ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সালাহউদ্দিন কোথায় আছে পুলিশ তা জানে ॥ ব্যারিস্টার রফিক

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৯ মার্চ ২০১৫

সালাহউদ্দিন কোথায় আছে পুলিশ তা জানে ॥ ব্যারিস্টার রফিক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিখোঁজের পর নয়, নিখোঁজের আগে দুইবার স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক শোনার পার্থক্যের কারণে ভুল কথা বলেছেন বলে জনকণ্ঠের কাছে দাবি করেছেন নিখোঁজ সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। শনিবার বিকেলে গুলশানের বাসভবনে বিএনপির নিখোঁজ যুগ্মমহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক সাংবাদিকদের বলেন, সালাহউদ্দিন আহমেদ কোথায় আছে, সেটা পুলিশ জানে। তিনি বলেন, আমার ধারণা সালাহউদ্দিন বেঁচে আছেন। তবে তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে। এরপর রফিক-উল হক সালাহউদ্দিনের স্ত্রীর বরাত দিয়ে বলেন, নিখোঁজের পর সালাহউদ্দিনের সঙ্গে হাসিনা আহমেদের দুইবার কথা হয়েছে। সে সময় হাসিনা আহমেদের কাছে কোন মুক্তিপণ চাওয়া হয়নি। সালাহউদ্দিন ফিরে আসবেন বলেও তিনি আশাবাদী। রফিক-উল হকের এমন দাবির বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, নিখোঁজের পরে নয়, নিখোঁজের আগে আমার সঙ্গে স্বামীর দুইবার মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। বয়সের কারণে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক সাহেব খুব সম্ভবত ভুল শুনে সাংবাদিকদের ভুল কথা বলেছেন। আসলে আমি ব্যারিস্টার হককে নিখোঁজের আগে দুইবার স্বামীর সঙ্গে কথা বলার কথা জানিয়েছি। তিনি ভুল শুনে হয়ত নিখোঁজের পরের কথা বলেছেন। এদিকে শনিবার ‘আন্তর্জাতিক বর্ণবৈষম্য বিলোপ দিবস’ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার আর্টস অডিটরিয়ামে মাইনরিটি রাইটস ফোরামের আলোচনা অনুষ্ঠানের বক্তব্যে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, সালাহউদ্দিনের হদিস মিললেই বোঝা যাবে তিনি আটক হননি। নিখোঁজ রহস্যের জট খোলা পুলিশের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। পুলিশের উচিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে সালাহউদ্দিনকে আদালতে হাজির করা। বাংলাদেশে যখন যে বিরোধী দলে থাকে, সে সরকারের দমন-পীড়নের শিকার হয়। বিরোধী দলে থাকলে প্রতি পদে পদে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হতে হয় বলেও তিনি অভিযোগ করেন। প্রসঙ্গত, গত ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধ চলছে। কর্মসূচী সফল করতে অজ্ঞাত স্থান থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদের নামে বিবৃতি আসছিল। চলমান কর্মসূচীতে পেট্রোলবোমা আর ককটেল হামলায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের অধিকাংশেরই মৃত্যু হয়েছে দগ্ধ হয়ে। ভাংচুর আর অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে প্রায় তিন হাজার যানবাহনে। আহত দুই হাজারের মধ্যে অন্তত পাঁচ শতাধিক মানুষকে চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গত ১১ মার্চ সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ দাবি করেন, গত ১০ মার্চ রাতে ডিবি পরিচয়ে তাঁর স্বামীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তরফ থেকে এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানানো হচ্ছে। আগামী ৮ এপ্রিল হাইকোর্টে এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। স্বামীর হদিস জানতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। সরকারের তরফ থেকেও আন্তরিকভাবে সালাহউদ্দিনের হদিসের চেষ্টা চলছে। এজন্য শক্তিশালী একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সালাহউদ্দিনের হদিস জানতে দেশ-বিদেশে অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে। যদিও অনুসন্ধানকারীদের দাবি, সালাহউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি রীতিমতো রহস্যজনক। অনুসন্ধানে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে নানা প্রশ্ন ও রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের ওপর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে বা রাজনীতির মাঠ গরম রাখতে বা আন্দোলন চাঙ্গা করার কৌশল হিসেবে সালাহউদ্দিন স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে রয়েছেন নাকি পালিয়ে বিদেশ চলে গেছেন নাকি কোন জঙ্গীগোষ্ঠী বা অপহরণকারী চক্র তাকে অপহরণ করেছে নাকি সত্যি সত্যিই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপথগামী সদস্য পরিকল্পিতভাবে সরকারকে বেকায়দায় রাখতে ঘটনাটি ঘটিয়েছে নাকি ব্যক্তিগত, পারিবারিক, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কোন্দল বা পুরনো শত্রুতার জের ধরে বা জামায়াত-শিবিরের কোন বিশেষ গ্রুপ ঘটনাটি ঘটিয়েছে কিনা তা পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। সালাহউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজের পর হদিস মেলা যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান বা পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন বেলার নির্বাহী পরিচালক রোজোয়ানা হাসানের স্বামীর মতো ফিরে আসবেন নাকি যুবলীগ নেতা লিয়াকত হোসেন, চালকসহ নিখোঁজ ইলিয়াস আলী বা চৌধুরী আলমের মতো হদিসহীন গল্প হয়ে থাকবেন তাও পরিষ্কার নয়।
×