ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চৈত্রের খরতাপে সারাদেশে অস্বস্তির গরম

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৮ মার্চ ২০১৫

চৈত্রের খরতাপে সারাদেশে অস্বস্তির গরম

নিখিল মানখিন ॥ সারাদেশে অনুভূত হচ্ছে গরম। চৈত্রের খরতাপে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় অস্তস্তি নেমে এসেছে। একই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য হ্রাসে রাজধানীতে বেশ গরম অনুভূত হচ্ছে। হিটস্ট্রোকসহ মৌসুমী জ্বরের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। চলতি মাসের শেষের দিকে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ হতে পারে। আর এপ্রিলে সৃষ্টি হতে পারে একটি ঘূর্ণিঝড়। আগামী মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, আজ যশোর, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলসহ রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এপ্রিল মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১-২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ৩-৪ দিন বজ্রসহ মাঝারি/ তীব্র কালবৈশাখী/বজ্র-ঝড় ও দেশের অন্যত্র ৪ থেকে ৫ দিন হালকা/মাঝারি কালবৈশাখী /বজ্রঝড় হতে পারে। ওই মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং অন্যত্র ১ থেকে ২ টি মৃদু /মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। চৈত্রের দ্বিতীয় সপ্তাহ চলছে। দেশের অধিকাংশ জেলাতেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ থেকে ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হচ্ছে। অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে ঢাকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও। শুক্রবার ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তামপত্রা রেকর্ড হয় যথাক্রমে ৩৩.৪ ও ২৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে গত দু’দিন আগে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়ে ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। দেশে বৃষ্টিপাত নেই বললেই চলে। খাঁ খাঁ করছে দেশের মাঠ প্রান্তর। খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয় ফের পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। রাজধানীর আকাশেও স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত নেই। দিনের অধিকাংশ সময় পড়ছে তীব্র রোদ। গরমে অতিষ্ঠ নগরবাসী। প্রখররোদ উপেক্ষা করেই চলতে হয় পথচারীদের। ঢাকার গত এক সপ্তাহের তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৪ থেকে ২৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তাপমাত্রা বেশি থাকে, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসে, তাহলে গরমের তীব্রতা বেশি অনুভূত হবে। বর্তমানে ঢাকায় এমন অবস্থাই বিরাজ করছে। রাজধানীর মোড়ে মোড়ে ডাবের পানি, লেবুর শরবত, মৌসুমী কুল ও পেয়ারার আচার বিক্রি অনেক বেড়ে গেছে। শাহবাগ মোড়ে একের পর এক ডাব বিক্রি করে চলেছেন মোঃ সবুর । তিনি জনকণ্ঠকে জানান, কিছুদিন আগেও ডাবের কদর তেমন ছিল না। কম দামেও ক্রেতা পাওয়া যেত না। গরম বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়ে গেছে ডাবের কদর ও দাম। একেকটি ডাব ৪০ থেকে ৪৫টাকায় বিক্রি হয়। হাসি ফুটেছে মগবাজার রেলগেটের পাশে দোকান সাজানো জব্বার আলীর মুখেও। গত দু’দিন ধরে তিনি স্বাভাবিক দিনের তুলনায় দ্বিগুণ ডাব বিক্রি করতে পারছেন। বেড়েছে ক্রেতার সংখ্যা। এই গরমে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে লেবুর শরবত। ওই ভাসমান দোকানে বরফ মজুদের ব্যবস্থাও রয়েছে। ঠা-া লেবুর শরবত খেয়ে ক্লান্তি দূর করছেন অনেকেই। চলতি মাসে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন আবহাওয়াবিদরা। এমন অবস্থায় হিটস্ট্রোক ও ডায়রিয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। গত বছর এমন সময়ে হিটস্ট্রোকে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে। রাজধানীতে ইতোমধ্যে তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নতুন করে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। তাপমাত্রা বাড়লে ডায়রিয়ার জীবাণুগুলোর সংক্রমণের ক্ষমতা বেড়ে যায়। এমন অবস্থায় চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়রিয়ামুক্ত থাকতে পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। আর হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্ক থাকতে হবে। দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকা যাবে না। অতি প্রয়োজন না হলে রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। রোদে কাজ করার সময় মাথা ও শরীরে ঢাকনা দেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রচুর পরিমাণ তরল জাতীয় কিছু খেতে হবে। ঢিলাঢালা পোশাক বিশেষ করে সুতি কাপড় পরিধান করতে হবে। আইসিডিডিআরবি’র বিজ্ঞানী ও ইউনিট প্রধান ডাঃ মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেছেন, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপরে গেলেই এদেশের মানুষের হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। যতটা সম্ভব প্রখর রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্ক থাকতে হবে। দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকা যাবে না। প্রচুর পরিমাণ তরল জাতীয় বিশেষ করে ‘ওর স্যালাইন’ খেতে হবে। ঢিলেঢালা জামা পরিধান করতে হবে। আর হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে ছায়ায় নিতে হবে। শরীর মুছে দিতে হবে। এতে আক্রান্তের অবস্থার উন্নতি না হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তিনি বলেন, হিটস্ট্রোকে আক্রান্তের আগে শরীরে তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বেশি থাকবে। শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। বমি বমি ভাব দেখা দেবে। মাথা ঘুরতে থাকবে। প্রস্রাব কমে যাওয়ার পাশাপাশি রক্তের চাপও কমে যাবে। এ সব লক্ষণ দেখা দিলেই ছায়াচ্ছন্ন স্থানে বিশ্রাম নিতে হবে। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আগেই বিশেষ সতর্ক থাকার ওপর বেশি জোর দিয়েছেন তিনি।
×