ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সত্বর আইনে সংশোধনী

এবার নদী দূষণ রোধে শিল্প মালিকদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৩০ মার্চ ২০১৫

এবার নদী দূষণ রোধে শিল্প মালিকদের  বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নদী দূষণ রোধে শিল্প মালিকদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিল্প দূষণের হাত থেকে ঢাকার মৃতপ্রায় নদীগুলো বাঁচাতে রবিবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। নদীর জমি উদ্ধারে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হলেও দূষণ রোধে প্রথমবার এই ব্যবস্থা আসছে। এতে দূষণকারী শিল্প মালিকদের জেল-জরিমানা করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নদী দূষণ রোধে শিল্প মালিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার বিধান বর্তমান আইনে নেই। এজন্য ২০০৯ সালের প্রণীত মোবাইল কোর্ট আইনে সংশোধনী আনতে হবে। এজন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক রবিবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে নদী রক্ষায় গঠিত টাস্কফোর্সের বৈঠকে দ্রুত আইনে সংশোধনী আনার কথা জানান। ওই বৈঠকে আইনমন্ত্রী বলেন, সত্বর যাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা যায় তার ব্যবস্থা করা হবে। বৈঠকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, মোবাইল কোর্টে এ ধরনের বিধান না থাকার জন্য নদী দূষণকারী শিল্প মালিকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যায় না। বৈঠকে বলা হয়, শিল্প দূষণকারীদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিফতরের পরিবেশ আদালত রয়েছে। কিন্তু সারাদেশের শিল্প মালিকদের জন্য মাত্র তিনটি এ ধরনের আদালত রয়েছে। সেখানেও জনবল সঙ্কটসহ নানা কারণে শিল্প মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় না। জেলা প্রশাসন নির্বাহী হাকিমদের মাধ্যমে সারাদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলে দূষণের তৎপরতা কমানো সম্ভব। পরে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এ প্রসঙ্গে বলেন, নদী দূষণকারী শিল্পের মালিকদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট করাসহ কঠোর আইন করার ব্যবস্থা করা হবে। এতে করে দেশের নদীগুলোতে শিল্প দূষণ কমানো সম্ভব হবে। এছাড়া হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানা দ্রুত সাভারে স্থানান্তর করা হবে। এ বিষয়ের অগ্রগতি ও পরবর্তী কারণীয় বিষয়ে শিল্পমন্ত্রীর সমন্বয়ে সাভারে একটি পৃথক বৈঠক করা হবে। ঢাকার চামড়া প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলো গত ৬৫ বছর বুড়িগঙ্গা নদী দূষণ করে যাচ্ছে। এই দূষণ অন্য নদীগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। মৎস্য ও জলজ প্রাণীর বিলুপ্তিসহ বুড়িগঙ্গা একটি মৃত নদী। ট্যানারিসমূহ দৈনিক ২২ হাজার ঘনমিটার অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে ফেলছে। এছাড়াও প্রতিদিন আনুমানিক ১০০ মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। সর্বোচ্চ উৎপাদনকালে এর পরিমাণ প্রায় ২০০ মেট্রিক টন। এসব বর্জ্যে রয়েছে ক্রোমিয়াম, লেড, সালফিউরিক এ্যাসিড, হাইড্রোজেন সালফাইড, ফরমিক এ্যাসিড, বিচ, ডাই, তেল, চামড়া প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত অনেক ভারি ধাতু, চুন, পশুর মাংস, দ্রবীভূত চুল, চর্বি, লবণ। এসব বিষাক্ত এবং বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্য পানি, বায়ু, মাটি দূষণসহ জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে চলেছে। কিন্তু নানাভাবে নদী পরিষ্কারের জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও বর্জ্যরে উৎস বন্ধ করা যাচ্ছে না। ঢাকা শহরের বিপুল পরিমাণ মানববর্জ্যরে জায়গাও হয় নদীগুলোতে। সরকারের পক্ষ থেকে সকল চামড়া কারখানা সাভারে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলেও এখনও মালিকপক্ষ সায় দিচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিক সময়ে হাজারীবাগের চামড়া শিল্প প্রতিষ্ঠান সাভারে স্থানান্তর করা না হলে বিপুল ব্যয়ে নির্মিত কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে। আগামী জুনের মধ্যে সাভার চামড়া শিল্প এলাকায় কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। সিইটিপিতে সাধারণত প্রতিদিন পাঁচ হাজার ঘনমিটার এবং ঈদের সময় ২০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য পরিশোধন করা হবে। ক্রোমিয়াম আলাদাভাবে পরিশোধন করে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পুনরায় ব্যবহার করা হবে। সিইটিপি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, এ বছর জুন মাসের মধ্যে সিইটিপির নির্মাণ সম্পন্ন হবে। এটি একটি বায়োলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে ১৫৫ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দ অনুযায়ী প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের ছয় তলা ভবন নির্মাণের কথা রয়েছে। অথচ সরেজমিনে দেখা গেছে, এর মধ্যে মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় তলার ছাঁদ ঢালাই হয়েছে। তৃতীয় তলার নির্মাণ কাজ চলছে। ৮ প্রতিষ্ঠানের প্রথম তলার ছাদ ঢালাই হয়েছে। ৫৬ প্রতিষ্ঠানের পাইলিং সম্পন্ন হয়েছে। ৭৮ প্রতিষ্ঠানের সীমানা দেয়াল দেয়া হয়েছে। ১৪টির সীমানা দেয়াল, গার্ডরুম কিছুই করা হয়নি। ২৫টির কোন সাইনবোর্ড নেই। এর মধ্যে আট প্রতিষ্ঠানের সীমানা দেয়াল, গার্ডরুম কিছুই নেই। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এসব প্রতিষ্ঠান নদী দূষণ করে চলেছে; যাদের বিরুদ্ধে কার্যত কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। সভায় জানানো হয়, র‌্যাব ও নৌপুলিশের কার্যালয় স্থাপনে কোন জায়গা দেয়া যায় কিনা তা নির্ধারণ করার আগে আদি বুড়িগঙ্গা জরিপ প্রস্তাবনা দেয়ার জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি আগামী ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে টাস্কফোর্সের সভাপতির নিকট প্রতিবেদন পেশ করবে। সভায় জানানো হয়, জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক উদ্ধারকৃত জায়গায় বনায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে। সভায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক, সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব শফিক আলম মেহেদীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
×