুসরণে এ গ্রন্থ দু’টি সঙ্কলিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারী সংস্থার প্রত্যাহিক কাজে এ গ্রন্থদ্বয় সহায়ক হবে।
×