ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিনিয়োগ বোর্ডের দায়িত্ব পালন করতে হলো বাংলাদেশ ব্যাংককে

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৩১ মার্চ ২০১৫

বিনিয়োগ বোর্ডের দায়িত্ব পালন করতে হলো বাংলাদেশ ব্যাংককে

রহিম শেখ ॥ নিয়ম হচ্ছে তিন মাস, অথচ সাত মাস ধরে খালি বাংলাদেশের ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের প্রধান নির্বাহীর পদ। এর মধ্যে ছয় মাস ওই পদে বিনিয়োগ বোর্ডের ওয়ার্কপারমিট ছাড়াই দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানী এক নাগরিক। বিষয়টি জানার পরও ব্যবস্থা নেয়নি ওয়ার্কপারমিট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড। তবে ওই পদ থেকে সরিয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে অনুমতি না নিয়ে পাকিস্তানী ওই নাগরিকের দেশে অবস্থান এবং বর্তমানে ব্যাংকটিতেই কর্মরত রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদিকে উপ-মহাব্যবস্থাপক পদের এক কর্মকর্তাকে দিয়ে চালানো হচ্ছে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের কার্যক্রম। জানা গেছে, বাংলাদেশে কাজ করছে এমন বিদেশী ব্যাংকগুলোর স্থানীয় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পদ তিন মাসের বেশি খালি রাখা যাবে না মর্মে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলার জারি করে। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৯৯১-এর ১৫ ক (২) ধারা তুলে ধরে এতে বলা হয়েছে, কোন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ টানা তিন মাসের বেশি শূন্য রাখা যাবে না। এই বিধান বাংলাদেশে কার্যরত বিদেশী ব্যাংকের স্থানীয় প্রধান নির্বাহীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এসব পদে বিদেশী নাগরিক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বোর্ডের কাজের অনুমতিসহ (ওয়ার্কপারমিট) প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, আইনের এ ধারাটি আগেও বিদেশী ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। এ বিষয়ে ২০১৩ সালে একটি সার্কুলারও জারি করা হয়েছিল। অন্যান্য বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা যেভাবে বাংলাদেশে কাজ করেন, সেই একই নিয়ম বিদেশী ব্যাংকগুলোর সাধারণ কর্মকর্তাদের জন্যও প্রযোজ্য। তারা বিনিয়োগ বোর্ড থেকে অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়ে কাজ করতে পারেন। কিন্তু প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ক্ষেত্রে সেটি সম্ভব নয়। কারণ এ দেশের অন্যান্য ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে তাদের কাজ করতে হয়, সব ধরনের বৈঠকে যোগ দিতে হয়। তাছাড়া এসব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিয়েই কাজ করে। এ জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেয়ার আইনী বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। অথচ সাত মাস ধরে খালি বিদেশী মালিকানাধীন ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের প্রধান নির্বাহীর পদ। গতবছর আগস্ট মাসে ওই পদে একজন কর্মকর্তা যোগ দিতে এলেও বিনিয়োগ বোর্ডের অনুমোদন না পাওয়ায় পদটি এখনও শূন্য। বর্তমানে ব্যাংকটিতে উপ-মহাব্যবস্থাপক মোঃ খবিরুল হক খান ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আমাকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, আমি দায়িত্ব পালন করছি। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে মহাব্যবস্থাপক পদটি শূন্য এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নতুন মহাব্যবস্থাপক কবেনাগাদ যোগদান করবে তা আমি জানি না। সাবেক মহাব্যবস্থাপক ইমরান ভাট সম্পর্কে জানতে চাইলে খবিরুল হক বলেন, তিনি (ইমরান ভাট) এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছেন এবং ব্যাংকেই কর্মরত রয়েছেন। ব্যাংকটির হেড অব ইন্টারন্যাশনাল কন্ট্রোল এ্যান্ড কমপ্লায়েন্স মোঃ শামসুজ্জামান ভূঁইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, সত্বরই ব্যাংকটিতে নতুন কোন মহাব্যবস্থাপক যোগদান করবেন কি-না তা তিনি জানেন না। সূত্র জানায়, গত সাত মাস ধরে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের প্রধান নির্বাহীর পদ শূন্য থাকলেও ছয় মাস অবৈধভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানী এক নাগরিক। মহাব্যবস্থাপক পদে বিনিয়োগ বোর্ডের ওয়ার্কপারমিট ছাড়াই দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের নাগরিক ইমরান ভাট। বিষয়টি জানার পরও ব্যবস্থা নেয়নি ওয়ার্কপারমিট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক শাস্তিমূলকভাবে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেয় ওই কর্মকর্তাকে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের পূর্বের কান্ট্রি অফিসার দায়িত্ব শেষ হয় ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে। তার স্থানে আসে প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক ইমরান ভাট। কিন্তু বিনিয়োগ বোর্ডের পারমিট নেয়ার ব্যাপার থাকলেও অনুমতি ছাড়াই দায়িত্ব পালন করে তিনি। এ ব্যাপারে ন্যাশনাল ব্যাংক পাকিস্তান সূত্র জানায়, ইমরান ভাট ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের বাংলাদেশ অফিসের দায়িত্ব নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে কান্ট্রি অফিসার হিসাবে অনাপত্তি চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৪ সালের ২৫ আগস্ট বিনিয়োগ বোর্ডের ওয়ার্কপারমিট প্রাপ্তি সাপেক্ষে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়। কিন্তু আট মাস ধরে ওয়ার্কপারমিট ছাড়াই বাংলাদেশ অবস্থান করে চলেছে। ব্যাংক অব পাকিস্তানের বাংলাদেশ শাখারও এ ব্যাপারে কোন তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে জানায়নি। বিনিয়োগ বোর্ডে বিদেশী নাগরিকদের দেশে দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানে কাজে অনুমতি প্রদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে ন্যাশনাল ব্যাংকের পক্ষ থেকে অনুমতি চাওয়া হয়। এর পরপরই আমরা অনাপত্তির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। ইমরান ভাটের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমরা কোন চিঠি পাইনি। ইমরান ভাটের অবৈধভাবে দেশে অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, বিদেশী কোন নাগরিক ১৫ দিনের ই-ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। তারপর অনুমতি সাপেক্ষ দেশে অবস্থান করার কথা। কিন্তু আগস্ট থেকে প্রায় সাত মাস সময় ধরে তিনি দেশে অবস্থান করছেন কিনা আমাদের জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মাহাফুজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের কান্ট্রি অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালনের অনুমিত দেয়া হয়েছিল। ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান বাংলাদেশ শাখা ইমরান ভাটের জন্য বিনিয়োগ বোর্ডের ওয়ার্কপারমিট দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংককে। এই দীর্ঘ সময়ে ওয়ার্কপারমিট ছাড়া কিভাবে অবস্থান করছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি।
×