ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৭৩ হাজার

হরতালে পেছাবে না উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা, আগামীকাল শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৩১ মার্চ ২০১৫

হরতালে পেছাবে না উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা, আগামীকাল শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামীকাল থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বসছে ১০ লাখ ৭৩ হাজার ৮৮৪ জন পরীক্ষার্থী। গেল বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী কমেছে ৬৭ হাজার ৪৯০ জন। আগামী ১১ জুন পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষা চলবে। ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে ১৩ থেকে ২২ জুন পর্যন্ত। সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে পরীক্ষার এ তথ্য তুলে করে আবারও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটকে হরতাল-অবরোধ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বলেছেন, কোন হরতাল-অবরোধ আসলে হচ্ছে না। পরীক্ষা না নিলে ছেলেমেয়েদের এক বছর নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এসএসসির হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ক্ষতি করা হয়েছে নাশকতা চালিয়ে। আমরা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে পরীক্ষা নিচ্ছি। আতঙ্কের মধ্যে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে। এটা কাটিয়ে উঠতে তাদের ৩০-৪০ বছর লাগবে, আমাদের এর খেসারত দিতে হবে। সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন বোর্ডের পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা, পরীক্ষার প্রস্তুতিসহ সার্বিক দিক তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব স্বপন কুমার সরকার, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা গ্রহণের সবরকমের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এবার ২৬-২৮ এপ্রিলের পরীক্ষা বাদে বাকি সব পরীক্ষা রুটিনমাফিক অনুষ্ঠিত হবে। এর কোন ব্যত্যয় হবে না। ওই সময়ের পরীক্ষা কেবল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের কারণে পরিবর্তন হবে। নির্ধারিত সূচী অনুযায়ী বুধবার থেকেই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শিক্ষামন্ত্রী পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় দেশবাসীর কাছে রাস্তায় রাস্তায় পাহারা দেয়ার আহ্বান জানান। বলেন, গত এসএসসি পরীক্ষার সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, যারা হরতালের সঙ্গে নেই এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন, সমাজসেবী এবং সাধারণ মানুষ যার যার এলাকায় সংঘবদ্ধ হয়ে ছেলেমেয়েদের কেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তায় পাহারা দিয়েছে। ‘আশা করছি, এবারও যাতায়াতের পথে সাহায্য করবেন, যাতে নিরাপদে তারা কেন্দ্রে যেতে পারে। নিরাপদে পরীক্ষা নেয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন সমস্ত ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করেছি। মন্ত্রী আরও বলেন, যারা হরতাল দিয়ে পরীক্ষায় বাধা সৃষ্টি করেছেন তাদের কাছে আহ্বান জানাব, তিন মাসের অভিজ্ঞতা, মানুষের মনোভাব এবং ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা পরীক্ষা নির্বিঘœ করার ব্যবস্থা করবেন। পরীক্ষার দিন হরতাল দেবেন না। এতে তারা ছোট হবেন না, বরং বড় হবেন। এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দুই হাজার ৪১৯টি কেন্দ্রে পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। অংশ নেবে আট হাজার ৩০৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০ লাখ ৭৩ হাজার ৮৮৪ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ৫ লাখ ৭০ হাজার ৯৯৩ জন ছাত্র এবং ৫ লাখ ২ হাজার ৮৯১ ছাত্রী। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবারই প্রথম তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, এবার বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের কারণে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা একটিও রুটিনমাফিক নেয়া সম্ভব হয়নি। এটি এদেশের পাবলিক পরীক্ষার ইতিহাসে একটি নেতিবাচক উদাহরণ হয়ে থাকবে। তিনি সারাদেশে হরতাল-অবরোধের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা গ্রহণ করায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন, রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এবারও আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা চাই। কোনভাবেই