ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

জামালপুরের ৮ রাজাকারের বিরুদ্ধে ১৩ এপ্রিল ফরমাল চার্জ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৩১ মার্চ ২০১৫

জামালপুরের ৮ রাজাকারের বিরুদ্ধে ১৩ এপ্রিল ফরমাল চার্জ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামালপুরের আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা আশরাফ হোসেনসহ আট রাজাকারের বিরুদ্ধে ১৩ এপ্রিল ফরমাল চার্জ দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে কিশোরগঞ্জের ক্যাপ্টেন (অব) নাসির উদ্দিনসহ ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ১৫ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি পটুয়াখালীর রাজাকার কমান্ডার ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে ১৩তম সাক্ষীর জেরা করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। ৬ এপ্রিল পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দী প্রদান করা হবে। একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের ১৩তম সাক্ষী মোঃ আবদুল হামিদ মল্লিকের (৫৯) এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কিত তথ্য ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বরাবর জমা দিতে সুবিদখালী রহমান ইসহাক পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসককেও ট্রাইব্যুনালের আদেশ পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে ডকুমেন্ট প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আরেক মামলায় কিশোরগঞ্জের রাজাকার হাসান আলীর বিরুদ্ধে মামলার ২৬তম সাক্ষী ও তদন্ত কর্মকর্তা হরি দেবনাথ জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দী শেষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আব্দুস শকুর খান আংশিক জেরা করেছেন। আজ অসমাপ্ত জেরা করা হবে। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। জামালপুরের ৮ রাজাকারের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ প্রদানের জন্য প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল তিন সপ্তাহের সময় চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল দুই সপ্তাহের সময় অনুমোদন করে ১৫ এপ্রিল ফরমাল চার্জ দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -২ এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম। আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট মোঃ তারিকুল ইসলাম। এর আগে ৮ রাজাকারের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও গুমের ১০টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনেছে তদন্ত সংস্থা। আসামিরা হলেন আলবদর বাহিনীর উদ্যেক্তা আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক শরীফ আহম্মেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মোঃ আবদুল মান্নান, মোঃ আবদুল বারী, মোঃ হারুন, মোঃ আবুল হাশেম, শামসুল হক ওরফে বদর ভাই ও এস এম ইউসুফ আলী। প্রসিকিউশনের আবেদনে গত ৩ মার্চ আশরাফ হোসেনসহ ওই আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। পরোয়ানা জারির পর ওইদিনই বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে অভিযান চালিয়ে জামালপুর শহরের নয়াপাড়ায় নিজ বাড়ি থেকে শামসুল হককে ও ফুলবাড়িয়ার জাহেদা শফির মহিলা কলেজ গেট প্রাঙ্গণ থেকে ইউসুফ আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই দুইজনকে তদন্তের স্বার্থে গত ৬ মার্চ সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন। ফোরকান মল্লিক ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পটুয়াখালীর রাজাকার ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৩তম সাক্ষী আব্দুল হামিদ মল্লিকের জেরা করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য ৬ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ প্রদান করেছেন। অন্যদিকে ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় একটি আদেশ প্রদান করেছেন। ১৩তম সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেছেন, এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন ৭৪ সালে। কিন্তু ফেল করেছেন। এর পর তিনি আবারও বলেছেন, তিনি ৮৫ সালে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন এবং পাস করেছেন। এখন ট্রাইব্যুনালের জানা প্রয়োজন তার প্রকৃত বয়স কত। সুতরাং ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেয়া হলো যে, তার রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কিত তথ্য প্রেরণ করার জন্য। একইসঙ্গে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হলো যে, ওই স্কুল থেকে ডকুমেন্টস সংগ্রহ করে এই ট্রাইব্যুনালের আদেশ পাওয়ার ২ সপ্তাহের মধ্যে প্রেরণের জন্য। নাসির সহ ৫ জন ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত কিশোরগঞ্জের ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ১৫ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ প্রদান করেছেন। প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা বেগম চমন। কিশোরগঞ্জের দুই সহোদর ক্যাপ্টেন নাসির উদ্দিন আহম্মেদ ও আইনজীবী শামসুদ্দিন আহম্মেদের মামলায় আরও তিন রাজাকারের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই তিনজন হলেন রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান, মোঃ হাফিজ উদ্দিন ও মোঃ আজাহারুল ইসলাম। ২২ ফেব্রুয়ারি এই তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। উল্লেখ্য, এ মামলায় দুই ভাইয়ের মধ্যে নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পলাতক রয়েছেন। পুলিশ সামুদ্দিন আহম্মেদকে গ্রেফতারে সমর্থ হয়েছেন।
×