ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শেষ নাটকের অপেক্ষা...

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৮ মার্চ ২০১৫

শেষ নাটকের অপেক্ষা...

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ক্রাইস্টচার্চ, সিডনি, হ্যামিল্টন, ব্রিসবেন, পার্থ, ওয়েলিংটন হয়ে ১১তম বিশ্বকাপের শেষ নাটকের অপেক্ষায় এবার মেলবোর্ন। ঐতিহ্যের ধারক মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে রবিবারের গ্র্যান্ড ফাইনালে শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ও বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ডÑ ‘যেন ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ!’ ইংল্যান্ডকে ১১১ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে অসিদের মিশন শুরু হয়েছিল এই মেলবোর্নেই। মাঝে অকল্যান্ডের শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে কিউইদের কাছে ১ উইকেটে হার, বৃষ্টিতে বাংলাদেশের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি, কোয়ার্টারে পাকিস্তান ও সেমিতে ‘ডিফেন্ডিং’ চ্যাম্পিয়ন ভারতকে বিদায় করে রেকর্ড সপ্তমবারের মতো ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে ঘরের মাঠ ক্রাইস্টচার্চে শ্রীলঙ্কাকে ৯৮ রানে হারিয়ে শুরু করে নিউজিল্যান্ড এবং অবিশ্বাস্যভাবে অপরাজিত থেকে ফাইনালে উঠে আসে ব্রেন্ডন ম্যাককুলামের দল! অপরাজিত বললে কমই বলা হবে, কারণ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত বা টাইও সেখানে অন্তর্ভুক্ত হয়। তবে কিউদের গল্পটা শতভাগ সাফল্যের। গ্রুপ থেকে শুরু করে কোয়ার্টারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও সেমিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে দিয়ে ইতিহাস গড়ে, প্রথমবারের মতো ফাইনালে জায়গা করে নেয় কিউইরা। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা সেমির টিকেট পাওয়ার পরই সবাই বলেছিলেন, বিশ্বকাপের সেরা চার দলই এ পর্যায়ে উঠে এসেছে। শেষ মঞ্চের গল্পটাও তাই নয় কি? দক্ষিণ আফ্রিকা তবু নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর হার মেনেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় সেমিতে অসিদের কাছে স্রেফ উড়ে গেছে ক্রিকেটের মোড়লরা! মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত মাথা নুইয়েছে ৯৫ রানের বিশাল ব্যবধানে। আবেগ বাইরে রেখে বিচার করলে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে এসেছে সেরা দুই দলই! যেখানে আসরে নৈপুণ্যের বিচারে অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড। রেজাল্টেও। দুটি দল একই গ্রুপে (পুল ‘এ’) থাকায় তাদের মধ্যে আগেই দেখা হয়ে যায়। ২৮ ফেব্রুয়ারি অকল্যান্ডের সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দেয় ম্যাককুলাম বাহিনী। শেষ পর্যন্ত ইতিহাস গড়েই তা বাস্তবায়ন করে ‘ব্ল্যাক ক্যাপসরা’। এর আগে ৬ বার সেমিতে বিদায় নেয়ায় এবার শিরোপাযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়াটাই তাদের জন্য নতুন ইতিহাস। মার্টিন ক্রো-স্টিভেন ফ্লেমিংয়ের উত্তরসূরিদের সামনে এখন ইতিহাস ছাড়িয়ে যাওয়ার হাতছানি। কিউই অধিনায়কও তা ভাল করে জানেন। ম্যাকুলাম বলেন, ‘সেমির আগেই সতীর্থদের বলেছি, আমাদের সামনে প্রতিটি ম্যাচই এখন ইতিহাস। মাঠে নাম, খেলাটা উপভোগ কর এবং ইতিহাসের সাক্ষী হও। ওরা তাই করছে। উপভোগের মন্ত্রেই এ পর্যন্ত এসেছি। কারণ আনন্দের সঙ্গে থাকে সর্বোচ্চ প্রাপ্তির যোগসূত্র। অস্ট্রেলিয়াকে আমরা গ্রুপপর্বে হারিয়েছি। সুতরাং ফাইনালে একই উপদেশ, উপভোগ কর এবং ইতিহাসের সাক্ষী হও’Ñ বলেন কিউই সেনাপতি। নিউজিল্যান্ডের সাফল্যে বড় অবদান বোলারদের। যেখানে এগিয়ে ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি ও ড্যানিয়েল ভেট্টোরিরা। ৮ ম্যাচে আসরের সর্বোচ্চ ২১ উইকেট পেসার বোল্টের। পেস আক্রমণে তার সঙ্গী সাউদি ও অভিজ্ঞ স্পিনার ড্যানিয়েল ভেট্টোরির শিকার ১৫টি করে। হ্যাঁ, ভেট্টোরির কথা আলাদা করে না বললেই নয়। বয়সের ভার, ফর্মহীনতা, ইনজুরিÑ সব মিলিয়ে বছরখানেক আগে নিজেও কল্পনা করতে পারেননি নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপ দলে থাকবেন। অথচ সেই তিনিই এখন দলটিকে এক সুতোয় গেঁথে নিয়েছেন। অনেকেই হয় তো জানেন না, ম্যাককুলাম অধিনায়ক হলেও নেপথ্যে থেকে দলের সবকিছু দেখভাল করেন ভেট্টোরি-ই। অধিনায়কের চেয়েও তাঁর সম্মান-গ্রহণযোগ্যতা দুই-ই বেশি! ফাইনালে ভেন্যু প্রসঙ্গটি বড় হয়ে সামনে উঠে আসছে। গ্রুপপর্ব থেকে সেমি পর্যন্তÑ নিউজিল্যান্ড প্রতিটি ম্যাচই খেলেছে নিজেদের মাটিতে। অর্থাৎ এই প্রথম অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অসিদেরই বিপক্ষে ফাইনালে নামতে হচ্ছে তাদের! ফাইনালে বড় ‘ফ্যাক্টর’ হতে পারে এটি। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া কেবল এবারের আয়োজন নয়, বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই বড় নাম। ১১তম বিশ্বকাপে সপ্তম ফাইনাল, যার মধ্যে টানা তিনবারসহ রেকর্ড চারবার শিরোপা জিতেছে অসিরা! অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক বড় তারকা, তবে বড় পারফর্মার নন। বিশ্বকাপে একটা দল হিসেবেই শিরোপার দ্বারপ্রান্তে উঠে এসেছে অস্ট্রেলিয়া। বল হাতে ধারাবাহিক পারফর্মেন্স করে গুরুত্বপূর্ণ অবদান পেসার মিচেল স্টার্কের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ উইকেট তাঁর। তবে ব্যাট হাতে একেক দিন জ্বলে উঠেছেন একেকজন। আগের ম্যাচগুলোতে ভাল করেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ডেভিড ওয়ার্নাররা। তবে সেমিতে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে লাইম লাইটে উঠেছেন স্টিভেন স্মিথ। আসরে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৪৬ রান তাঁরই, সেঞ্চুরি একটি ও হাফ সেঞ্চুরি তিনটি। ঘরের মাঠ ও রেকর্ড সপ্তমবারের মতো ফাইনালে খেলার সুবিধা এগিয়ে রাখছে অসিদের।
×