দুষ্টচক্রকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বা ফেসবুকে প্রশ্নপত্রে নামে সাজেশন প্রকাশ করার সুযোগ দেয়া হবে না। আমাদের সবগুলো এজেন্সি তৎপর থাকবে, ধরতে পারলে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশের সকল ফটোকটি মেশিন বন্ধ রাখা হবে। কোচিং সেন্টারগুলো কড়া নজরদারিতে থাকবে। তিনি পরীক্ষার সময় নতুন কোন হরতাল-অবরোধ না দেয়া এবং পাবলিক পরীক্ষাকে পূর্বের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচীর আওতাবহির্ভূত রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি অনুরোধ জানান। মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে পরীক্ষায় সার্বিক সহযোগিতার জন্য সকল বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের শিক্ষাসচিবের স্বাক্ষরে আধা সরকারী পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১৭তম ফ্লোরে ১৭২২ নম্বর কক্ষে একজন উপসচিবের দায়িত্বে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু থাকবে। তার মোবাইল ফোন নম্বর- ০১৭১১-৩১৭১৩৬। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ফোন নম্বর- ৯৫৪৯৩৯৬, ০১৭৭৭-৭০৭৭০৫ ও ০১৭৭৭-৭০৭৭০৬। ই-মেইল আইডি: (বীধসপড়হঃৎড়ষৎড়ড়স @সড়বফঁ.মড়া.নফ) এবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৩৩৪টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেবে দুই লাখ ৭৬ হাজার ২২৭ জন। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ১৮৪টি কেন্দ্রে এক লাখ ৭ ০৯ জন, কুমিল্লায় ১৭৫টি কেন্দ্রে এক লাখ ৯৭৪ জন, যশোরে ২১২টি কেন্দ্রে এক লাখ ১৬ হাজার ৯০৫ জন, চট্টগ্রামে ৯২টি কেন্দ্রে ৮০ হাজার ৬৯৩ জন, বরিশালে ১০৯টি কেন্দ্রে ৫৬ হাজার ৬০০ জন, সিলেটে ৭৫টি কেন্দ্রে ৫৮ হাজার ৬৩ জন, দিনাজপুরে ১৮২টি কেন্দ্রে ৯০ হাজার ৩৮১ জন, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ৪১৮টি কেন্দ্রে ৮৪ হাজার ৩৬০ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৬২০টি কেন্দ্রে ৯৮ হাজার ২৪৭ জন পরীক্ষার্থী। হরতাল-অবরোধের মধ্যেই এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোন হরতাল-অবরোধ আসলে হচ্ছে না। আপনারাও দেখছেন। পুরো জাতি দেখছে। পরীক্ষা না নিলে ছেলেমেয়েদের এক বছর নষ্ট হয়ে যেতে পারে। পাবলিক পরীক্ষার মধ্যে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচী না রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আবারও আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী। বিএনপি জোটের অবরোধ-হরতালে চলতি এসএসসি ও সমমানের সবগুলো অর্থাৎ ১৬ দিনের ৩৬৮টি পরীক্ষা পেছাতে বাধ্য হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরীক্ষাগুলো নেয়া হয় ছুটির দিনে, শুক্র ও শনিবার। এবার বাংলা প্রথম পত্র, রসায়ন, পৌরনীতি, ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ, জীববিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবসায় উদ্যোগ ও ব্যবহারিক ব্যবস্থাপনা, সমাজ বিজ্ঞান এবং কম্পিউটার শিক্ষা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রসহ মোট ২৫টি বিষয়ে পরীক্ষা হবে সৃজনশীল প্রশ্নে। এইচএসসিতে ২০১২ সালে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা সৃজনশীল প্রশ্নে হয়। এবারও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা শ্রুতিলেখক নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে। এক্ষেত্রে দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নরতদের শ্রুতিলেখক হিসেবে নেয়া যাবে। পরীক্ষার্থী কম হওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সালে এইচএসসিতে বেশি ফেল করেছিল। এতে পরের বছর অনিয়মিত শিক্ষার্থী বেশি ছিল, তাই তখন মোট শিক্ষার্থী বেশি হয়েছিল। এবার অনিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। অনেক প্রতিষ্ঠান ১০০ ভাগ পাস দেখানোর জন্য একটু দুর্বল শিক্ষার্থীদের আটকে দেয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নবম শ্রেণীতে ও একাদশ শ্রেণীতে যারা রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) করে তাদের মধ্য থেকে কতজন পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে তা আমরা দেখব। কি কারণে নিবন্ধিত শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিল না তা প্রতিষ্ঠানকে জানতে হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোচিং সেন্টারগুলো এবার নজরদারির মধ্যে রয়েছে। আর পরীক্ষার সময় ফটোকপির দোকান (পরীক্ষা কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী) খুলতে দেবে না আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
×