ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে সেয়ানে সেয়ানে ভোটের লড়াই

নিজ দলের নিরঙ্কুশ সমর্থন পাচ্ছেন নাছির-মনজুর

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৩০ মার্চ ২০১৫

নিজ দলের নিরঙ্কুশ সমর্থন পাচ্ছেন নাছির-মনজুর

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ স্থানীয় সরকারের অধীনে হলেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আসন্ন নির্বাচন রাজনৈতিক দলীয় প্রকাশ্য সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়েই হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচন ঘিরে বরাবরের মতো দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের সকল তৎপরতা নিয়ে ইতোমধ্যে মাঠে নেমে গেছে। পাশাপাশি শরিক দল তথা জোটগত সমর্থনও রয়েছে স্ব-স্ব জোটের প্রার্থীদের প্রতি। বিশেষ করে নির্বাচনের মূল আকর্ষণ মেয়র পদ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তৎপরতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সঙ্গত কারণে চসিকের এবারের নির্বাচনও আওয়ামী লীগ-বিএনপি তথা ১৪ দল ও ২০ দলীয় জোটের জন্য একটি প্রেস্টিজ ইস্যুতে পরিণত হতে চলেছে। এ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম তথা তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে মেয়র প্রার্থিতা নিয়ে গ্রুপিং ও কোন্দলের বীজ প্রোথিত হলেও তা অবসান হওয়ায় দুই দলের মধ্যেই স্বস্তি ফিরে এসেছে। আর এ কারণে এ নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের অংশগ্রহণ ও উৎসব ব্যাপকতর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও নাগরিক কমিটি মনোনীত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিনের পক্ষে মন্ত্রী, এমপি, সাবেক মেয়রসহ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ যেমন মাঠে নেমেছেন তেমনি বিএনপি সমর্থিত ও নাগরিক আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী সদ্য বিদায়ী মেয়র মনজুর আলমের পক্ষে সাবেক মন্ত্রী, সাবেক এমপি ও ২০ দলীয় জোটের স্থানীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা ব্যাপকভাবে তৎপর হয়েছেন। চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন ব্যাপকভাবে আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে এ নির্বাচনে মেয়র পদটি কারা পাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছির প্রথমবারের মতো মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন। আর বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনজুর আলম দ্বিতীয় দফায় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। দলগতভাবে দুই প্রার্থীর পক্ষে জয় নিশ্চিত করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করা হবে বলে প্রতীয়মান। প্রসঙ্গত, মেয়র পদে জাতীয় পার্টিসহ অন্য যেসব প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ভোটের লড়াইয়ে তাদের কারও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসার সম্ভাবনা যে নেই তাতে কোন সন্দেহ নেই। অপরদিকে, কাউন্সিলর পদে কোন দলের পক্ষে একক প্রার্থিতা নিশ্চিত করা সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় পর্যায়ে থেকে ঘোষণা দিয়েছে কাউন্সিলর পদেও দলের একক প্রার্থিতা নিশ্চিত করা প্রয়াস নেয়া হচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ প্রয়াস সফল হবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সঙ্গত বিরাজ করছে। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০ দলীয় জোট ইতোমধ্যেই তাদের হরতাল কর্মসূচী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ইতোপূর্বেকার মতো ধরপাকড় নিয়ে তত বেশি তৎপর নয় বলে লক্ষ্যণীয়। যে কারণে বিএনপিসহ শরিক দলগুলো নেতাকর্মীরা ধীরে ধীরে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠে নামতে শুরু করেছে। তবে অবরোধ ও হরতাল চলাকালে নাশকতার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে যারা মামলায় আসামি হয়েছেন তারা এখনও মাঠে নামছে না। পুলিশের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, মামলার আসামিদের পাওয়া গেলে আইন নিজের গতিতে চলবে। