ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

১৩তম সাক্ষী হামিদ মল্লিকের জবানবন্দী

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ রাজাকার ফোরকান নিজ হাতে দেবেন ডাক্তারের স্ত্রীকে হত্যা

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৩০ মার্চ ২০১৫

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ রাজাকার ফোরকান নিজ হাতে দেবেন ডাক্তারের স্ত্রীকে হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পটুয়াখালীর রাজাকার কমান্ডার ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৩ তম সাক্ষী আব্দুল হামিদ মল্লিক জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেছেন, ফোরকান মল্লিকের দেখানো মতে দেবেন্দ্র ডাক্তারকে পাক সেনারা গুলি করে হত্যা করে এবং দেবেন্দ্র ডাক্তারের স্ত্রী বিভা রাণী স্বামীর লাশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে ফোরকান মল্লিক তার হাতে থাকা রাইফেলের বেয়োনেট দিয়ে সজোরে আঘাত করে তাকেও হত্যা করে। জবানবন্দী শেষে আজ আসামি পক্ষের আইনজীবী তাকে জেরা করবেন। অন্যদিকে বাগেরহাটের কসাই সিরাজুল হক সিরাজ মাস্টার,আব্দুল লতিফ,আকরাম হোসেন খানের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ হেলাল উদ্দিনের জেরা সম্পন্ন করেছে আসামিপক্ষের আইনজীবী। ২ এপ্রিল আসামি পক্ষের সাফাই সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। রবিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১ ও ২ এ আদেশ প্রদান করেছেন। ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৩ তম সাক্ষী আব্দুল হামিদ মল্লিক জবানবন্দী প্রদান করেছেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীকে জেরা করার জন্য আজ সোমবার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২ এ আদেশ প্রদান করেছে। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম। এ সময় সাক্ষীকে জবানবন্দীতে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম আব্দুল হামিদ মল্লিক, পিতা মৃত আব্দুর রশিদ মল্লিক, গ্রাম-ছৈলাবুনিয়া, থানা-মির্জাগঞ্জ, জেলা-পটুয়াখালী। আমার বর্তমান বয়স ৫৯ বছর। ১৯৭০ সালের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের সময় আমি অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিমান ও গানবোটযোগে পটুয়াখালীতে প্রবেশ করে। এ খবর শুনে আমরা মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নেয়া বন্ধ করে আমাদের এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করি। ১৯৭১ সালের মে মাসের দিকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সদস্যরা পটুয়াখালী থেকে গানবোটে সুবিদখালী বাজারে আসে। তখন স্থানীয় মুসলিম লীগ নেতা আজাহার খান, ফোরকান মল্লিক, ওয়াজেদ শিকদার, শাহজাহান সিকদারসহ অনেকে সুবিদখালী পুরাতন হাসপাতাল ভবনে তাদের সঙ্গে মিটিং করে এবং আজাহার খানকে সভাপতি করে পিস কমিটি গঠন করে। একই সঙ্গে মুসলিম লীগের নেতারা যথা ফোরকান মল্লিক, শাহজাহান সিকদার, দবির সিকদার, আকবার গাজির সমন্বয়ে স্থানীয় রাজাকার বাহিনী গঠন করে এবং পাকবাহিনীর সহায়তায় তারা অস্ত্রের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। সাক্ষী বলেন, ১৯৭১ সালের ১২ আগস্ট আনুমানিক সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমি আমার বািড় থেকে সুবিদখালী বাজারে আমার মামা আজাহার মাস্টারের বাড়িতে আসি। সুবিদখালী হাইস্কুলের নিকট পৌঁছলে সেখানে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সদস্য ও ফোরকান মল্লিককে দেখতে পাই। আনুমানিক বেলা দুইটার দিকে বাজারের ভেতর থেকে একটা গুলির শব্দ শুনতে পাই। এর কিছুক্ষণ পর বাজারের মধ্যে কাদের জমাদ্দারের ফার্মেসির দিক থেকে কান্নাকাটির আওয়াজ শুনতে পাই। রাজাকার ও পাকসেনারা চলে যাওয়ার পর আমি বাজারে প্রবেশ করি। এবং দেবেন্দ্র ডাক্তারের ঘরের সামনে যাই, সেখানে গিয়ে তার এবং তার স্ত্রী বিভা রাণীর লাশ পড়ে থাকতে দেখি। সেখানে শান্তি কবিরাজ, দোকানদার চাঁনমিয়া, হাবিবুর রহমান প্রমুখকে দেখতে পাই। এরা বলাবলি করছিল, ফোরকান মল্লিকের দেখানো মতে দেবেন্দ্র ডাক্তারকে পাকসেনারা গুলি করে হত্যা করে। এবং দেবেন্দ্র ডাক্তারের স্ত্রী বিভা রাণী স্বামীর লাশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে ফোরকান মল্লিক তার হাতের রাইফেলের বেয়োনেট দিয়ে সজোরে আঘাত করে তাকেও হত্যা করে। সাক্ষী আরও বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট আমি সুবিদখালী বাজারে আসি। সেখানে রমনী কু-ুর ঘরের সামনে দাঁড়াই। সেখানে দেখতে পাই রমনী কু-ুর মাথায় টুপি। আমি রমনী কু-ুর মাথায় টুপি দেখে তাকে জিজ্ঞেস করি কাকু আপনার এ অবস্থা কেন। তিনি উত্তরে বলেছিলেন, আগের দিন ১৫ আগস্ট আমাদের তিনভাইকে ফোরকান মল্লিকসহ অন্যরা ধরে নিয়ে যায় এবং সেখানে একজন মৌলভী ডেকে আমাদের প্রাণের ভয় দেখিয়ে ৪ কলেমা পড়িয়ে ধর্মান্তরিত করে। এ ছাড়া ফোরকান মল্লিকসহ কয়েকজন মিলে রামকৃষ্ণের মেয়ে গোলাপীকে জোরপূর্বক পাশবিক নির্যাতন করে; যার ফলে সে মৃত্যুবরণ করেছিল।
×