ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্লার্কের রাজসিক বিদায়

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৩০ মার্চ ২০১৫

ক্লার্কের রাজসিক বিদায়

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ এমন বিদায় ক’জনের ভাগ্যে জোটে? আগের দিন হুট করেই জানিয়েছিলেন, ফাইনালই হবে শেষ ওয়ানডে। দেশকে পঞ্চম শিরোপা-উৎসবে ভাসিয়ে রঙ্গিন পোশাকের ক্রিকেটকে স্বপ্লীল বিদায় জানালেন মাইকেল ক্লার্ক। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক নাম লেখালেন কিংবদন্তির কাতারে। তৃতীয় অধিনায়ক হিসেবে দেশকে পঞ্চম বিশ্বকাপ ট্রফি উপহার দিলেন ৩৩ বছর বয়সী নিউসাউথ ওয়েলস হিরো। তার আগে অসিদের বিশ্বকাপ জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন এ্যালান বোর্ডার (১৯৮৭), স্টিভ ওয়াহ (১৯৯৯) ও রিকি পন্টিং (২০০৩, ২০০৭)। ক্লার্কের এবারের বিশ্বকাপে মাঠে নামাটাই ছিল নাটকীয়, ইনজুরি-ফিটনেসহীনতায় খেলা নিয়ে ছিল সংশয়। সেই তিনিই আজ ইতিহাস! মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সোনালি ট্রফি উঁচিয়ে ধরলেন মাইকেল জন ক্লার্ক। তাকে ঘিরে উল্লাসে মাতলেন সতীর্থতরা। আইসিসির অফিসিয়াল মাইক্রোফোনে ঘোষিত হলো ‘চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক ক্লার্ক।’ হাস্যোজ্জ্বল ক্লার্ক, উল্লসিত গ্যালারি। এক জীবনে একজন ক্রিকেটারের এমন প্রাপ্তি খুব কমই। আসরে আগের ছয় ম্যাচে সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ৬৮ রানের, গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ও সেমিতে সাজঘরে ফিরেছেন ৮ ও ১০ রান করে। সেই তিনিই কাল ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকে। জ্বলে উঠলেন ইতিহাস গড়ার ক্ষণে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৪ রানের ইনিংস খেলে নেতৃত্ব দিলেন সামনে থেকে। কিউইদের ১৮৩ রানের সাদামাটা স্কোর টপকাতে হারাতে হলো মাত্র ৩ উইকেট। ৩৩.১ ওভারেই ৭ উইকেটের বিশাল জয় অস্ট্রেলিয়ার। আহ কি সমাপ্তি! হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন বেশ কিছুদিন ধরে। ফলে অধিনায়ক, দলের সেরা ব্যাটসম্যান হয়েও অনিয়মিত হয়ে পড়ে ছিলেন ক্লার্ক। বিশ্বকাপের আগে খেলতে পারেননি ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজেও। এমন কি ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও সব ম্যাচ খেলা হয়নি। তখনই পুনরায় অপারেশন। তাই বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে বড় রকমের সংশয় ছিলই। আসর শুরুর দু’দিন আগে আরব আমিরাতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে ফেরেন প্রতিাযোগিতামূলক ক্রিকেটে। তবে ফিটনেসের ঘাটতির জন্য বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে তার পরিবর্তে নেতৃত্ব দেন জর্জ বেইলি। অবশেষে ফেরেন নিউজিল্যান্ডের কাছে ১ উইকেটে নাটকীয় হারের দিনে! ব্যাট হাতে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি, বিশেষ করে কোয়ার্টার ও সেমির মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে। তবে অভিজ্ঞতার আলোকে মাঠের নেতৃত্বে ঠিকই নিজেকে মেলে ধরেছেন। ৭২ বলে ১০ চারের সাহায্যে ৭৪ রান করে ম্যাট হেনরির বলে বোল্ড হয়ে নিচু নয়, বরং মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়েন ক্লার্ক। মেলবোর্নের পুরো গ্যালারি তখন দাঁড়িয়ে। এর আগে অল্পতে গুটিয়ে যাওয়ার পথে নিউজিল্যান্ডের যখন একের পর এক উইকেট পড়ছিল, ফিল্ডিংয়ে দারুণ উচ্ছ্বল ও প্রাণবন্ত দেখিয়েছে তাকে। ইতিহাস গড়ার বিষয়টি অসি সেনাপতি হয়ত আগেই আঁচ করতে পারছিলেন! অবশ্য ট্রফি জয়ের পরও বিদায় বলতে কিছুটি কষ্টই হয়েছে। ‘এটা অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা। যা ভাষায় প্রকাশের নয়। ছেলেরা অসাধারণ খেলেছে। প্রতিটি ম্যাচেই আমরা উন্নতি করেছি। ফাইনাল ছিল যার চূড়ান্ত মঞ্চায়ন। বিদায়ের মুহূর্তে দেশবাসীকে শিরোপা উপহার দিতে পেরে ভাল লাগছে। কোন সন্দেহ নেই আজ আমার ক্রিকেট জীবনের সেরা দিন। অকাল প্রয়াত ছোট ভাই হিউজেসকে শিরোপা উৎসর্গ করিছ।’ ম্যাচ শেষে প্রতিক্রিয়া ক্লার্কের। ৩৭ বছর ১৫৭ দিন বয়সে ফাইনাল খেলে বিশ্বকাপে নতুন রেকর্ড গড়েছেন সতীর্থ ব্র্যাড হ্যাডিন। সেখানে ৩৩-এ বিদায় বললেন ক্লার্ক। ইনজুরি-ফর্মহীনতায় জর্জরিত অধিনায়ক বিশ্বকাপের আগেও এমনটা কল্পনা করেননি। তখন বলেছিলেন, ‘মিসবাহ উল হক-হ্যাডিনরা পারলে আমি কেন নয়? পরের বিশ্বকাপেও খেলতে চাই।’ সেই তিনিই বুঝলেন শরীর বিদ্রোহ করলে তা মোকাবেলা সত্যি কঠিন। তাই তো ভারতকে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট হাতে পাওয়ার পরই সিদ্ধান্তটা নিয়ে নিলেন। ‘ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে শেষ ওয়ানডে খেলতে যাচ্ছি। আমি দারুণ কৃতজ্ঞ ও ধন্য। এটি আমার ২৪৫ ওয়ানডে, এটা অনেক বড় সম্মানের। এ সময় দুটি ফাইনাল ও একটি কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। এবার শিরোপা উপহার দিতে পারলে, তা হবে অনন্য অর্জন।’ শেষ পর্যন্ত চাওয়াটাই বাস্তবে রূপ নিল।’ সত্যি অনন্য অর্জনের মধ্য দিয়ে ওয়ানডেকে বিদায় জানালেন ক্লার্ক। অবশ্য সাদা পোশাকের টেস্টে খেলবেন যতদিন সম্ভব। ২০০৩ থেকে ২৪৫ ওয়ানডে খেলে ৭ হাজার ৯৮১ রান করেছেন ৪৪.৫৮ গড়ে। ৮ সেঞ্চুরির পাশাপাশি আছে ৫৮ হাফসেঞ্চুরি। দলকে ৭৪ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়ে ২১ হারের বিপরীতে জিতিয়েছেন ৫০ বার, যার শেষটি এলো দেশকে পঞ্চম শিরোপা তুলে দেয়ার গ্র্যান্ড ফাইনালে!
×