ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

দূতাবাস না থাকায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া যায়নি এখনও, খোঁজখবর রাখা হচ্ছে কুয়েতী রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে

ইয়েমেনে অবরুদ্ধ ছয় হাজার বাংলাদেশী নিরাপত্তাহীনতায়

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১ এপ্রিল ২০১৫

ইয়েমেনে অবরুদ্ধ ছয় হাজার বাংলাদেশী নিরাপত্তাহীনতায়

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ ইয়েমেন গৃহযুদ্ধে ৬ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অন্য দেশের নাগরিকদের ইতোমধ্যে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। পাকিস্তান আটকে পড়া ৫শ’ নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে। ভারতীয় নাগরিকদেরও ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সৌদি জোট হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আকাশ ও স্থল অভিযান শুরু করার পর থেকে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশসহ অন্য দেশের নাগরিকরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ বেশ কয়েকটি বড় শহরে ব্যাপকহারে বোমাবাজি ও বিমান হামলা শুরুর পর থেকেই দেশটিতে বিদেশী কর্মী কাজ করতে পারছেন না। তারা যে যেখানে ছিলেন সেখানেই অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। দেশটি বাংলাদেশের ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার কাজ করেন। অবরুদ্ধ এ কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে কিনা তা এখন পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করে কোন কিছুই বলেনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ইয়েমেনে বাংলাদেশের কোন দূতাবাস না থাকায় দেশটিতে কুয়েতের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে খোঁজ-খবর রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে সেখান থেকে বাংলাদেশী কর্মীদের সরিয়ে নেয়া হবে। কুয়েতের রাষ্ট্রদূত আসাব উদ্দিন ইয়েমেনে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হযেছে। পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, মঙ্গলবার ইয়েমেন পরিস্থিতি নিয়ে একটি জরুরী বৈঠক করা হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যদি কোন বাংলাদেশী নাগরিক ইয়েমেন থেকে দেশে ফেরত আসতে চান তাহলে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। ভারত, সৌদি, ওমান, কুয়েত ও আইওএম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখন যে পরিস্থিতি তাতে সেখান থেকে কাউকে ফেরত আনাটাও কঠিন। বিদ্রোহীদের দমন করতে সৌদি আরবের নেতৃত্বে বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। হুতি বিদ্রোহীরা কিছুটা পিছু হটতে শুরু করেছে। তবে তারা চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কাউকে ফেরত আনা কঠিন বিষয়। তবে আমরা সার্বক্ষণিক ইয়েমন পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। কুয়েত, ওমান ও সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আপগ্রেড খবর জানানোর জন্য। এছাড়া আইওএমর সাহায্য চাওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি যদি আয়ত্বের বাইরে চলে যায় সে ক্ষেত্রে কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। ইয়েমেনে বাংলাদেশী কর্মীদের অবস্থা সম্পর্কে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব খন্দকার ইফতেখার হায়দারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার সঙ্গে কথা সম্ভব হয়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের বেশকিছু কর্মী দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরেই বসবাস করে আসছেন। তাদের যতটা না অসুবিধা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি অসুবিধায় হচ্ছে নতুন কর্মীদের। ইয়েমেন থেকে মোস্তফা নামের এক কর্মী টেলিফোনে জানান, এখানকার পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। পাকিস্তান ও ভারতের নাগরিকদের এমন পরিস্থিতিতে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ইউরোপসহ অন্য দেশের নাগরিকদের আগেই সরিয়ে নেয়া হয়। বাংলাদেশী অনেক কর্মী অবশ্য পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার দিকে খেয়াল রাখছেন। দ্রুত পরিস্থিতি শান্ত হলে তারা থেকেই যেতে চান। আবার অনেকে দেশে ফিরে যেতে চাইছেন। কিন্তু ইয়েমেনে বাংলাদেশের কোন দূতাবাস বা কনসুলার অফিস থাকলেও সেখানে গিয়ে আশ্রয় নেয়া যেত। ইয়েমেনের কাজ-কর্ম হয় কুয়েতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কোন কর্মকর্তার সঙ্গেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হতে থাকায় অনেক কর্মী এখন দেশে ফিরতে চান। কিন্তু কীভাবে, কার সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা দেশে ফিরতে পারবেন। এমন কোন পথ তাদের সামনে নেই। দেশে ফিরতে আগ্রহী নাগরিকরা বলেন বাংলাদেশ সরকার যেন তাদের দ্রুত উদ্ধারে এগিয়ে আসে। পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হওয়ায় বাংলাদেশে থাকা তাদের পরিবারের সদস্যরাও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে। আমরা এখানে কয়েক হাজার বাংলাদেশী আছি। কিন্তু কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। কোথায়, কীভাবে দেশে ফিরে যাবো তা বুঝতে পারছি না। ভারত পাকিস্তানসহ অন্যরা যারা ছিল তারা সবাই চলে গেছে। শুধু বাংলাদেশীরাই আটকে পড়ে আছি। আমরা কোথাও বের হতে পারছি না। কোন বার্তাও পাচ্ছি না। আমাদের এখান থেকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। বর্তমানে ইয়েমেনের রাস্তা-ঘাট সব বন্ধ। রাস্তায় শুধু বোমাবাজি হচ্ছে। বিমান থেকেও হামলা হচ্ছে। আমরা ঘরেও থাকতে পারছি না বাইরেও বের হতে পারছি না। আর কোম্পানিগুলোও কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। গত রবিবার ভারত আর পাকিস্তানের সবাই চলে গেছে। আমাদের এখানে দূতাবাস নেই। ইয়েমেনে চলমান পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
×