ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপের সেরা ১০ মুহূর্ত

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৩১ মার্চ ২০১৫

বিশ্বকাপের সেরা ১০ মুহূর্ত

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ চার বছর পর পর বিশ্বকাপ আসে। উল্লাস-উচ্ছ্বাস আর রোমাঞ্চকর সব মুহূর্তের জন্ম দিয়ে রবিবার শেষ হয়ে গেল বিশ্বকাপের একাদশতম আসর। তবে এ সময়ের মধ্যে অনেক চমকপ্রদ ঘটনা জন্ম দিয়েছে এই টুর্নামেন্ট, যা নজর কেড়েছে সবার। আর স্বপ্নের বিশ্বকাপের সেই সব অসাধারণ কিছু ঘটনা-প্রবাহ নিয়েই আজকের আয়োজন ১. ২০০ থেকে ৪০০! একাদশতম বিশ্বকাপই প্রথমবারের মতো ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেল। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ডাবল সেঞ্চুরির মাইলফলক স্পর্শ করেন ক্রিস গেইল (২১৫)। এরপর ডাবল সেঞ্চুরি করে গেইলের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যান মার্টিন গাপটিল (২৩৭*)। শুধু তাই নয়; চার শ’ রান ছাড়িয়ে যাওয়া দলীয় স্কোরেরও দেখা পেল একাদশতম আসর। এবারই প্রথম আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪১৭ রানের সর্বোচ্চ ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়া। বাকি দুই সর্বোচ্চ স্কোর দক্ষিণ আফ্রিকার। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের ৪১১/৪ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪০৮/৫। ২. উড়ল কিন্তু পড়ল না! এ যেন অবিশ্বাস্যই! আয়ারল্যান্ডের ইনিংসের দশম ওভারের চতুর্থ বল। বোলার তখন আমজাদ হোসেন। ব্যাটিংয়ে এড জয়েস। বোলার অফ স্ট্যাম্পের উপর ইয়র্কার করলেন। বল লাগল স্ট্যাম্পে, বেল উড়ল আকাশে, জ্বলে উঠল রেড লাইট! কিন্তু না! সবাইকে হতভম্ব করে দিয়ে বেল আবার ঠিকঠাক বসে পড়ল জায়গামতো! নটআউট! কী বলবেন একে? মীরাকল? যদিও এই বিশেষ ধরনের লাল বাতিসমৃদ্ধ বেলগুলো সাধারণ বেলের তুলনায় একটু ভারি। তারপরও এমন ঘটনায় সকলেই হতভম্ব। তবে এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০০৫ সালে ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মোহাম্মদ আশরাফুলও একবার এভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন ভাগ্যজোরে। ক্রিস ট্রেমলেটের করা হ্যাটট্রিক বলটি আশরাফুলের ব্যাট ছুঁয়ে মাটিতে ড্রপ খায়। এরপর সেটি উপরে উঠে বেলের উপর ড্রপ খেলেও ‘বেল’ নড়েনি জায়গা থেকে! ৩. ছোট দলের বড় তারা টেস্ট খেলারও অধিকার নেই। আইসিসির সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে হয়ত পরের বিশ্বকাপেও খেলতে পারবেন না। তবে নিজের প্রতিভার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন ঠিকই। ‘মিনোজ’দের প্রতিনিধি হিসেবে গ্রুপপর্বের ৬ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন স্কটল্যান্ডের জশ ডেভি। এবারের বিশ্বকাপে তার চেয়ে বেশি উইকেট আছে কেবল একজনেরই। ৫ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্কের দখলে ১৬ উইকেট। ৪. মাঠ কাঁপালেন পোকা ১৩ মার্চ হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে মুখোমুখি বাংলাদেশ এবং নিউজিলান্ড। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ গড়ল ২৮৮ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর। তবে এই স্কোর গড়ার পথটি খুব বেশি মসৃণ ছিল না। একে তো কঠিন প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড, তার ওপর এদিন মাঠে ছিল অসংখ্য পোকার আক্রমণ। অনাকাক্সিক্ষত এসব অতিথির আক্রমণে বেশ কয়েকবার অতিষ্ঠ হয়ে উঠতে দেখা গেছে টাইগারদের। শুধু কী টাইগাররা, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটাররাও এ পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচতে পারেননি। দুই দলের ক্রিকেটাররাই পোকার আক্রমণে বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন। হঠাৎই একবার দেখা গেল হেলমেট এবং গ্লাভস খুলে হাত-পা চুলকাচ্ছেন বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে শতক করা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককুলামকে তো চিৎকার করে স্প্রে চাইতেও দেখা গেছে। ৫. উদ্যাপন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সাফল্য পাওয়ার আনন্দ প্রকাশের পর খেলোয়াড়রা অনেক কিছুই করে থাকেন। ফুটবলের পরাশক্তি ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা অনেক সময় মাঠে দেশটির ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ‘সাম্বা’ পরিবেশন করে থাকেন। ক্রিকেটও তার বাইরে নয়, আনন্দ উদ্যাপনে অনেক নৃত্য চোখে পড়ে এখানে। