ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

খুলনা হার্ডবোর্ড মিল ১৬ মাস ধরে বন্ধ

অবিক্রীত হার্ডবোর্ড বিক্রির জন্য ওপেন টেন্ডার

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ২৮ মার্চ ২০১৫

অবিক্রীত হার্ডবোর্ড বিক্রির জন্য ওপেন টেন্ডার

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনা হার্ডবোর্ড মিল চালুর উদ্যোগ ঝিমিয়ে পড়ায় মিলটির ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ ১৬ মাস মিলটি বন্ধ থাকায় যন্ত্রপাতিসহ মূল্যবান সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। মিলে অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে প্রায় ৪৮ হাজার পিস হার্ডবোর্ড, যার মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। এই হার্ডবোর্ড বিক্রির জন্য ওপেন টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। মিলের কাঁচামাল হিসেবে পূর্বের মজুদকৃত প্রায় দেড় হাজার মেট্রিক টন কাঠ বিক্রির জন্য আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে দরপত্র আহ্বান করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনার খালিশপুরের ভৈরব নদের তীরে ৯.৯৬ একর জমির উপর ১৯৬৫ সালে স্থাপিত হয় খুলনা হার্ডবোর্ড মিল। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রিত দেশের একমাত্র হার্ডবোর্ড উৎপাদনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটি এক সময় লাভজনক ছিল। একাধিকবার রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও লাভ করেছে। ২০০২ সালের ১৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার লোকসানের অজুহাতে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করে শ্রমিক-কর্মচারীদের ছাঁটাই করে দেয়। পরে ২০০৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর দৈনিক মজুরি চুক্তিতে শ্রমিক নিয়োগ করে পুনরায় মিলটি চালু করা হলেও সেই থেকেই সমস্যা চলে আসছে। ঢিমেতালে চলার পর ২০১১ সালে আবারও আর্থিক সঙ্কটে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। সূত্র জানায়, বন্ধ ও চালুর দোলাচলে অর্থ সঙ্কটে ধুঁকতে থাকা খুলনা হার্ডবোর্ড মিলটিকে সচল করার জন্য সরকার ২০১২ সালের নবেম্বর মাসে শর্তসাপেক্ষে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। ওই টাকা দিয়ে মেইনটেন্যান্স করে মাত্র ৬০ হাজার পিস হার্ডবোর্ড উৎপাদন করার পর আবারও আর্থিক সঙ্কটে পড়ে এ শিল্প প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৩ সালের ২৫ নবেম্বর মিলের উৎপাদন বন্ধ এবং ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কর্মরত সকল অস্থায়ী শ্রমিককে বিদায় করে দেয়া হয়। এরপর মিলটি চালুর জন্য কর্তৃপক্ষ বিএমআরই করাসহ নানা উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি। বন্ধের আগে মিলটিতে ৬০ হাজার পিস হার্ডবোর্ড তৈরি করা হয়। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কর্তৃপক্ষ হার্ডবোর্ডের মূল্য বৃদ্ধির জন্য বিসিআইসির কাছে সুপারিশ করে। ডিলাররা তাদের পূর্বের পাওনা ৫০ লক্ষাধিক টাকার হার্ডবোর্ড পূর্বমূল্য অর্থাৎ ২৬২ টাকা দরে দাবি করেন। এ নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয়। পরবর্তীতে ডিলারদের পাওনা টাকার জন্য তাদের কিছু হার্ডবোর্ড অনেকটা চাপিয়ে দিয়েই পাওনা মেটানো হয় বলে ডিলারদের অভিযোগ। সূত্রগুলো জানায়, পরবর্তীতে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার অজুহাতে খুলনা হার্ডবোর্ড মিলে উৎপাদিত প্রতি পিস হার্ডবোর্ডের মূল্য ধার্য করা হয় ৫২০ টাকা। কিন্তু ওই দামে ক্রেতা না পাওয়ায় মজুদ হার্ডবোর্ড বিক্রি হয় না। দাম এক শ’ টাকা কমিয়ে ‘পুশ ইন সেল’ করার চেষ্টা করেও সফলতা পাওয়া যায় না। বর্তমানে মিলটিতে প্রায় ৪৮ হাজার পিস হার্ডবোর্ড অবিক্রীত অবস্থায় রয়েছে। ইতোপূর্বে বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ ওই হার্ডবোর্ড বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করলেও তাতে তেমন সাড়া মেলেনি। মিলে মজুদকৃত ওই হার্ডবোর্ড বিক্রির জন্য ওপেন টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। এ মাসের শেষেই টেন্ডার ড্রপিং হবে। এদিকে খুলনা হার্ডবোর্ড মিলে প্রায় এক হাজার ৬শ’ মেট্রিক টন কাঠ মজুদ রয়েছে। মিলের প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য এই কাঠ সংগ্রহ করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন যাবত খোলা জায়গায় থেকে কাঠের মান নষ্ট হয়ে জ্বালানি কাঠে পরিণত হয়েছে। এই কাঠ বিক্রির জন্য আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে দরপত্র আহ্বান করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। খুলনা হার্ডবোর্ড মিলের উপপ্রধান প্রকৌশলী সুশীল চন্দ্র রায় বলেন, মিলটি বিএমআরই করার প্রস্তাবনার অগ্রগতি নেই। মিলে উৎপাদিত প্রায় ৪৮ হাজার পিস হার্ডবোর্ড বিক্রির জন্য ওপেন টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। মজুদ কাঠ বিক্রির জন্যও অবিলম্বে দরপত্র আহ্বান করা হবে।
×