ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইয়েমেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে বিস্তীর্ণ এলাকা দখল

হুতি অগ্রাভিযান অব্যাহত

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৯ মার্চ ২০১৫

হুতি অগ্রাভিযান অব্যাহত

সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান আক্রমণ সত্ত্বেও ইয়েমেনে শিয়া হুতি বিদ্রোহীদের অগ্রাভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইরান সমর্থিত শিয়া হুতিরা শুক্রবার দেশটির দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক ভূখ-গত সাফল্য অর্জন করে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, হুতি যোদ্ধা ও মিত্র সেনা ইউনিটগুলো এডেনের ১০০ কিমি পূর্বে শাকরা বন্দর দখল করে ইয়েমেনের আরব সাগর উপকূলে প্রথমবারের মতো নিজেদের অবস্থান সংহত করেছে। তাদের অগ্রাভিযান ইয়েমেনে হাদির সর্বশেষ আশ্রয়স্থলকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে এবং তাঁকে রক্ষার জন্য বিমান হামলাকে কার্যকরভাবে দুর্বল করে দিয়েছে। রণাঙ্গনে এই ব্যর্থতার সময় সৌদি নেতৃত্বাধীন অভিযানের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমদ আসেরি রিয়াদে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, এডেন সরকারকে রক্ষাই অভিযানের প্রধান লক্ষ্য। তিনি বলেন, যতদিন প্রয়োজন পড়বে ততদিন এই অভিযান চলবে। এর আগে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, একটি স্থল অভিযানের কোন পরিকল্পনা নেই, তবে তিনি এই সম্ভাবনা বাতিল করে দেননি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যদি প্রয়োজন হয় তবে সৌদি স্থলবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে, বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর বাহিনী প্রস্তুত আছে এবং যে কোন ধরনের আগ্রাসনের জবাব দেয়া হবে। খবর গার্ডিয়ান, বিবিসি ও এএফপির। যুদ্ধ বিমানগুলো হুতি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন রাজধানী সানা ও তাদের উত্তরাঞ্চলীয় কেন্দ্রস্থল সাদাকে লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ করেছে। আসেরি বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমানগুলো গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের প্রথম বিমান হামলা চালিয়েছে। মার্কিন সামরিক বাহিনী এডেন উপসাগর থেকে দু’জন সৌদি পাইলটকে উদ্ধার করেছে। কারিগরি সমস্যার জন্য তারা সেখানে তাদের জঙ্গী বিমান থেকে প্যারাস্যুটে জরুরী অবতরণ করে। সৌদি আরবের শক্তি বৃদ্ধির পদক্ষেপ হিসেবে মরক্কো বলেছে, দেশটি হুতিদের বিরুদ্ধে দ্রুততার সঙ্গে সমবেত করা সুন্নি মুসলিম জোটে যোগ দেবে। সৌদি আরবের শরিক বলে ঘোষিত পাকিস্তান বলেছে, তারা জোটে অংশগ্রহণ করবে কিনা সে ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। এদিকে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের যুদ্ধবিমানগুলো তৃতীয় রাতের মতো ইয়েমেনে বোমাবর্ষণ করেছে। এডেন বন্দর অভিমুখে ও আশপাশে হুতিদের এগিয়ে যাওয়ার পথে তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। বিদ্রোহীদের অগ্রাভিযানের মুখে এডেন থেকে পালিয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট হাদির অনুগত সৈন্যদের সঙ্গে হুতিদের রাস্তায় রাস্তায় লড়াই শুরু হয়ে যায়। হাদি বর্তমানে আরব লীগ শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে মিসরে অবস্থান করছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহ, যার সমর্থকরা বিদ্রোহীদের পাশাপাশি লড়াই করছেÑ অস্ত্র বিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। তবে সৌদি আরব বিদ্রোহীদের হাত থেকে হাদি সরকারকে রক্ষার অঙ্গীকার করেছে। সুন্নি রাজতন্ত্রটি তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী শিয়া শাসিত ইরানকে হুতিদের সমর্থনদানের জন্য দোষারোপ করছে। দেশটি বিদ্রোহীদের অগ্রাভিযান রুখে দিয়ে অপারেশন ডিসাইসিভ স্টর্ম নামের মিশনে উপসাগরীয় আরব দেশগুলো এবং মিসরকে একটি জোটে একত্রিত করেছে। বিবিসির জেরেমি বাওয়েল বলেছেন, ‘উপসাগরীয় রাষ্ট্রসমূহ বুঝতে পারবে যে, ইয়েমেনের যুদ্ধে জয়লাভ সহজে কিংবা দ্রুত ঘটবে না।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শুক্রবার সৌদি বাদশাহ সালমানের সঙ্গে কথা বলে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতি তাঁর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে একথা জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, ওবামা ও বাদশাহ সালমান আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমাধানের যারা ইয়েমেনে স্থায়ী স্থিতিশীলতা অর্জনে তাদের লক্ষ্যের ব্যাপারে একমত হন। শুক্রবার জোটের বিমানগুলো হুতিদের অস্ত্রাগার ও সামরিক ঘাঁটি এবং সেই সঙ্গে হুতি নেতাদের ব্যবহৃত ভবনসমূহ লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায়। ইয়েমেনের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বিমান হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত অনুর্ধ ১০ বছরের ৬টি শিশুসহ অন্তত ৩৯ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। ইয়েমেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ ইয়াসিন বলেছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিমান হামলা শেষ হতে পারে। তিনি বলেন, এটা সংক্ষিপ্ত ঝটিকা অভিযান। ‘হুতিদের সঙ্গে আলোচনার দরজা এখনও খোলা আছে।’ ফেসবুকে পোস্টিং দিয়ে প্রেসিডেন্ট হাদি ইয়েমেনবাসীদের প্রতি বৈর্যধারণের আহ্বান জানান। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, হুতিরা শীঘ্রই বিতাড়িত হবে।
×