ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের কর্মকর্তা কর্মচারীরা এই বিধিমালা অনুযায়ী বেতন-ভাতা সুযোগ সুবিধা পাবেন

চূড়ান্ত হচ্ছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক চাকরি প্রবিধানমালা ’১৫

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ২৮ মার্চ ২০১৫

চূড়ান্ত হচ্ছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক চাকরি প্রবিধানমালা ’১৫

এম শাহজাহান ॥ পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক চাকরি প্রবিধানমালা-২০১৫ চূড়ান্ত করা হচ্ছে। আইনটি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রণীত খসড়া পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি প্রবিধানমালা অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে। আইনটি অনুমোদনের পর ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পে নিয়োজিত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন। ব্যাংকটির চাকরি বিধিমালা প্রণয়নের পর দেশের ৪৮৫ উপজেলায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ৪৮৫ শাখা খোলা হবে। এক্ষেত্রে শাখা খোলার অনুমোদন দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক চাকরি প্রবিধানমালায় দশটি অধ্যায় এবং একটি তফসিল সংযোজন করা হয়েছে। তবে খসড়া প্রবিধানমালায় কিছু শব্দ সংযোজন ও বিয়োজন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন-২০১৪ বলে এই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ব্যাংকের পর্ষদ গঠন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ করেছে সরকার। আইনে বলা হয়েছে, প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা বোর্ড, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, এই আইন প্রণীত বিধিমালার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ নয় এরূপ প্রবিধান প্রণয়ন করতে পারবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০১৬ সালের ৩০ জুন একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক স্থায়ী রূপ পাবে। তবে এখন থেকে আগামী এক বছর প্রকল্পের মেয়াদ এমনভাবে চলমান থাকবে তা যেন ব্যাংকের একটি চলমান কর্র্মসূচী। আর প্রকল্পটি বিলুপ্ত হওয়ার পর এর অধীন অনুমোদিত কিন্তু অনিষ্পন্ন কার্যক্রম এমনভাবে নিষ্পন্ন করা যাবে যেন তা ব্যাংকের কোন কার্যক্রম। এছাড়া একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি বিলুপ্ত হওয়ার পর সকল সম্পদ, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, সুবিধাদি এবং স্থাবর ও অস্থাবর, নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, কর্মসূচী এবং অন্য সকল প্রকার দাবি ও অধিকার ব্যাংকে হস্তান্তরিত হবে এবং ব্যাংক তার স্বত্বাধিকারী হবে। যদিও ইতোমধ্যে ব্যাংকের এমডিসহ পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন অনুযায়ী ১৮ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রামীণ ব্যাংকসহ এনজিওগুলো ক্ষুদ্র ঋণের বিপরীতে উচ্চমাত্রার সুদ আদায় করছে। এতে গরিব হয়ে পড়ছে আরও গরিব। বাড়ছে অর্থনৈতিক শোষণ। কিন্তু পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক থেকেই এবার জামানতবিহীন ঋণ দেয়া হবে। গরিব ও সমাজের প্রান্তিক মানুষকে অর্থনৈতিক কর্মকা-ের মূল ধারায় আনতে ৪৫ খাতে ঋণ দেবে এই ব্যাংক। সরকার মনে করছে, এই ব্যাংক পুরোপুরিভাবে কার্যক্রম শুরু করলে ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে দেশের খেটেখাওয়া গরিব মানুষ। কমে আসবে ক্ষুদ্র ঋণের সুদ হার। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র ঋণের নামে বিভিন্ন এনজিও এবং ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। পাশাপাশি ঋণগ্রহীতারা সঞ্চয় করবেন এই ব্যাংকে। ফলে চাঙ্গা হবে গ্রামীণ অর্থনীতি। শুধু তাই নয়, ব্যাংকটি দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার কোটি টাকা রাখার বিধান রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে পরিশোধিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। পরিশোধিত মূলধনের ৫১ শতাংশ দেবে সরকার। ৪৯ শতাংশ দেবে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অধীনে গঠিত সমিতি। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গোকুল চাঁদ দাস জনকণ্ঠকে বলেন, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে আগামী বছরের জুন মাসে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে পুরোপুরি ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করবে পরিচালনা পর্ষদ। আর তখনই চাকরি বিধিমালাও প্রয়োজন হবে। এ কারণে এখন চাকরি প্রবিধানমালা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। জানা গেছে, এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ফলে গ্রামীণ সঞ্চয় উৎসাহিত হচ্ছে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে বর্তমানে ১৭ হাজার সমিতি রয়েছে এবং মোট ১০ লাখ ৬১ হাজার পরিবার এর সদস্য। তারা এখানে সঞ্চয় করছেন, যা দেশের মোট সঞ্চয়ের প্রায় ২২ শতাংশ। এই সঞ্চয়ের ১৫ শতাংশ গ্রামে ব্যবহার হচ্ছে। এর ফলে গ্রামীণ অর্থনীতির পরিধি অনেক বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন।
×