ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ডেভিড বুনের পর দ্বিতীয় অসি ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে টানা চার পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস

ফাইনালেও শতক হাঁকাতে চান স্মিথ

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৭ মার্চ ২০১৫

ফাইনালেও শতক হাঁকাতে চান স্মিথ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একেবারে সময় মতো আরেকবার জ্বলে উঠলেন স্টিভেন স্মিথ। বিশ্বকাপে প্রথম এবং ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন ২৫ বছর বয়সী এ তরুণ অস্ট্রেলিয়ান তারকা। সিডনিতে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারতের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই। গুরুত্বপূর্ণ এ ম্যাচেই আগে ভাগে ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারকে হারিয়ে বসলেও দারুণ এক শতক হাঁকিয়ে দলকে বিপর্যয়ে পড়তে দেননি। স্মিথ মাত্র ৯৩ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় ১০৫ রান করেন। ওপেনার এ্যারন ফিঞ্চের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে তার গড়া ১৮২ রানের জুটির কারণেই বিশাল সংগ্রহ গড়ে অসিরা। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে সেঞ্চুরি হাঁকানোয় দারুণ খুশি স্মিথ ফাইনালেও দলের জন্য বড় অবদান রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। জানিয়েছেন ফাইনালেও হাঁকাতে চান সেঞ্চুরি। চলতি বিশ্বকাপেও প্রথম দুই ম্যাচে পজিশন নির্দিষ্ট ছিল না স্মিথের। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চারে নেমেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে আবার পাঁচে নেমে যান। এ দুই ম্যাচেই ব্যাট হাতে নিষ্প্রভ ছিলেন তিনি। তবে ওয়াটসনের ব্যর্থতার কারণে তাকে পরবর্তী ম্যাচে একাদশের বাইরে রাখা হলে পজিশনে একধাপ উন্নতি হয় স্মিথের। এবার তিনে নেমেই ৯৫ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন দুর্বল আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ওয়াটসন একাদশে ফিরলেও স্মিথ থেকে গেছেন তিনে। বয়সে তরুণ এবং অবিজ্ঞতা তেমন সমৃদ্ধ না হলেও ভরসার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন স্মিথ। সে কারণে সেমিতে ভারতের বিরুদ্ধে তার দিকে বিশেষ নজর ছিল পুরো অসি শিবিরের। খুব দ্রুতই উইকেটে আসতে হয়েছে এদিন স্মিথকে। দলীয় মাত্র ১৫ রানের মধ্যেই ফিরে যান নির্ভরযোগ্য ওপেনার ওয়ার্নার। ভারতীয় পেসাররাও দুর্দান্ত বোলিং করছিলেন শুরু থেকে। তবে স্মিথ এসে একেবারে সাবলীল ভঙ্গিতে ভারতীয় পেস বোলিংকে মোকাবেলা করতে থাকেন। আরেক ওপেনার এ্যারন ফিঞ্চ ছিলেন একেবারেই নিস্পৃহ। রান করার চেয়ে উইকেট আঁকড়ে থাকার দিকেই বেশি মনোযোগী ছিলেন তিনি। স্মিথ রানের চাকা ঘোরাতে থাকেন দ্রুতবেগে। ফলে বিপদ কাটিয়ে উঠে ভারতীয় বোলারদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন অসিদের। বড় সংগ্রহের ভিতও গড়ে দেন তিনি। ফিঞ্চের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ১৮২ রানের জুটি গড়েন তিনি। ৯০ এর ঘরে রান করে ফেলার পরেও বিন্দুমাত্র স্নায়ুচাপে ভোগেননি স্মিথ। মোহাম্মদ শামির করা পরপর দুই বলে ছক্কা ও চার হাঁকিয়ে শতক আদায় করেন তিনি মাত্র ৮৯ বল খেলে। এরপর অবশ্য বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি স্মিথ। শেষ পর্যন্ত ৯৩ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় ১০৫ রান করে সাজঘরে ফিরে যান তিনি। পুরোপুরি নিখুঁত একটি ইনিংস উপহার দিয়েছেন। তবে ব্যক্তিগত ৬৬ রানের সময় দুর্ভাগ্যজনক রানআউটের শিকার হওয়া থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন। তবে তৃতীয় আম্পায়ারের রিভিউ থেকে তিনি সে যাত্রা রক্ষা পান। ভারতীয়দের সুযোগ দেয়া বলতে ওই একটিই। এরপর আর তার মনোসংযোগে বিন্দুমাত্র চিড় ধরাতে পারেনি প্রতিপক্ষ বোলাররা। ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়া দলের তিন নম্বর পজিশন নিয়ে অনেকদিন ধরেই বেশ সমস্যা চলছিল। কারণ অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারছিলেন না। বেশ কয়েকজনকে এ পজিশনে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেছে অসিরা। এমনকি অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ককেও দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে নামতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের আগেই যেন আলোর দিশারী হয়ে আসলেন তরুণ তারকা স্মিথ। ত্রিদেশীয় সিরিজে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে তিন নম্বরে নেমে ১০২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে নিজেকে এ পজিশনের উপযুক্ত হিসেবে প্রমাণ করেন। যদিও সর্বপ্রথম ব্যাটিং লাইনআপে তার তিনে উন্নতি হয়েছিল আরও আগেই। গত বছর সেপ্টেম্বরে জিম্বাবুইয়েতে অনুুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে। ওই সিরিজে অবশ্য সুবিধা করতে পারেননি তেমন। তবে আরব আমিরাতে অক্টোবরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে একটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। তারপর থেকে তিন আর চার নম্বরে ওঠানামা করেছেন স্মিথ। তবে বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচের পর বাকি সব ম্যাচেই তিন নম্বরে ব্যাটিং করেছেন। টানা তিন ম্যাচে ৯৫, ৭২ ও ৬৫ রানের দারুণ তিনটি ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন। ডেভিড বুনের পর দ্বিতীয় অসি ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে টানা চার পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলার রেকর্ড গড়লেন তিনি। ফর্মের তুঙ্গে থাকায় তিন নম্বর পজিশন নিয়ে অসিদের দুশ্চিন্তাটাও আপাতত লাঘব করেছেন। এবার তো শতকই হাঁকালেন। ফাইনালের জন্য দারুণ এক জয়ের রূপকার হয়ে অস্ট্রেলিয়া দলকে আরেকটি শিরোপা জয়ের অনুরেপ্ররণার নাম হয়ে গেলেন তরুণ এ টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান। ইনিংসের বিরতির সময় এক প্রতিক্রিয়ায় স্মিথ বলেন, ‘সিডনিতে শতক পাওয়া সবসময়ই খুব আনন্দের। এটা আমার প্রিয় ভেন্যু। বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল অনেক বড় একটা মঞ্চ।
×