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে ভারত-বাংলাদেশের ম্যাচ চলাকালীন অভিনব এক উদযাপন দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। অজিঙ্ক রাহানেকে আউট করার পর অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার সঙ্গে তাসকিনের শূন্যে লাফিয়ে উঠে বুকে বুক মিলিয়ে আনন্দ উদ্যাপনের মুহূর্তটি নিঃসন্দেহে বিশ্বকাপের সেরা। এমন দৃশ্য দেখে মেলবোর্ন স্টেডিয়ামের উপস্থিত ৮০-৯০ হাজারসহ পুরো ক্রিকেট বিশ্বই দারুণ রোমাঞ্চিত। ৬. তারপরও নায়ক রুবেল চিত্রনায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপির মামলায় বিশ্বকাপের ঠিক আগেই কারাগারে যেতে হয় বাংলাদেশের পেসার রুবেল হোসেনকে। কিন্তু বিশ্বকাপে খেলার জন্য জামিনে মুক্তি পান তিনি। আর বিশ্বকাপের বিশাল মঞ্চেই জ্বলে উঠেন রুবেল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন রুবেল হোসেন। ৭. ভদ্রলোকের খেলা একাদশতম বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে রোমাঞ্চকরভাবে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠার গৌরব অর্জন করে নিউজিল্যান্ড। জেতার পর গ্র্যান্ট ইলিয়ট পিচ থেকে টেনে তুলেছেন ডেল স্টেইনকে, যা এবারের বিশ্বকাপের সেরা ছবি। ফাইনালে নিশ্চিত হার জেনেও প্রতিপক্ষের অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক আউট হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে অভিনন্দন জানান ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম। এসব কিছুই প্রমাণ করে খেলাটা আসলেই ভদ্রলোকের! ৮. সেরা বিতর্ক! গড়াপেটা থেকে বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্য, বিশ্বকাপে এসব তেমনভাবে বিতর্কের আঁচ ফেলেনি। ডিআরএস নিয়ে ছোটখাটো ঝামেলা হয়েছিল। কিন্তু একাদশতম বিশ্বকাপে সবকিছুকেই ছাপিয়ে গেল ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের বিতর্ক। কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের দাদাগিরির কাছেই বাংলাদেশ হেরেছে বলে ক্রিকেটপ্রেমীদের অভিযোগ। আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্তের জন্যই ভারতের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়েছে বলে দাবি করেছেন আইসিসির সভাপতিসহ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও। ৯. তারকার জন্ম স্টিভেন স্মিথকে মানুষ চিনত ঠিকই, তবে একাদশতম বিশ্বকাপ তাকে নতুন করে পরিচিতি দিয়ে গেল। অস্ট্রেলিয়াকে পঞ্চমবার বিশ্বকাপ জেতানোর অন্যতম কারিগর এই স্মিথই। মোহাম্মদ সামিও ভারতীয় ক্রিকেটের তারকার আসন তৈরি করে নিলেন বিশ্বকাপের বাইশ গজেই। অসাধারণ পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে জেমস ফকনার হয়ে গেলেন ফাইনালের ম্যান অব দ্য ম্যাচ। এভাবেই বিশ্বকাপের মঞ্চে সরফরাজ আহম্মেদ, ওয়াহাব রিয়াজ, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, রুবেল হোসেন, কেন উইলিয়ামসনের মতো তারকার জন্ম দেখা গেল। ১০. শেষের আগে একাদশতম বিশ্বকাপই ছিল অনেকের শেষ। শেষটাও রাজকীয়ভাবে করলেন অনেকে। সেক্ষেত্রে সবার আগে আসে ড্যানিয়েল ভেট্টোরির নাম। দেড় বছর পর একদিনের ক্রিকেটে ফিরেই ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে ওঠেন ৩৬ বছর বয়সী নিউজিল্যান্ডের তারকা ক্রিকেটার। কম যাননি কুমার সাঙ্গাকারাও। ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে করলেন বিশ্বকাপে টানা ৪ সেঞ্চুরির অবিস্মরণীয় কীর্তি। জয়াবর্ধনে-আফ্রিদিরা অবশ্য তেমন কোনকিছু করতে পারেননি। কিন্তু বুড়ো মিসবাহ-উল হক ঠিকই চমক উপহার দিয়েছেন ব্যাট হাতে। তবে বিদায়ী বিশ্বকাপ ও একদিনের ম্যাচে সেরা প্রাপ্তি বোধহয় মাইকেল ক্লার্কেরই!
×