ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গ্রীন সিগন্যাল

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৮ মার্চ ২০১৫

সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গ্রীন সিগন্যাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইতিবাচক সাড়া দিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। নির্বাচনে অংশ নিতে দলের নেতাকর্মীদের গ্রীন সিগন্যাল দিয়ে তিনি বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ হলে তাতে অংশ নেবে বিএনপি। এর আগে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। তবে পরিবেশ বিঘিœত হলে নির্বাচন থেকে সরে আসবে বিএনপি। শুক্রবার রাতে বিএনপি সমর্থিত ‘শত নাগরিক কমিটি’র আট সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে খালেদা জিয়া এমন মত দেন বলে জানা গেছে। আসন্ন তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও দলটি আদৌ নির্বাচনে যাবে কিনা এ নিয়ে যে সন্দেহ-সংশয় ছিল, খালেদা জিয়া নিজেই সে সংশয় দূর করে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন। এমাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে শত নাগরিক কমিটির আট সদস্যের প্রতিনিধি দল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় গুলশানের কার্যালয়ে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ প্রায় দু’ঘণ্টা বৈঠক করেন। সুপ্রীমকোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ঢাবি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, ঢাবির সাবেক প্রো-ভিসি আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ডিইউজে একাংশের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার, ড্যাব সদস্য ডাঃ রফিকুল ইসলাম বাচ্চু ও ব্যারিস্টার ফাহিমা নাসরীন মুন্নী এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, এ সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, বিশ্ববাসীকে তা দেখাতেই তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। তবে সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকলে নির্বাচন থেকে সরে আসবে বিএনপি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির বিষয়ে কয়েক দিন আগে সিইসির সঙ্গে আমরা আলাপ করেছি। খালেদা জিয়াকে এ বিষয়ে আমরা অবহিত করেছি। খালেদা জিয়াও চান নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হোক। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ তৈরি হলে তিনি নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হলে তাতে অংশ নিতে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। ইতোপূর্বে বিএনপি সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এই তিন সিটি নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নেবে। তবে তার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ দরকার। তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে প্রার্থীকে হয়রানি না করা, জামিন দেয়া এবং নির্বাচনী সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা দরকার। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে প্রার্থীকে সমর্থন দেয়া হবে। আর যাকে সমর্থন দেয়া হবে, তার জন্যই জোটের নেতারা কাজ করবেন। জোটের প্রার্থীকে জয়ী করতে তারা প্রচার চালাবেন। কৌশলী অবস্থানে বিএনপি ॥ শরীফুল ইসলাম এর আগে জানান, আন্দোলনের কৌশল বদলাতে আসন্ন তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। এ কারণে আগে বিপক্ষে থাকলেও এখন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে। দলের নেতাকর্মীরা গ্রেফতার-নির্যাতন এড়িয়ে এ নির্বাচনে নির্বিঘেœ প্রচার চালাতে পারলে যে কোন দিন টানা অবরোধ কর্মসূচী স্থগিত করে গুলশানের কার্যালয় ছেড়ে বাসায় চলে যাবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তবে পরিবেশ-পরিস্থিতি প্রতিকূলে গেলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারে বিএনপি। আগে ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াত ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সায় না দেয়ায় সিটি নির্বাচন নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখাননি দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তবে তারেক রহমান ও জামায়াত আন্দোলনের কৌশল পাল্টাতে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। আর এ কারণেই আগে যাঁরা নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন তাঁরাও এখন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন। ৮১ দিন ধরে চলা টানা আন্দোলন কর্মসূচী সফল না হওয়ায় এখনও কেন আন্দোলনে বিরতি দেয়া হচ্ছে না আর কেনইবা বিএনপি চেয়ারপার্সন গুলশান কার্যালয় ছেড়ে বাসায় যাচ্ছেন না, এমন প্রশ্ন নিয়ে সরব হয়ে উঠেছে দেশের মানুষ। আর এ ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হলে কোন সদুত্তরও দিতে পারছেন না বিএনপি নেতাকর্মীরা। সর্বস্তরের নেতাকর্মীই এতে বিব্রতবোধ করছেন। বিষয়টি আমলে নিয়েই দলীয় হাইকমান্ড এখন আন্দোলনের কৌশল পরিবর্তনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে এ বিষয়ে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ায় তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। তবে সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা না হলে বিএনপির পক্ষে নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। শত নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে যে প্রস্তাবগুলো দেয়া হয়েছে তা আমলে নিতে হবে। জানা যায়, সিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে নির্বাচন কমিশনে দেয়া শত নাগরিক কমিটির দেয়া ছয়টি প্রস্তাবের যদি অর্ধেকও মানা হয়, বিশেষ করে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের অবাধে যাতায়াত ও নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি খুলে এবং মেয়র ও কমিশনার পদে প্রার্থীদের যদি প্রচারে অংশ নিতে দেয়া হয় এবং নির্বাচনকালে যদি নেতাকর্মীদের নামে নতুন করে রাজনৈতিক মামলা দায়ের না করা হয় তাহলে বিএনপি সিটি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকবে। আর তা না হলে কোন এক সময়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে।
×