ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

মোবাইল ফোনে এক শতাংশ সারচার্জের নতুন আইন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৩১ মার্চ ২০১৫

মোবাইল ফোনে এক শতাংশ সারচার্জের নতুন আইন হচ্ছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মোবাইল ফোনের ব্যবহারের ওপর ১ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপের বিধান রেখে নতুন একটি আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘উন্নয়ন সারচার্জ ও লেভি (আরোপ ও আদায়) আইন ২০১৫’র খসড়ার এই অনুমোদন দেয়া হয়। এদিকে মন্ত্রিসভা বৈঠকে আলোচনা হয় বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। মূলত তারা এখন সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছে বলে মন্ত্রিসভার সদস্যরা মন্তব্য করেছেন। বৈঠক শেষে একাধিক মন্ত্রী জনকণ্ঠকে বলেন, অনির্ধারিত আলোচনায় প্রায় সকলেই বিএনপির আন্দোলন নিয়ে কথা বলেন। শুরুতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক(চুন্ন) বলেন, বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। তারা রীতিমতো ‘ফেল’ করেছে। তার এই বক্তব্যের সঙ্গে কণ্ঠ মেলান মন্ত্রিসভার উপস্থিত প্রায় সকল সদস্য। এ সময় বলা হয়, তারা আন্দোলনও করবে আবার নির্বাচনও করবে। বিএনপির বিষয়টা হলো গাছেরও খাব আবার তলারও কুড়াব। এ সময় মন্ত্রিসভার সিনিয়র এক সদস্য বলেন, যে দল সিদ্ধান্ত হীনতায় ভোগে তারা সঠিকভাবে কিছু করতে পারেন না। সূত্র জানায়, এই সকল আলোচনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি এখন বিবৃতিনির্ভর দল হয়ে পড়েছে। শুধু বিবৃতির মাধ্যমে তো রাজনৈতিক কর্মসূচী চালানো সম্ভব নয়। এছাড়া তারা জনগণের স্বার্থ রক্ষায় কোন কর্মসূচী দিতে পারেনি। যে কারণে আন্দোলন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ সময় অপর এক মন্ত্রী বলেন, ক্রিকেট টিম জেতায় তারা হরতাল প্রত্যাহার করেছে। সিটি কর্পোরেশন আসন্ন হওয়ায় বিএনপি হরতাল প্রত্যাহার করছে। কিন্তু দেশের পাবলিক (এসএসসি) পরীক্ষার সময় তারা হরতাল প্রত্যাহার করেনি। দেশের লোক শিক্ষিত হোক তা তারা চায় না। আসলে বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরা শিক্ষার গুরুত্ব বোঝেন না। তাই তারা চায় না দেশের মানুষ শিক্ষিত হোক। তারা দেশের মানুষের স্বার্থ দেখে না। তারা দেখে শুধু তাদের পরিবারের স্বার্থ। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, মোবাইল ফোনের ব্যবহারের ওপর ১ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপ হবে। মোবাইল কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে যে বিল নিচ্ছে তার সঙ্গে এই ১ শতাংশ সারচার্জ যোগ হবে। সরকার মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে এই সারচার্জ আদায় করবে। মোবাইল ফোনে যত ধরনের সেবা রয়েছে তার ওপরই এই সারচার্জ প্রযোজ্য হবে। জাতীয় সংসদে আইন পাস হলে এই সারচার্জ কার্যকর হবে। তিনি বলেন, এ আইনের আওতায় মোবাইল অপারেটর কর্তৃক সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবার বিনিময়ে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থের ওপর ১ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। এ বাবদ বছরে অতিরিক্ত ১৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এই অর্থ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে। সুনির্দিষ্ট কোন খাতে জনগণের কাছ থেকে অর্থ তুলতে সারচার্জ আরোপ করে সরকার। এক সময় যমুনা সেতু (বঙ্গবন্ধু সেতু) তৈরিতে সরকার সারচার্জ আরোপ করেছিল। তখন বাস-ট্রেনের টিকেট, সিনেমার টিকেট কাটার সময় অতিরিক্ত টাকা নেয়া হতো, যা যমুনা সেতুর তহবিলে যেত। চলতি বছর প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর সারচার্জ আরোপের কোন প্রস্তাব না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুল্ক আরোপের কয়েকটি প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা এবং মোবাইল ফোনের ব্যবহারের ওপর সারচার্জ আরোপের এই প্রস্তাব করেন। সংসদে দেয়া বক্তৃতায় তিনি বলেন, মোবাইল ফোনের আমদানির ওপর শুল্ক কিছুটা হ্রাস করতে পারেন। মোবাইল ফোনের ব্যবহারের ওপর সারচার্জ বসাতে পারেন। এ থেকে যে রাজস্ব আসবে সেটা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ব্যবহার করতে পারি। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব গ্রহণ করে অর্থমন্ত্রী মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর সারচার্জ আরোপের ঘোষণা দেন এবং অর্থবিলে তা পাস হয়। সরকারের ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট বিভাগ ১ শতাংশ সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব রেখে একটি সারসংক্ষেপ অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এর আগে গত বছর বিষয়টি প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় উঠলে মোশাররাফ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এনবিআর হিসাব করে দেখিয়েছে, দেশের মোবাইল ব্যবহারকারীরা প্রতিমাসে গড়ে ২০০ টাকা ব্যবহার করেন। এর ১ শতাংশ হিসাবে জনপ্রতি সারচার্জ দাঁড়ায় গড়ে ২ টাকা। প্রত্যেক সিম ব্যবহারকারী প্রতিমাসে গড়ে ২ টাকা করে পরিশোধ করবেন। এতে সরকারের খাতায় জমা হবে বছরে ১৪০ কোটি টাকা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির গত জানুয়ারি মাসের হিসাবে দেশে মোবাইল ফোন সংযোগের সংখ্যা ১২ কোটি ১১ লাখের বেশি হলেও সব সিম একসঙ্গে কার্যকর থাকে না।
×