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে ৪১ ওয়ার্ড নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন গঠিত। মেয়র পদে একজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪১ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৪ জনকে নির্বাচিত করার জন্য ভোটের লড়াই যতই এগিয়ে আসছে ততই এ নগরীর রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। যদিও এ পর্যন্ত কোন ধরনের অঘটন বা অনাকাক্সিক্ষত কোন ঘটনার জন্ম হয়নি। বিষয়টি নগরবাসীর কাছে আশার আলো ছড়াচ্ছে। সকলের আশা নির্বাচনের দিন ও ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত এমনকি তৎপরবর্তী সময় পর্যন্ত যেন এ রূপ পরিস্থিতি বিরাজিত থাকে। রবিবার সব ধরনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও জমাদান সম্পন্ন হয়েছে। পরবর্তীতে রয়েছে যাচাই-বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের মাধ্যমে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ। এ সময়ের মধ্যে নানা হিসাব-নিকাশ করে প্রত্যেক ক্ষেত্রে আগ্রহী প্রার্থীরা তাদের প্রার্থিতা নিশ্চিত করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। চট্টগ্রামের এ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভিন্ন সূত্রে জানানো হচ্ছে, দুই শিবিরেই এ নির্বাচনকে নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা ও গুঞ্জনের ডালপালা বিস্তার করছে। সম্ভাব্য কারচুপির আশঙ্কার ব্যাপারে ইতোমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি জানানো হয়েছে। পক্ষান্তরে, সরকারী দল সমর্থকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। কারচুপির আশঙ্কা সম্পূর্ণ অমূলক। আওয়ামী লীগ সমর্থকরা আশা করছে মেয়রসহ কাউন্সিলর পদে তাদের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হবে। পক্ষান্তরে বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোট ঘরনার লোকজনের মাঝে আলোচিত হচ্ছে সরকার কারচুপির পথে পা না দিলে এবারও চট্টগ্রামে গত নির্বাচনের মতো মেয়রসহ বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা ব্যাপকভাবে বিজয়ী হবে। প্রায় ১৮ লাখ ভোটার নিয়ে আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ভোটারদের মাঝে অভিব্যক্তি প্রকাশের বিষয়টি বাড়ছে। তবে এখনও হলফ করে বলা যাচ্ছে না ভোটের হাওয়া কাদের পালে জোরালোভাবে লাগবে। সদ্য বিদায়ী বিএনপি সমর্থিত মেয়র এম মনজুর আলম কর্পোরেশন পরিচালনার কার্যক্রমে কোন চমক সৃষ্টি করতে না পারায় তার যেমন সমালোচনা রয়েছে, পাশাপাশি একজন সজ্জনব্যক্তি হিসেবে তার সু-আলোচনার ঘাটতি নেই। তাঁর বিপরীতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন তারুণ্যে উজ্জীবিত। প্রথমবারের মতো এ নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। এটা তার জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি তিনি রাজনীতি করেন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে অধিষ্ঠিত আছেন। পাশাপাশি তিনি চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক, বিসিবির সহ-সভাপতিও। ক্রীড়াঙ্গনে তাঁর সংশ্লিষ্টতা ব্যাপক। চট্টগ্রামে ভোটার মহলে তার পরিচিতির কমতি নেই। এবার তার প্লাস পয়েন্ট দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতারা সকল মতভেদ ভুলে গিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। এমনকি মেয়র পদে মনোনয়ন লাভে আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু পাননি সেই হ্যাট্টিক বিজয়ী মেয়র চট্টগ্রামের ডাকসাইটে আওয়ামী লীগ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীও তার বিজয় নিশ্চিত করতে মাঠে নেমেছেন। যে নাগরিক কমিটির ব্যানারে আ জ ম নাছির প্রার্থী হয়েছেন সে কমিটির সদস্য সচিবও হয়েছেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। কোন নির্বাচন নিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগের সকল নেতৃবৃন্দ এক কাতারে আসা প্রকাশ্য ঘটনা এটাই প্রথম। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনজুর আলমের পক্ষেও দল ও জোটগতভাবে সুবাতাস বইছে। প্রার্থিতা নিশ্চিত হওয়া আগ পর্যন্ত যে সব গ্রুপিং ছিল তার ক্ষেত্রে এর অবসান ঘটেছে। বিএনপির স্থানীয় শীর্ষ নেতারা যারা অতীতে আকণ্ঠ গ্রুপিংয়ে নিমজ্জিত ছিলেন তারাও এবার তার পক্ষে অবস্থান নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এটাও বিএনপির অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গের একটি বিষয় হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে ধারণা করা হচ্ছে, সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলে মেয়র পদে আ জ ম নাছির উদ্দিন ও মনজুর আলমের লড়াই হবে শেয়ানে-শেয়ানে।
×