ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কৃষকের মুখে হাসি

রংপুরের আলু আবার যাচ্ছে বিদেশে

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ২৮ মার্চ ২০১৫

রংপুরের আলু আবার যাচ্ছে বিদেশে

মানিক সরকার মানিক, রংপুর ॥ কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর রংপুর অঞ্চলের উৎপাদিত আলু এখন আবারও বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন কৃষকদের মাঝে প্রচুর আলু আবাদ করেও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার যে হতাশা এবং হিমাগারে স্থানাভাবের যে সঙ্কট ছিল তা থেকে মুক্তি পেল তারা। অন্যদিকে স্থানীয় সরবরাহকারী-ব্যবসায়ীরাও দুটি পয়সার মুখ দেখছেন। সম্প্রতি ঢাকা এবং চট্টগ্রামের কতিপয় রফতানিকারক রংপুরের অন্তত দুই লাখ মেট্রিক টনসহ দেশের ১৯টি জেলা থেকে প্রায় চার লাখ মেট্রিক টন আলু বাইরে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এ থেকে প্রায় ৭শ’ কোটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে বাংলাদেশের, যার ডলার মূল্য প্রায় কোটি ডলার। একটা সময় ছিল যখন রংপুর অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল তামাক। তামাকের আবাদ এবং বিদেশে রফতানি করে এ অঞ্চলের কৃষকরা তাদের চালিকাশক্তি সচল রাখত। কিন্তু তামাকের ক্ষতিকারক দিকগুলো বিবেচনা করে কৃষকরা সেই তামাক থেকে বেরিয়ে এসে আলুসহ নানাজাতের সবজি চাষে ঝুঁকে পড়ে। রংপুরের মাটি এবং আবহাওয়া আলু চাষের উপযোগী হওয়ায় মুন্সীগঞ্জের পরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে স্থান করে নেয় রংপুর। কিন্তু গত কয়েক বছরে কৃষক আলুর আবাদ করে সঠিক মূল্য না পাওয়া এবং হিমাগারে সংরক্ষণে স্থানাভাবে লাগাতার ক্ষতির মুখে পড়ে হতাশ হয়ে পড়ে। কিন্তু তারপরও আলু থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি কৃষক। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৫ জেলায় এবার ৮৮ হাজার ৮৩৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও প্রায় ৯২ লাখ হেক্টর জমিতে এবার আলুর আবাদ করেছে কৃষকরা। আর এ পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপন্ন হয়েছে। জানা গেছে, রংপুর অঞ্চলের উৎপাদিত গ্লানুলা, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড জাতের আলু এর আগে মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ফিলিপিন্সে রফতানি হলেও এ বছর এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে রাশিয়ার নাম। এ বছর বাংলাদেশের ১৯টি জেলা থেকে প্রায় চার লাখ মেট্রিক টন আলু দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে রফতানি হবে। এরমধ্যে শুধুমাত্র রাশিয়ার সঙ্গেই দেশের রফতানিকারকদের চুক্তি হয়েছে এক লাখ মেট্রিক টন আলু ক্রয়ের। আর এ কারণেই ঢাকা এবং চট্টগ্রামের আলু রফতানিকারকরা আলু সংগ্রহের জন্য এখন অবস্থান করছেন রংপুরে। এতে করে কৃষকদের মুখে নতুন করে হাসির ঝলক ফুটে উঠেছে। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার নুশরাত বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী শামীম মিয়া জানান, তাঁরা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জ ঘুরে মাঠপর্যায়ের কৃষকদের কাছ থেকে আলু সংগ্রহ করে বাইরের রফতানিকারকদের কাছে সরবরাহ করছেন। জানা গেছে, গত বছর কিংবা তার আগেও ৯০ কেজি ওজনের যে আলুর বস্তা বি.িক্র হয়েছে মাত্র দুই থেকে আড়াই শ’ টাকা, সেই আলুই এবার তাঁরা বিক্রি করছেন ৬৫০ টাকা দরে। একই কথা জানালেন রংপুরের হারাগাছ ডারারপাড় এলাকার সরবরাহকারী নয়া মিয়া। কাউনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমুর রহমান জানালেন, দাম না পেয়ে যে কৃষকরা আগে তাঁদের উৎপাদিত আলু সড়ক এবং পুকুরে ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, সেই আলুই আজ শুধুমাত্র বিদেশে রফতানির কারণে তাঁরা অনেক বেশি মূল্য পাচ্ছেন। রফতানিকারক চট্টগ্রামের হে এ্যাগ্রো প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জাহিদুল আলম জানান, আলু সংগ্রহের জন্য বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি রংপুরে অবস্থান করছেন। তিনি জানান, এবার সারাদেশের ১৯টি জেলা থেকে প্রায় চার লাখ মেট্রিক টন আলু দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে রফতানি হবে। তিনি জানান, সরকারীভাবে যদি আলু রফতানির উদ্যোগ নেয়া হতো তাহলে হয়ত এ অঞ্চলের তৃষকের ভাগ্য পাল্টে যেত। রংপুর চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মোস্তফা সারোয়ার টিটু জানালেন, বিদেশে আলু রফতানির ক্ষেত্রে কতিপয় রফতানিকারক যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে ইতিবাচক সাড়া পড়বে। তবে কৃষি বিভাগ আলুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে যে ধরনের বাড়াবাড়ি করে থাকে এতে করে স্থানীয় কৃষক-ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। এজন্য তিনি আলুর মান বা স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রংপুরে একটি পরীক্ষাগার স্থাপনের দাবি জানান। রংপুর কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক প্রদীপ কুমার ম-ল জানালেন, তাঁর জানামতে ইতোমধ্যেই শুধুমাত্র রংপুর থেকে প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন আলু কিনে নিয়ে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তাঁর মতে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে এ অঞ্চলের অর্থনীতি পাল্টে যাবে।
×