ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সেচের সুফল

এক জমিতে তিনবার ফসল- কৃষকের মুখে হাসি

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৯ মার্চ ২০১৫

এক জমিতে তিনবার ফসল- কৃষকের মুখে হাসি

কামরুজ্জামান বাচ্চু ॥ কৃষক নেছার উদ্দিন (৪০)। বাড়ি পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে। সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন। জমি চাষাবাদ করে যে ফসল পেতেন, তা দিয়ে ছয় মাসের খাবারও হতো না পরিবারের। সংসার চালাতে গিয়ে দেনার জালে জড়িয়ে পড়েন। এভাবে চলে বেশ কিছু বছর। কিন্তু এখন সংসার চালাতে তাকে আর ধার-দেনা করতে হয় না। জমি চাষাবাদ করে যে ফসল পান, তাতে সারা বছরের খাবার রেখেও উদ্বৃত্ত থাকে কিছু। আর অতিরিক্ত এ ফসল বিক্রি করে অনেকটাই স্বাবলম্বী তিনি। এর পেছনে যে বিষয়টি ভূমিকা রেখেছে, সেটি হলো জমি চাষাবাদে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) ভূগর্ভস্থ সেচনালা ব্যবহার করছেন তিনি। এর ফলে একই জমিতে তিনবার ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে। আর এতেই এসেছে সাফল্য। শুকনো মৌসুমে এ অঞ্চলের নদ-নদী, খাল-বিলের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কৃষকরা জমি চাষাবাদ করতে পারতেন না। কেবল বর্ষা মৌসুমে তারা জমি চাষাবাদ করতেন। এখন সেই জমি তাঁরা বর্ষা মৌসুম ছাড়াও চাষাবাদ করতে পারছেন। আমন ছাড়াও বোরো ধানসহ রবি ফসল চাষাবাদ করছেন তাঁরা। ক্ষুদ্র ভূগর্ভস্থ সেচনালা ব্যবহার করে তারা চাষাবাদ করছেন। এর ফলে কৃষক নেছার উদ্দিনের মতো আরও বহু কৃষক পরিবারেও এসেছে সচ্ছলতা। এ ক্ষুদ্র সেচনালা ব্যবহার করে নানা রবিশস্য ফলিয়ে অনেকেই এখন লাখোপতি। খাদ্য ঘাটতি মেটাতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাউফল, দশমিনাসহ পটুয়াখালী জেলায় বিএডিসির মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ সেচনালা প্রকল্প চালু করে সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় জেলায় ৬২টি ভূগর্ভস্থ সেচনালা নির্মাণ করা হয়। একেকটি সেচনালা নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয়েছে ১০ লাখ টাকার ওপরে। একটি সেচনালার মাধ্যমে ৫০ একর জমি চাষাবাদ করা যায়। ফলে একর প্রতি অতিরিক্ত ৬০ মণ করে ফলন হয়। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে বর্ষা মৌসুম বাদে দুইবার জমি চাষাবাদ করা যাবে। সে অনুযায়ী বছরে অতিরিক্ত ২৬ কোটি টাকারও বেশি ফসল হবে। এর ফলে এ অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে আর খাদ্য ঘাটতি থাকবে না। বিএডিসির বাউফল উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ জাফর জানান, প্ল্যানিং কমিশনের এক উর্ধতন কর্মকর্তা ২০১৩ সালে বাউফলের কর্পূরকাঠি গ্রাম পরিদর্শনে এসে এখানে বিপুল পরিমাণ অনাবাদী জমি দেখে হতবাক হয়ে যান। এই জমি সেচের আওতায় এনে অতিরিক্ত ফসল ফলানোর জন্য তিনি ভূগর্ভস্থ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারকে পরামর্শ দেন। সেই অনুযায়ী বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এ অঞ্চলে এ প্রকল্পটি চালু করে এবং পর্যায়ক্রমে তা পুরো পটুয়াখালী জেলায় চালু করা হয়। তিনি আরও জানান, বলা চলে, বিনা পয়সায় কৃষকরা এ সেচনালার সুবিধা পাচ্ছেন। দুই কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন সেচযন্ত্র দিয়ে খাল থেকে পানি তোলা হচ্ছে ছয় শ’ মিটার পর পর স্থাপিত পাইপের উপরিভাগে নির্মিত হুইল থেকে পানি বের হয়। কৃষকরা জমিতে আইল বা দুই পাশে সোজাসুজি মাটির বাঁধ দিয়ে যার যার জমিতে পানি নিয়ে চাষ করছেন। হুইলের মুখ খুলে যতটুকু পানি দরকার ততটুকু নিয়ে আবার হুইলের মুথ বন্ধ করে দেন কৃষক। আর এ জন্য কৃষকদের কেবল ডিজেলের দাম বহন করতে হয়। রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সরকার বহন করছে। সেচযন্ত্র নষ্ট হয়ে গেলে সরকারী অর্থে সেটি সচল করে দেয়া হয়। ফলে এই সেচনালা এ অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে অনাবাদী জমিতে ফসল ফলিয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। বিপ্লব ঘটছে কৃষি ক্ষেত্রে।
×