ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসী আয় সঠিক খাতে বিনিয়োগে প্রণোদনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৯ মার্চ ২০১৫

প্রবাসী আয় সঠিক খাতে বিনিয়োগে প্রণোদনা

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ প্রবাসীদের আয় সঠিক খাতে বিনিয়োগের বিশেষ প্রণোদনা আসছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। প্রবাসী আয়ের অধিকাংশই বিনিয়োগ হচ্ছে জমিক্রমে। এই আয় গ্রহণকারী পরিবারগুলো এক বছরে বিভিন্ন খাতে যে পরিমাণ গৃহে ব্যবহার্য টেকসই জিনিসপত্র এবং এ জাতীয় উপাদান ক্রয়ে ব্যয় করে তার মধ্যে ৭৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ টাকা জমি ক্রয়ে ব্যবহার হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৫ বছরের জন্য সরকার যে আর্থিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে সেখানে এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্বে নিয়োজিত পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ প্রকৃত খাতে বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনে প্রণোদনা প্রদানের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রবাস আয় সম্পর্কিত জরিপ -২০১৩ এর ফলাফলে দেখা গেছে, প্রবাসী আয় গ্রহণকারী পরিবারগুলো গত এক বছরে (২০১৩ সালে) বিভিন্ন খাতে যে পরিমাণ গৃহে ব্যবহার্য টেকসই জিনিসপত্র এবং এ জাতীয় উপাদান ক্রয়ে ব্যয় করে তার মধ্যে ৭৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ টাকা জমি ক্রয়ে ব্যবহার হয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ে এ হার আরও বেশি। রবিশাল, ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুরে জমি ক্রমে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ টাকা ব্যয় করা হয়। তবে চট্টগ্রাম বিভাগের সর্বনিম্ন ৫৬ দশমিক ০৫ এবং এর পরেই রয়েছে সিলেট বিভাগে ৬২ দশমিক ৭০ শতাংশ টাকা জমি ক্রয়ে ব্যয় হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা বিভাগে গড় প্রবাস আয় সর্বোচ্চ। গত এক বছরে পরিবারভিত্তিক প্রবাস আয়ের গড় পরিমাণ ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ হয়েছে ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৪০ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে চট্টগ্রাম বিভাগ ২ লাখ ১৫ হাজার ৭০৭ টাকা। অন্যদিকে সর্বনিম্ন গড় প্রবাস আয় রাজশাহী বিভাগে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৭০০ টাকা। প্রবাসীদের টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে ব্যাংক ব্যবস্থা জনপ্রিয়। মোট প্রবাস আয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬৭ দশমিক ৩২ শতাংশ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে আসে। এর পর হুন্ডির মাধ্যমে আসে ১০ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে দেশে আসছে ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে খাদ্য দ্রব্য ও খাদ্য দ্রব্য ছাড়া অন্যান্য সামগ্রীতে প্রায় সমান হারে প্রবাস আয় ব্যবহার হচ্ছে। পরিবারগুলো গত এক বছরে ব্যয় করেছে পরিবারগুলোর মোট প্রবাসী আয়ের ৩৯ শতাংশ টাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে প্রবাসী আয় প্রাপ্ত পরিবারগুলোর অবস্থা অন্য পরিবারগুলোর চেয়ে ভাল। প্রবাস আয় গ্রহণকারী পরিবারগুলো ৯৯ শতাংশ বিশুদ্ধ পানি পান করে, ৮২ শতাংশ স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ব্যবহার করে, সাধারণ পরিবারের ক্ষেত্রে এ হার যথাক্রমে ৭৯ শতাংশ এবং ৬২ শতাংশ। বলা হয়েছে বিদেশে কর্মরতদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষিতের সংখ্যা খুবই কম। মোট প্রবাসীদের মধ্যে ৬২ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত। ২ দশমিক ৪১ শতাংশ এমবিবিএস কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারী। প্রবাস আয়ের প্রবাহ বা এর ব্যবহারের ওপর এ যাবত কোন উল্লেখযোগ্য নীতি নির্ধারণী কাঠামো প্রণীত হয়নি। কিন্তু সঠিক ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্যই পারে উদ্ভাবনশীল বিশ্ব পরিবেশে প্রবাস আয়ের সর্বোচ্চ প্রবাহ নিশ্চিত এবং দেশে এর ব্যবহারকে ফলপ্রসূ নীতি নির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে। কিন্তু প্রবাস আয়ের ব্যবহার সম্পর্কে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে প্রায় ৮৬ লাখ বাংলাদেশী বিদেশে কর্মরত আছেন। দেশের মোট শ্রমশক্তিতে প্রতিবছর গড়ে প্রায় অতিরিক্ত ২ লাখ যুবশক্তি যোগ হচ্ছে। কিন্তু অতিরিক্ত এই ২ লাখ জনশক্তির সকলের কর্মসংস্থানের সুযোগ দেশে সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রচুর লোক বিদেশে যাচ্ছে এবং এ ধারা অদূর ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি প্রবাস আয়কে বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম দুটো চালিকাশক্তির মধ্যে একটি হিসাবে চিহ্নিত করেছে এবং সংস্থাটির আরও পূর্বাভাস দিয়েছে যে, প্রবাস আয় ভবিষ্যতেও অব্যাহতভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।পর্যাপ্ত তথ্য না থাকার কারণে তা এখনও করা সম্ভব হয়নি। পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সরকারের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্য প্রতিফলিত হবে, আর তা অর্জনের জন্য বিকল্প কি কি কৌশল অনুসরণ করা হবে তা উল্লেখ থাকবে।
×